ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা 600 শব্দে

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা – আজকের পর্বে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা নিয়ে আলোচনা করা হল।

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা
ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা রচনা

ভূমিকা

ভ্রমণ কর্মক্লান্ত শরীর থেকে দূর করে অবসাদ, নতুন নতুন স্থান পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা জ্ঞান-ভান্ডারকে করে সমৃদ্ধ। আমার দীর্ঘ দিনের সাধ তাজমহল দেখার। শৈশবে দেখেছি তাজমহলের ছবি। বইতে পড়েছি সপ্ত আশ্চর্যের অন্যতম, পড়েছি তাজমহল নিয়ে রচিত কবিতা, শুনেছি কত গান। ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত, কল্পনায় অপরূপের অধিষ্ঠাত্রী, সেই পবিত্র সমাধি-মন্দির দেখার জন্য হৃদয়ের মর্ম-গভীরে বহুকাল থেকে সঞ্চিত ছিল প্রবল ইচ্ছা।

যাত্রা

আকাশ নীল হতে শুরু করেছে। ঝরছে সোনাঝরা রোদ্দুর। শিউলি গাছ ভরে গেছে কুঁড়িতে। সবুজ ধানখেতে পাগলা হাওয়ার মাতামাতি। বাবা বললেন, এবার পুজোর ছুটিতে বেড়াতে যাবেন দিল্লি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘শাজাহান’ কবিতা পড়েছি। তাজমহলের স্বপ্ন-ছবি এঁকে ফেলেছি কল্পনায়। প্রথম ঘরের বাইরে দূর- প্রান্তরে পা রাখব। মনে সে কি উত্তেজনা। তাজমহলের মর্মরিত আবেগের মূর্ছনার মধ্যে কাটতে থাকে দিন।

অবশেষে এসে গেল সেই নির্ধারিত যাত্রার মুহূর্ত। গ্রামের নিভৃত পল্লীর বাসস্থান থেকে বাসে কর্মচঞ্চল, হৈচৈ, ব্যস্ত হাওড়া স্টেশনে এলাম। ফেরিওয়ালার চেঁচামেচি, মাইক্রোফোনে যাত্রার সময় ঘোষণা, বার বার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখা- অবশেষে ট্রেনের যাত্রা শুরু। ট্রেন ছুটছে তালে তালে শুক্লা একাদশীর দুধ-সাদা চাঁদের আলো মাড়াতে মাড়াতে, পথের দুধারে চাঁদের আলো মেখে গাছপালা, ঘরবাড়ি, গ্রামগঞ্জের মুখে খুশির হিল্লোল, আমার মনেও। জানলার ধারের ট্রেনের আসনটি যেন শাজাহানের ‘ময়ূর সিংহাসন’, কিশোর-মন-সাম্রাজ্যে তখন আমি শাজাহানের মতো কোন এক সম্রাট বা রাজা যেন। নিদ্রাদেবী অনেক চেষ্টা করেও আমার চোখের পাতা স্পর্শ করতে পারছে না। কাছাকাছি বসে আছেন মা ও বাবা।

পথের অভিজ্ঞতা

কিছু সময় পরে এলো নৈশাহার। খাওয়ার পরে সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। মনে মনে ভাবছি যাত্রীরা খুব বোকা। রাতের এই মায়াবী রূপ দেখার জন্য ঘুম কি খুবই জরুরী। আসলে মনের মণিকোঠায় তাজমহল, শাজাহান, রবীন্দ্রনাথের কবিতার ভাব-ব্যঞ্জনা আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিল না। কেউ যেন বললো, তুমি কী আগ্রায় নামবে? পেছন ফিরে দেখলাম এক তরুণ, আমার থেকে বয়সে বড়ো।

আমার চোখে কৌতুহলের ঝিলিক। কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললাম, তুমি কি করে জানলে আমি আগ্রায় নামব? সে হাসতে হাসতে বলল- ট্রেন ছাড়ার সময় তুমি তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলে কখন ট্রেন আগ্রায় পৌঁছাবে। তাইতো মনে হল তুমি আগ্রা যাচ্ছ। আমিও তোমার মতো আবেগে বিহ্বল হয়ে যাই যখন ট্রেনে চেপে দূরে কোথাও যাই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি বুঝি আগ্রা যাচ্ছ? সে আবার হাসি মুখে বলল, না, দিল্লি যাচ্ছি, তারপর সীমান্ত।

সহযাত্রীকে বিদায়

সহযাত্রী কথা প্রসঙ্গে বলল, তার মা-বাবা অনেক আগে মারা গেছেন। ছোটো বোন স্কুলে পড়ে। মাধ্যমিক পাশ করার পরে দিল্লিতে চাকুরি পেয়ে গেল এক বছর আগে। পুজোর ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল। ছুটি শেষ হয়ে গেল। ফিরছে কর্মস্থানে। দিনের আলো ছড়িয়ে পড়ল। গাড়ি ছুটছে সমান তালে। হঠাৎ ট্রেনের গতি মন্থর হল। গল্প, মাঝে মাঝে স্বল্প সময়ের নিদ্রার মধ্যে সময়টা কিভাবে কেটে গেল বুঝতে পারলাম না। সহযাত্রীর কথাবার্তা, ব্যবহারে মুগ্ধ হলাম। আগ্রা ফোর্ট স্টেশনে আসার আগেই বাবা বললেন, এবার ট্রেন থেকে নামতে হবে। ট্রেনের জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, স্বপ্নের তাজমহল যেন হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে। সহযাত্রীকে বললাম, আবার কবে দেখা হবে? তার চোখ যেন জলে ভারি হয়ে এল। সে বলল, জানি না।

তাজমহল দর্শন

আমার চোখ ও ঝপসা হয়ে এল। স্বল্প সময়েরর পরিচয়ে সে যে আমার মনে গভীর ছাপ ফেলে দিয়েছে। ট্রেন থেকে আমরা নামলাম। তাকিয়ে থাকলাম ট্রেনের দিকে। সে হাত নাড়ল জানলার ফাঁক দিয়ে। হোটেলে এসে স্নানাহার করে সবাই বিশ্রাম নিলাম। সন্ধ্যা নেমে আসছে। প্রস্তুত হলাম তাজমহল দেখতে যাবার জন্য। টাঙায় মাত্র কয়েক মিনিটের পথ। দেখলাম তাজমহল, শাজাহানের অমর কীর্তি, মিলিয়ে নিলাম দীর্ঘদিনের স্বপ্নে আঁকা তাজমহলের সাথে বাস্তবের মুখোমুখি তাজমহল। বার বার মনে পড়ল কবিতার লাইন ‘একবিন্দু নয়নের জল/ কালের কপোলতলে শুভ্র সমুজ্জ্বল/ এ তাজমহল‘।

অন্যান্য দর্শনীয় স্থান

বাড়ছে রাত। হোটেলে ফেরার পালা। ডাইনে বাঁয়ে ফেলে এলাম আকবর, জাহাঙ্গীর, শাজাহানের দুর্গ। পরের দিন দেখলাম জাহাঙ্গীর মহল’। অমর সিং দরওয়াজা দিয়ে প্রবেশ করে জাহাঙ্গীর মহল দেখে যেখানে বৃদ্ধ অসুস্থ শাজাহান বন্দী-জীবন যাপন করেছিলেন সেখান থেকে আবার দেখলাম তাজমহলকে, দূরে যমুনা নদী, অপূর্ব সে দৃশ্য। ‘যত দূরে যাই/ নাই নাই সে পথিক নাই / প্রিয়া তারে রাখিল না, রাজ্য তারে ছেড়ে দিল পথ, / রুধিল না সমুদ্র পর্বত।’

উপসংহার

তার পরের দিন দেখলাম নতুন রজধানী ফতেপুরসিক্রি। ফিরে আসার আগের দিন সন্ধ্যার পর আবার দেখতে গেলাম তাজমহল। সেদিন কোজাগরী পূর্ণিমার চাঁদের হাসি আকাশ জুড়ে, তাজমহলের সারা শরীরে। ধীরে ধীরে চলে এল চাঁদ তাজমহলের মাথার ওপর। যমুনার স্রোত বয়ে যাচ্ছে ধীর গতিতে। মনে হল যেন সম্রাট শাজাহানের চোখের জলের স্রোত। পরের দিন দিল্লি রওনা হলাম। তাজমহল দর্শন আমার জীবনের এক স্মরণীয় ঘটনা।

আরও পড়ুন – একটি ছুটির দিন রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment