বিড়াল প্রবন্ধের নামকরণের সার্থকতা

বিড়াল প্রবন্ধের নামকরণের সার্থকতা

বিড়াল প্রবন্ধের নামকরণের সার্থকতা

ভূমিকা

সাহিত্যে নামকরণের একটি বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নামহীন সৃষ্টি অনেকটা মস্তিষ্কহীন মানবদেহের মতো। যদিও উইলিয়াম শেক্সপিয়র বলেছিলেন, ‘What’s in a name?’, নামে কী আসে যায়? তবুও সাহিত্যিক যখন তাঁর সাহিত্যকর্মের নামকরণ করেন তখন একটি গভীর সত্যের প্রতি অঙ্গুলি সংকেত করেন। নামকরণের নির্দিষ্ট কোনো রীতি না থাকলেও আলংকারিকরা নামকরণের ত্রিবিধ সূত্রের কথা বলেছেন- (ক) চরিত্রকেন্দিক বা নামকেন্দ্রিক (খ) বিষয়ধর্মী বা ঘটনাধর্মী (গ) গূঢ়ার্থধর্মী বা ব্যঞ্জনাধর্মী। আমরা এখন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিড়াল’ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ করে দেখব এর নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে।

ব্যাখ্যা

‘বিড়াল’ নামক প্রবন্ধে সাহিত্যসম্রাট বিড়াল ও কমলাকান্তের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে সাম্যবাদের আদর্শগত দিকটি পরিস্ফুট করেছেন। প্রবন্ধের মূল বক্তব্য এই যে, এ সংসারের ভোগ্যদ্রব্যে সকলেরই সমান অধিকার। যা কিছু উৎকৃষ্ট ভোগ্য, তা যদি সমাজের এক শ্রেণির অধিকারে থাকে, তাহলে সেটা যেমন ন্যায়নীতিবিরুদ্ধ তেমনি প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধও বটে। এ পৃথিবীতে কেউই অনাহারে মৃত্যুবরণ করতে আসেনি। ক্ষুধা সকলেরই আছে, সকলেরই খাদ্য চাই, অথচ সকলে খাদ্য পায় না-এর কারণ ধনবৈষম্য ও শ্রেণিবিদ্বেষ।

ধনের অসম বণ্টনের ফলে ধনীর ঘরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ধন সঞ্চিত হয়, আর তার ফলেই সৃষ্টি হয় দরিদ্র শ্রেণি। যদি ভোগী সম্প্রদায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভোগ্য অকারণে ভাণ্ডারে আবদ্ধ না রেখে দরিদ্রের অভাবমোচনে ব্যয় করে তবেই সমস্যা দূরীভূত হবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে দেখা যায়, ধনীরা প্রকৃতিতে কৃপণ ও স্বার্থান্বেষী। পরের দুঃখে কাতর হওয়া তাদের প্রকৃতিবিরুদ্ধ। একদিকে উপরতলার মানুষদের মধ্যে চলে তোষণ, মোসাহেবি, তেলা মাথায় তেল দেওয়া, অপরদিকে অভাবের তাড়নায় এক শ্রেণির মানুষ দুর্নীতি, অন্যায়, অধর্ম করে। ধনী ও ভোগী সম্প্রদায়ের মুখে শোনা যায় সমাজ- বিশৃঙ্খলার অভিযোগের কথা আর অপর সম্প্রদায় নিজেদের বঞ্চিত- লাঞ্ছিত-শোষিত মনে করে ওই শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে। এই যে সামাজিক-অর্থনৈতিক (Socio Economic) সমস্যা- এরই উপর আলোকপাতের উদ্দেশ্যে কিংবা সাম্যবাদ-আদর্শের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চিন্তা জাগানোর উদ্দেশ্যে ‘বিড়াল’ প্রবন্ধটি রচিত হয়েছে।

নামকরণের যাথার্থ্য

সমগ্র পাঠ আলোচনা করে দেখা গেল, পৃথিবীর এই প্রধান সমাজসমস্যাকে বঙ্কিমচন্দ্র যেভাবে সামান্য একটি বিড়ালের বক্তব্যের মাধ্যমে উপস্থিত করেছেন, তাতে একদিকে তাঁর প্রতিভা ও অন্যদিকে গভীর সমাজচেতনার পরিচয় পরিস্ফুট। বিড়ালের পরিবর্তে অন্য কোনো প্রাণীর জবানীতে সাম্যবাদের কথা ব্যক্ত হলে ওই বিষয়বস্তু এত জীবন্তও হয়ে উঠত না। তাই বঙ্কিমচন্দ্র রচিত প্রবন্ধের ‘বিড়াল’ নামকরণ সার্থক ও সর্বাঙ্গসুন্দর হয়েছে।

আরও পড়ুন – একটি ছুটির দিন রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

1 thought on “বিড়াল প্রবন্ধের নামকরণের সার্থকতা”

Leave a Comment