অমানবিক আচরণ র‍্যাগিং রচনা 500+ শব্দে

অমানবিক আচরণ র‍্যাগিং রচনা

অমানবিক আচরণ র‍্যাগিং রচনা
অমানবিক আচরণ র‍্যাগিং রচনা

ভূমিকা

বর্তমানে ‘র‍্যাগিং’ (Ragging) একটি বহুল চর্চিত শব্দ। এই শব্দটির ব্যুৎপত্তি কোন্ ভাষা থেকে তা সঠিক না জানা গেলেও এর অর্থ অশিষ্ট আচরণ যে তা স্বীকৃত। আমাদের দেশে এমন এক সময় ছিল যখন ছাত্ররা গুরুগৃহে থেকে শিক্ষা লাভ করত। সমাজ পরিবর্তনশীল। সময়ের সাথে সমাজও পরিবর্তিত হচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের আচরণেরও। সামাজিক জটিলতার সাথে ছাত্র-ছাত্রীদের মানবিকতা ও হচ্ছে রূঢ় যে তার প্রমাণ কলেজ, ইউনিভারসিটি প্রভৃতিতে ছাত্র- ছাত্রীদের মধ্যে র‍্যাগিং-এর প্রবণতা বৃদ্ধি, র‍্যাগিং একটি বহুল নিন্দিত আচরণ যা ঘটতে দেখা যায় সাধারণত কলেজ, ইউনিভারসিটির ছাত্র-ছাত্রীদের দ্বারা।

প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে তার পিতা-মাতা কলেজ ইউনিভারসিটিতে পাঠায় পড়াশোনার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে। কিন্তু কখনও কখনও তারা এমন অশালীন আচরণ করে তার সহপাঠী বা অন্যকোন ক্লাশের বন্ধুদের সাথে যার ফলে আহত, অপমানিত, এমন কি আক্রান্ত ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। বর্তমানে সংবাদ মাধ্যম অত্যন্ত সক্রিয়। যার ফলে ছাত্র-ছাত্রীদের এই নিন্দনীয় ঘটনার কথা সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে জনগণের মধ্যে। এমন অভিশপ্ত ঘটনা ঘটতে থাকায় অভিভাবকরা, এমন কি চিন্তাশীল ব্যক্তিদের কপালেও ভাঁজ পড়েছে।

র‍্যাগিং মানে কি বুঝায়

র‍্যাগিং কথার আভিধানিক অর্থ হল বিরক্তি বা তিরস্কার করা। কিন্তু কালের পরিবর্তেনের সাথে সাথে এই শব্দের অর্থের পরিবর্তন হয়েছে। এখন র‍্যাগিং মানে বুঝায় স্ল্যাং বা অশিষ্ট ভাষায় কথা বলা, অশিষ্ট আচরণ করা যা’ সভ্য সমাজে ঘৃণার কাজ ও অসভ্য আচরণের পর্যায়ে পড়ে। বর্তমানে এই শব্দটি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি নিপীড়ন মূলক আচরণকে নির্দেশ করতে ব্যবাহার করা হয়। ভারতের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিমকোর্ট বিশেষ একটি র‍্যাগিং বিষয়ের মামলায় বলেছেন, কোনও ছাত্র-ছাত্রীকে ভাষা প্রয়োগের দ্বারা উত্যক্ত করলে বা তাদের গায়ে হাত দিয়ে অশালীন আচরণ করলে সেই উচ্ছৃঙ্খল আচরণকে র‍্যাগিং বলা হবে।

এই অমানবিক আচরণের দ্বারা দাঙ্গাবাজি করে কোন ছাত্র-ছাত্রীকে বিরক্ত, ভীতি প্রদর্শন বা বিরক্ত করলে, আতঙ্কজনক আচরণ করলে, তার মানসিক ক্ষতি করলে সেই আচরণকে র‍্যাগিং বলা হয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতিতে নবাগত কোনও ছাত্র-ছাত্রী তার প্রাত্যহিক জীবনে যে কাজ সাধারণত করে না এবং করে নিজেকে লজ্জিত ও অপমানিত বোধ করে সেই কাজ করতে বাধ্য করলে র‍্যাগিং বলে পরিগণিত হবে। তাকে এই কাজ করতে বাধ্য করায় তার মানসিক ক্ষতি হলে উৎপীড়নকারী র‍্যাগিং অপরাধে দোষী বলে গণ্য হবে।

এই নিষ্ঠুর আচরণের কারণ

সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীদের এরূপ আচরণ করতে দেখা যায় স্কুলে, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্রাবাস প্রভৃতি স্থানে। বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ওপরের ক্লাসের ছাত্র-ছাত্রীদের এরূপ অবাঞ্ছিত আচরণ করতে দেখা যায়। যে ছাত্র-ছাত্রী আগে র‍্যাগিং এর শিকার হয়েছে তারা নবাগতদের ওপর এই আচরণ করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, নবাগতদের ওপর নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে অনেক সময় র‍্যাগিং-এ লিপ্ত হয়, কখন কখনও নবাগতেদর সাথে আলাপ করতে গিয়ে সৌহার্দপূর্ণ আচরণের পরিবর্তে র‍্যাগিং-এর মতো অমানবিক আচরণে লিপ্ত হয়।

র‍্যাগিং থেকে নিষ্কৃতির উপায়

অভিভাবক ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে পাঠান শিক্ষালাভের জন্য। শিক্ষক-শিক্ষিকাও চান ছাত্র-ছাত্রীরা এরূপ ঘটনায় যাতে জড়িয়ে না পড়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে এরূপ অমানবিক ঘটনা না ঘটে তাই অ্যান্টি র‍্যাগিং অ্যাক্ট রয়েছে। আগের তুলনায় এখন এই অমানবিক ঘটনা কম ঘটতে দেখা যাচ্ছে একথা ঠিক, কিন্তু মাঝে মাঝে যে ঘটছে তা প্রায়ই দেখা যায়। নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদের যদি আগের ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে আলাদাভাবে রাখার ব্যবস্থা করা হয় আলাদা হোস্টেলে, তাহলে তারা র‍্যাগিং-এ সহজে লিপ্ত হবে না।

প্রত্যেক ছাত্র-ছাত্রীকে র‍্যাগিং এর বিষময় ফল ও তার করলে যে কঠিন শাস্তি পেতে হবে সে ব্যাপারে সচেতন করলে তারা এরূপ কাজে লিপ্ত হবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা, হোস্টেল পরিচালক, পরিচালিকার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে যাতে এরূপ ঘটনা না ঘটে। এছাড়া যে ছাত্র-ছাত্রীর দ্বারা র‍্যাগিং সংগঠিত হবে তাদের বিরুদ্ধে অ্যান্টির‍্যাগিং অ্যাক্ট অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এব্যাপারে বাধ্য হয়ে কঠোর মনোভাব দেখাতে হবে।

উপসংহার

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রসমাজ, সাধারণ জনগণকে ও এগিয়ে আসতে হবে ঐক্যবদ্ধ ভাবে যাতে এরূপ অনৈতিক ঘটনা না ঘটে সেব্যাপারে সচেতনতাবোধ গড়ে তোলার জন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নবাগতদের সাথে পুরাতনদের মেলামেশার জন্য নানা ধরনের সভা, অনুষ্ঠান, টুর, পিকনিক প্রভৃতির ব্যবস্থা করলেও পুরাতন ও নবাগতদের মধ্যে-মানসিক দূরত্ব কমে যেতে পারে। যার ফলে সহজে মেলা মেশার মাধ্যমে র‍্যাগিং-এর প্রবণতা কমতে পারে।

আরও পড়ুন – ধর্ম ও কুসংস্কার রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment