বিদ্যাসাগর কবিতার বিষয়বস্তু

বিদ্যাসাগর কবিতার বিষয়বস্তু

বিদ্যাসাগর কবিতার বিষয়বস্তু

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর’ কবিতাটি সনেট রচনার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আলোচ্য কবিতায় সিংহহৃদয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের প্রতি কবির ঐকান্তিক শ্রদ্ধা প্রকাশিত হয়েছে। দেশে-বিদেশে সর্বত্র ঈশ্বরচন্দ্র তাঁর পাণ্ডিত্যের গুণে ‘বিদ্যার সাগর’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। ব্যক্তিজীবনে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সীমাহীন সিধুর মতো উদার হৃদয়ের করুণাবারি লাভ করে ধন্য হয়েছেন মধুকবি। পরবর্তী জীবনে তিনি এই পরম সত্যের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছেন যে, পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্রের হৃদয়ের অপার করুণা অগণিত আর্ত, দরিদ্র, নিপীড়িত মানুষকে বেঁচে থাকার ভরসা দিয়েছে অবিরত।

বিদ্যাসাগরের ব্যক্তিগত আর্থিক অনটন কখনোই তাঁর হৃদয়ের করুণাধারাকে স্তব্ধ করতে পারেনি। ‘দীনবন্ধু’ রূপে দীন তথা হতদরিদ্র মানুষের দিকে সাহায্যের হাত এগিয়ে দিয়েছেন। মধুকবির জীবনও বারবার তাঁর সেই অকৃপণ সহযোগিতার দানে হতাশার অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে সমর্থ হয়েছে। ‘হেমাদ্রি’ অর্থাৎ স্বর্ণকান্তি পর্বতের সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে তুলনা করেছেন মধুকবি। ঈশ্বরচন্দ্রের ব্যক্তিত্বের ছটায় সমগ্র বাংলাদেশের বুক থেকে অশিক্ষার আঁধার দূর হয়ে গিয়েছে। তাঁর কোমলে-কঠোরে গড়া চরিত্রের

অম্লান কিরণ বাঙালি জাতিকে নবজাগরণের আদর্শে উদ্বুদ্ধ করেছে। অগণিত ভাগ্যবান মানুষের মতো মধুকবিও পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্রের স্বর্ণময় চরণে আশ্রয় লাভ করেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন সেই মহাপুরুষের মানবিক গুণের অপরিসীম স্বতন্ত্রতা। পর্বতশ্রেষ্ঠ হিমালয় যেমন উচ্চতায়, বলিষ্ঠতায় এবং বিশাল ব্যাপ্তিতে সকলের হৃদয় জয় করেছে তেমনই ঈশ্বরচন্দ্রের ব্যক্তিত্বের ছায়ায় নিশ্চিত নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পেয়েছে দীন-হীন মানুষ। হিমালয়ের বুকে সবুজ প্রকৃতি ও জীবের তৃয়ানিবারণের জন্য সর্বদা নদী বয়ে চলেছে, সেই নদী হিমালয়ের কিঙ্করী অর্থাৎ আজ্ঞাবহ অনুচরী।

নদীরূপা দাসীর বিশুদ্ধ জলে সরস হয়ে ওঠে পর্বতের পাথুরে মাটি, সবুজ অরণ্য সৃষ্টি হয়, কিশলয়ে ফুলে-ফলে ভরে ওঠে অরণ্যানীর শাখাপ্রশাখা। সুউচ্চ তরুশ্রেণি পর্বতের বিশালতার কাছে দাসত্ব স্বীকার করে। সেই দাসত্বে পরাজয়ের গ্লানি নেই, আছে নিজেকে নিঃশেষে উজাড় করে দেওয়ার পরিশুদ্ধ আনন্দ। তরুশ্রেষ্ঠ ‘বনেশ্বরী’ শ্বাসবায়ু ও বিষাক্ত বায়ুর মধ্যে সমতা বিধান করে পরম মমতায়। নিবিড় মায়ায় গাছের শাখায় ঘর বাঁধতে দেয় গগনচারী পাখির দলকে। শাখাপ্রশাখা আন্দোলিত করে শীতল-পরিমল বাতাসের স্পর্শে সমস্ত দুশ্চিন্তা হরণ করে জীবজগৎকে নিদ্রাজননীর সুশান্ত কোলে বিশ্রামের পথ দেখায়।

সুমেরু পর্বত তথা হেমাদ্রি যেমন তার সর্বস্ব দিয়ে আশ্রিতকে সুখী, নিশ্চিন্ত, নিরাপদ জীবন দান করে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও তেমনি – তাঁর হৃদেয়র অসীম দয়া, মায়া ও করুণা দিয়ে হতভাগ্য, দীনদরিদ্র মানুষকে সাহায্য করেছেন। কবি মধুসূদনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ঝুলি ঈশ্বরচন্দ্রের সুমহান সহযোগিতা ও সহমর্মিতার দানে পরিপূর্ণ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সেজন্য কবির দৃষ্টিতে ‘হেমাদ্রি’ এবং ‘বনেশ্বরী’ রূপে প্রতিভাত।

আরও পড়ুন – একটি ছুটির দিন রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment