জাতের নামে বজ্জাতি প্রবন্ধ রচনা
ভূমিকা
প্রকৃতির নিয়মে সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীতে জীবকুল, তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। ভারতীয়, আমেরিকান, ইংরেজ, ফরাসী, জার্মান, রুশ দেখতে সাদা, কালো যাই হোক, পরিচয় একটাই, তা হল তারা মানুষ। সামাজিক বিবর্তনের ধাপে ধাপে যেমন বিবর্তিত হয়েছে সংস্কৃতি তেমনি বিশেষ এক পর্যায়ে জাতের উৎপত্তি।
জাতের বিদ্বেষ ও পরিণাম
মানুষ ঈশ্বরের সন্তান। সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর হলেন পরমপুরুষ, তিনি জাতের উর্দ্ধে যদি হন, তাহলে তাঁর সন্তানের মধ্যে জাতের বেড়াজাল সৃষ্টি অমানবিক চিন্তাপ্রসূত মস্তিষ্কের কুফল ছাড়া আর কিছুই নয়। ঈশ্বরের সৃষ্টিতে নেই ভেদাভেদ, নেই বৈষম্য-রেখার বেড়াজাল। মানুষের মধ্যে সৃষ্ট কৃত্রিম জাতিভেদ প্রথা রচিত করেছে ঘৃণ্য বিভেদের দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর। প্রাচীরের বেড়াজালে যেমন অবগুন্ঠিত হয় প্রাণের প্রাচুর্য সূর্যালোক, তেমনি জাতের বিষবাষ্পে চাপা পড়ে যায় মানুষের বিবেক, অনৈতিকতা সৃষ্টি হয় মানুষে মানুষে, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, কলঙ্কিত করে ইতিহাসের গৌরবময়- অগ্রগতির অধ্যায়কে।
জাতের বিযে অন্ধ হয়ে যায় মানুষের সুরুচির দিব্যচক্ষু, সৃষ্টি হয় জাতি-বিদ্বেষ, বর্ণ-বিদ্বেষ, সাম্প্রদায়িকতা, রক্তে রঞ্জিত হয় ধরিত্রীর বক্ষ। ছিন্নমস্তার মতো মানুষ লিপ্ত হয় মানুষের রক্ত-পানে। সর্বধর্মের মহামিলন-সাগর ভারতবর্ষে তাই বার বার সংগঠিত হয়েছে হিন্দু-মুসলমানে দাঙ্গা, যা প্রগতিশীল সভ্যতার অগ্রগতির পথকে বার বার করেছে রুদ্ধ। দীর্ঘ বৃটিশ শোষিত ভারতবর্ষে হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে জাতের দোহাই দিয়ে দেশ বিভাজন ও দাঙ্গা কি কোন মানবিকতার পরিচয় দেয়?
ধর্ম-বিদ্বেষঃ ধর্ম শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে সংস্কৃত ধূ-ধাতু থেকে। যার সাধারণ অর্থ যাকে ধারণ বা অবলম্বন করে সৎকর্ম, পুণ্যকর্ম, নৈতিক-সততা প্রভৃতি আচার-আচরণের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে শান্তিরনীড় রচনা করা। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে হিংসা বিদ্বেষকে বিদায় জানিয়ে রক্তপাতের শেষ চিহ্ন মুছে ফেলা। গৌতমবুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, শ্রীচৈতন্য তাই পৃথিবীকে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিয়ে স্বর্গীয় আনন্দধাম গড়ে তোলার সাধনায় নিরত থেকেছেন, কিন্তু পরবর্তী কালে সেপথ থেকে সরে গিয়ে মানুষ পাপ, পরধর্ম-বিদ্বেষের সর্বনাশা অভিশাপে লিপ্ত হয়েছে। ধর্মকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর মাটি রক্তে রঞ্জিত হয়েছে, হয়েছে পিচ্ছিল, রক্তের হোলিখেলায় আত্মঘাতী হয়েছে অজস্র মানুষ, ধর্ম-পাষন্ডের অত্যাচারে মানব-সভ্যতার উঠেছে নাভিশ্বাস। বাস্তবে ধর্মের নামে পৃথিবীতে যত রক্তপাত ঘটেছে তা আর অন্য কিছুতে ঘটেনি।
জাতি বিদ্বেষ
ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতায় ও পৃথিবীতে দ্বন্দ্ব-সংঘাত ও রক্তপাতে মানব সভ্যতার অগ্রগতির পথ বারবার হয়েছে রুদ্ধ। সেই বিদ্বেষ থেকে কালক্রমে বিভিন্ন ভৌগোলিক সীমা বেষ্টনির মধ্যে গঠিত হল কৃত্রিম জাতি ও স্বতন্ত্র রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বে শুরু হল রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের কালিমালিপ্ত প্রস্তুতি।
জাত ও বর্ণ-বিদ্বেষ
আমরা একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখেছি, পেরিয়ে গেছে একটার পর একটা শতাব্দী। প্রাচীনকাল থেকে শ্বেতকায় জাতি কৃষ্ণকায়দের ক্রীতদাসে পরিণত করার মতো ঘটনা ও ঘটেছে পশ্চিমি দেশগুলিতে। জাতের অহংকার বর্ণবৈষম্যের নগ্নতার মাধ্যমে জ্বলে উঠেছে হিংসার লেলিহান শিখা।
বর্ণবৈষম্য ভ্রান্ত ধারণা
মানুষের দেহের গঠন ও বর্ণ জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে। প্রকৃতি নিজের নিয়মে পরিচালিত হয়। ‘কালো আর ধলো বাহিরে কেবল, ভেতরে সবাই সমান রাঙা’, দক্ষিণ আফ্রিকা, রোডেশিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা প্রভৃতি দেশে জাতের দোহাই দিয়ে বর্ণবৈষম্য এখনও সমস্ত শ্রেণির মানুষের মন থেকে একেবারে মুছে যায়নি। তেমনি ভারতবর্ষেও জাতের কলঙ্ক বিশ্বের দরবারে দেশের গৌবরকে কালিমালিপ্ত করেছে, দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীকে ঘৃণ্য, অস্পৃশ্য, পতিত, অপাক্তেয় করে রেখে দীর্ঘ শতাব্দী ধরে অপমানিত করেছে মানবতাকে।
উপসংহার
ভারতবর্ষ সাম্যের দেশ। এখানে জন্মেছেন স্বামী বিবেকানন্দ, শ্রীচৈতন্য, গৌতম বুদ্ধের মতো যুগ-পথ প্রদর্শক। শিক্ষা, কৃষ্টির অগ্রগতির সাথে মানুষের অন্ধ- সংস্কারাচ্ছন%