নিরপেক্ষ ন্যায় — মূর্তি ও সংস্থান এবং বৈধতা বিচার প্রশ্ন উত্তর ক্লাস 11 দর্শন 2nd সেমিস্টার

১। নিরপেক্ষ ন্যায় বা ন্যায় অনুমান কাকে বলে? উদাহরণ-সহ ব্যাখ্যা করো।
নিরপেক্ষ ন্যায়: যে মাধ্যম অবরোহ অনুমানে দুটি পরস্পর সম্পর্কিত আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তবাক্যটি কখনোই আশ্রয়বাক্যদ্বয় থেকে ব্যাপকতর হয় না, তাকে নিরপেক্ষ ন্যায় বা ন্যায় অনুমান বলে।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের তিনটি নিরপেক্ষ বচন থাকে এবং তিনটি পদ থাকে। এই তিনটি পদ প্রতিটি ন্যায় অনুমানে দু-বার করে ব্যবহৃত হয়। এগুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-
ন্যায়ের পদ: আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি একটি আদর্শ আকারের নিরপেক্ষ বচন। ন্যায়ের মধ্যে ব্যবহৃত তিনটি পদের মধ্যে দুটি পদ সিদ্ধান্ত বচনে থাকে। সিদ্ধান্ত বচনের উদ্দেশ্য (Subject) পদকে পক্ষপদ (S) এবং বিধেয় (Predicate) পদকে সাধ্যপদ (P) বলা হয়। আর যে পদটি সিদ্ধান্তে থাকে না, অথচ দুটি আশ্রয়বাক্যেই থাকে, তাকে হেতুপদ বা মধ্যপদ (Middle Term বা M) বলা হয়।*। অর্থাৎ S, P এবং M এই তিনটি অক্ষর যথাক্রমে পক্ষপদ, সাধ্যপদ ও হেতুপদকে বোঝায়।
ন্যায়ের বচন: ন্যায়ের তিনটি বচনের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন নাম আছে। ন্যায়ের যে আশ্রয়বাক্যে সাধ্যপদ থাকে, সেই আশ্রয়বাক্যকে প্রধান আশ্রয়বাক্য বা সাধ্য আশ্রয়বাক্য বলা হয়। পক্ষপদটি যে আশ্রয়বাক্যে থাকে তাকে অপ্রধান আশ্রয়বাক্য বা পক্ষ আশ্রয়বাক্য বলা হয়। পক্ষপদ ও সাধ্যপদ একত্রে যে বচনে থাকে, তাকে সিদ্ধান্ত বলা হয়।
উদাহরণ
সকল মানুষ হয় বুদ্ধিমান (A) – প্রধান আশ্রয়বাক্য।
রোহিত হয় মানুষ (A) – অপ্রধান আশ্রয়বাক্য।
রোহিত হয় বুদ্ধিমান (A)- সিদ্ধান্ত।
এটি একটি নিরপেক্ষ ন্যায়। এখানে হেতুপদ- ‘মানুষ (M)’ প্রধান আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যের বিধেয় স্থানে রয়েছে। ন্যায়টির সাধ্যপদ হল- ‘বুদ্ধিমান (P)’। এটি প্রধান আশ্রয়বাক্যের বিধেয় এবং সিদ্ধান্তের বিধেয় স্থানে রয়েছে। ন্যায়টির পক্ষপদ হল- ‘রোহিত (S)’। এটি অপ্রধান আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্যতে এবং সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য স্থানে রয়েছে। ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়েছে। সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যের তুলনায় ব্যাপকতর হয়নি। ন্যায়টির আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত নিরপেক্ষ বচন। সেই কারণেই এটি নিরপেক্ষ ন্যায়রূপে গণ্য।
২। নিরপেক্ষ ন্যায়কে মাধ্যম অনুমান বলা হয় কেন? নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
নিরপেক্ষ ন্যায় হল মাধ্যম অনুমান:
অ্যারিস্টটলের ব্যাখ্যানুসারে, নিরপেক্ষ ন্যায় হল তিনটি বচন দ্বারা গঠিত মাধ্যম অনুমান। যেখানে তিনটি পদবিশিষ্ট দুটি আশ্রয়বাক্য এমনই সম্বন্ধে আবদ্ধ থাকে যে, প্রথম দুটি বচন থেকে যৌথ বা অনিবার্যভাবে তৃতীয় বচনটি অর্থাৎ সিদ্ধান্তটি নিঃসৃত হয়।
উদাহরণ
সকল মানুষ হয় যুক্তিশীল প্রাণী (A)- প্রধান আশ্রয়বাক্য।
কোনো কুকুর নয় যুক্তিশীল প্রাণী (E)- অপ্রধান আশ্রয়বাক্য।
কোনো কুকুর নয় মানুষ (E)- সিদ্ধান্ত।
উল্লিখিত ন্যায় অনুমানটিতে তিনটি নিরপেক্ষ বচন আছে- দুটি আশ্রয়বাক্য (প্রধান ও অপ্রধান) এবং একটি সিদ্ধান্ত। এখানে তিনটি পদ হল যুক্তিশীল প্রাণী (হেতুপদ), কুকুর (পক্ষপদ) ও মানুষ (সাধ্যপদ)। নিরপেক্ষ ন্যায় অনুমানটিতে দুটি আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে সিদ্ধান্তটি নিঃসৃত হয়েছে। এই প্রকার অনুমানের সিদ্ধান্ত একটিমাত্র যুক্তিবাক্য থেকে নিঃসৃত না হয়ে দুটি যুক্তিবাক্য থেকে সম্মিলিতভাবে অনুসৃত হওয়ায় এই নিরপেক্ষ ন্যায় বা ন্যায় অনুমানকে মাধ্যম অনুমান বলা হয়।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের বৈশিষ্ট্য:
নিরপেক্ষ ন্যায় অনুমানের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয়:
অবয়ব : প্রতিটি নিরপেক্ষ ন্যায়ে কেবল তিনটি বচন বা অবয়ব থাকবে। এই তিনটি বচনের দুটি আশ্রয়বাক্য বা হেতুবাক্য এবং অন্যটি সিদ্ধান্ত।
বচানর প্রকৃতি: নিরপেক্ষ ন্যায়ের বচনগুলি হবে নিরপেক্ষ বা অনপেক্ষ বচন।
পদের সংখ্যা: প্রতিটি ন্যায়ে কেবল তিনটি পদ থাকবে এবং প্রতিটি পদ দু-বার করে ব্যবহৃত হবে।
সিদ্ধান্তের গুরুত্ব: ন্যায়ের সিদ্ধান্তটি পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত দুটি হেতুবাক্যের মিলিত ফল। এই দুটি হেতুবাক্যের যে-কোনো একটিকে বাদ দিলে সিদ্ধান্তটি পাওয়া যাবে না।
সিদ্ধান্তের ব্যাপকতা: ন্যায় অনুমানে যে সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করা হয়, তা হেতুবাক্য দুটির থেকে কম ব্যাপক বা সমব্যাপক হবে। এই বৈশিষ্ট্যই ন্যায় অনুমানকে আরোহ অনুমান থেকে পৃথক করেছে।
আকারগত ও বস্তুগত সত্যতা: ন্যায় অনুমানে কেবল আকারগত সত্যতার দিকে লক্ষ রাখা হয়, বস্তুগত সত্যতার দিকে নয়। এই অনুমানের প্রধান লক্ষ্য হল, আকারগত সত্যতা লাভ করা।
বৈধতা: নিরপেক্ষ ন্যায় বৈধ বা অবৈধ হতে পারে। ন্যায়-এ নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে ন্যায়টি বৈধ হয়। আবার নিয়মগুলিকে যথাযথভাবে অনুসরণ না করা হলে ন্যায়টি অবৈধ হয় অর্থাৎ দোষদুষ্ট হয়।
৩। উদাহরণ-সহ নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনপ্রণালী ব্যাখ্যা করো।
ন্যায়ের গঠন: নিরপেক্ষ ন্যায় হল একটি মাধ্যম অনুমান, যা তিনটি বচন ও তিনটি পদ দ্বারা গঠিত। ন্যায়ের গঠনটি নিম্নরূপ-
ন্যায়ের বচন : প্রতিটি ন্যায় অনুমানে তিনটি বচন থাকে-দুটি হেতুবাক্য বা আশ্রয়বাক্য এবং একটি সিদ্ধান্ত। যে দুটি বচনকে আশ্রয় করে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়, তাদের বলা হয় হেতুবাক্য বা আশ্রয়বাক্য এবং হেতুবাক্যগুলি থেকে যে তৃতীয় বচনটি পাওয়া যায়, তাকে বলা হয় সিদ্ধান্ত।
উদাহরণ
সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব (A) -আশ্রয়বাক্য।
রাম হয় মানুষ (A) -আশ্রয়বাক্য।
রাম হয় মরণশীল জীব (A) -সিদ্ধান্ত।
ন্যায়ের পদ: প্রতিটি ন্যায় অনুমানে তিনটি পদ থাকে। যেহেতু প্রতিটি ন্যায় অনুমান তিনটি বচন দ্বারা গঠিত এবং যেহেতু প্রতিটি বচন দুটি পদ দ্বারা গঠিত, সেহেতু ন্যায় অনুমানে ছয়টি পদ থাকার কথা। প্রকৃতপক্ষে ন্যায় অনুমানে পদের সংখ্যা ছয়টি নয়, পদের সংখ্যা হয় তিনটি; আসলে প্রতিটি পদ দু-বার ব্যবহৃত হওয়ার জন্য এইরকম মনে হয়। ন্যায় অনুমানে পদ তিনটি হল- সাধ্য, পক্ষ ও হেতু। উপরের উদাহরণে পদ তিনটি হল-
রাম, মরণশীল জীব এবং মানুষ।
পক্ষপদ: যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয়, তাকে বলে পক্ষপদ। এটি সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্যে এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে উদ্দেশ্যে অথবা বিধেয়তে থাকে। উপরের উদাহরণটিতে রাম হল পক্ষপদ।
সাধ্যপদ: উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয়, তাকে বলে সাধ্যপদ। এটি সিদ্ধান্তের বিধেয় এবং প্রধান আশ্রয়বাক্যে উদ্দেশ্যে বা বিধেয়তে থাকে। উপরের উদাহরণটিতে মরণশীল জীব হল সাধ্যপদ।
হেতুপদ: যে পদের দ্বারা সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে বলা হয় হেতুপদ। এটি দুটি আশ্রয়বাক্যে থাকলেও সিদ্ধান্তে থাকে না। সাধ্য ও পক্ষপদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করাই হল হেতুপদের কাজ। উপরের উদাহরণে মানুষ হল হেতুপদ।
পদের উপস্থিতি অনুযায়ী ন্যায় অনুমানের হেতুবাক্য দুটিরও পৃথক নাম আছে। যে হেতুবাক্যে সাধ্যপদটি থাকে, তাকে বলে প্রধান হেতুবাক্য বা সাধ্য হেতুবাক্য। আর যে হেতুবাক্যে পক্ষপদটি থাকে, তাকে বলে অপ্রধান হেতুবাক্য বা পক্ষ হেতুবাক্য।
উদাহরণ
সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব (A) – প্রধান বা সাধ্য হেতুবাক্য।
রাম হয় মানুষ (A) – অপ্রধান বা পক্ষ হেতুবাক্য।
রাম হয় মরণশীল জীব (A) – সিদ্ধান্ত।
আলোচনার সুবিধার জন্য পক্ষ, সাধ্য ও হেতুপদকে যথাক্রমে S, P ও M নামক তিনটি ইংরেজি বর্ণের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
৪। নিরপেক্ষ ন্যায়ের গঠনে হেতুপদের ভূমিকা লেখো।
হেতুপদ: নিরপেক্ষ ন্যায়ের যে পদটি সিদ্ধান্তে থাকে না, কেবল প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে থাকে, তাকে হেতুপদ নামে অভিহিত করা হয়। হেতুপাদর ভূমিকা: ন্যায়ের অনুমানে হেতুপদের ভূমিকাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হেতুপদ দুটি আশ্রয়বাক্যকে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত করে পক্ষ ও সাধ্যপদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপন করে। হেতুপদটি দুটি হেতুবাক্যে উপস্থিত থাকে। বস্তুত, দুটি হেতুবাক্যের সাধারণ অঙ্গ হল হেতুপদ। যদি দুটি হেতুবাক্যের মধ্যে কোনো সাধারণ পদ না থাকে, তাহলে হেতুবাক্য দুটি পরস্পর পৃথক হয়ে পড়বে। ফলে সেক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হতে পারবে না। যেমন-
সকল মানুষ হয় মরণশীল জীব (A)- হেতুবাক্য।
সকল দার্শনিক হয় জ্ঞানী ব্যক্তি (A)-হেতুবাক্য।
এই দুটি পরস্পর সম্বন্ধহীন হেতুবাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হবে না, কেন-না উক্ত দুটি বচনের (হেতুবাক্যের) মধ্যে কোনো সাধারণ পদ বা হেতুপদ নেই। সুতরাং, হেতুপদ থাকার জন্যই দুটি বচন (হেতুবাক্য) পরস্পর সংযুক্ত হতে পারে। সাধ্য হেতুবাক্যে সাধ্যপদের সঙ্গে হেতুপদের সম্বন্ধ থাকে; আবার পক্ষ হেতুবাক্যে পক্ষপদের সঙ্গে হেতুপদের যোগ থাকে। এইভাবে হেতুপদের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পক্ষপদের সঙ্গে সাধ্যপদের সম্বন্ধ নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
ন্যায়ের সংস্থান গঠনে হেতুপদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। দুটি আশ্রয়বাক্যে হেতুপদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করেই ন্যায়ের চার প্রকার সংস্থান গঠন করা হয়। প্রথম সংস্থানে হেতুপদটি প্রধান আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্যের বিধেয় স্থানে থাকে। দ্বিতীয় সংস্থানে হেতুপদটি প্রধান ও অপ্রধান উভয় আশ্রয়বাক্যের বিধেয় স্থানে এবং তৃতীয় সংস্থানে হেতুপদটি প্রধান ও অপ্রধান উভয় আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে থাকে। চতুর্থ সংস্থানে হেতুপদটি প্রধান আশ্রয়বাক্যের বিধেয় এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য স্থানে থাকে। নিরপেক্ষ ন্যায়ের মূর্তি নির্ণয়ে হেতুপদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ন্যায়ানুমানে হেতুপদ একবারও যদি না ব্যাপ্য হয়, তাহলে ন্যায়টির মূর্তি অবৈধ হবে আর যদি অন্তত একবার ব্যাপ্য হয়, তাহলে মূর্তিটি বৈধ হবে।
৫। নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়মগুলি লেখো।
নিরপেক্ষ ন্যায়ের নিয়ম:
কোনো ন্যায় অনুমানকে বৈধ হতে গেলে কতগুলি নিয়ম পালন করতে হয়, নতুবা ন্যায় অনুমানটি অবৈধ হয়। নিরপেক্ষ ন্যায় অনুমানে মোট দশটি সাধারণ নিয়ম আছে। এদের মধ্যে কতগুলি মুখ্য, আবার কতগুলি গৌণ বা অনুসিদ্ধান্ত। এই দশটি নিয়মকে নিম্নরূপে সাজানো হল –
গঠন সংক্রান্ত নিয়ম :
- প্রত্যেক বৈধ ন্যায় অনুমানে তিনটি মাত্র পদ থাকবে তার বেশিও নয় বা কমও নয়।
- প্রত্যেক ন্যায় অনুমানে কেবল তিনটি বচন থাকবে।
বৈধতা সংক্রান্ত নিয়ম :
- হেতুপদকে দুটি আশ্রয়বাক্যে অন্ততপক্ষে একবার ব্যাপ্য হতেই হবে।
- যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি, সেই পদ কোনোমতেই সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না।
- দুটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে, তার থেকে বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না।
- একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে, সিদ্ধান্তটি অবশ্যই নঞর্থক হবে।
- দুটি আশ্রয়বাক্য সদর্থক হলে, সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সদর্থক হবে।
অনুসিদ্ধান্ত বা গৌণ নিয়ম :
- দুটি বিশেষ আশ্রয়বাক্য থেকে বৈধ সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হওয়া সম্ভব নয়।
- একটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ হলে, সিদ্ধান্তটি অবশ্যই বিশেষ হবে।
- প্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে, কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যাবে না।
৬। ন্যায়ের মুখ্য নিয়মগুলি ব্যাখ্যা করো।
ন্যায়ের মুখ্য নিয়ম:
ন্যায়ের মুখ্য নিয়মগুলি দুটি ভাগে বিভক্ত যথা- গঠন সংক্রান্ত নিয়ম, বৈধতা সংক্রান্ত নিয়ম।
গঠন সংক্রান্ত নিয়মগুলির ব্যাখ্যা:
গঠন সংক্রান্ত নিয়মগুলি হল—
প্রথম নিয়ম: বৈধ ন্যায় অনুমানে তিনটি পদ থাকবে তার বেশিও নয়, কমও নয়। সেই তিনটি পদ হল পক্ষ, সাধ্য, হেতু। এই তিনটি পদের প্রত্যেকটিকে ন্যায় অনুমানে দু-বার করে ব্যবহার করা হয়। পক্ষপদটি থাকে অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে ও সিদ্ধান্তে, সাধ্যপদটি থাকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে ও সিদ্ধান্তে এবং হেতুপদটি থাকে প্রধান ও অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে।
দ্বিতীয় নিয়ম: প্রত্যেক বৈধ ন্যায় অনুমানে তিনটি বচন থাকবে। সেগুলি হল প্রধান আশ্রয়বাক্য, অপ্রধান আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্ত। কোনো অনুমান যদি দুটি বচনের দ্বারা গঠিত হয় তাহলে সেই অনুমানকে অমাধ্যম অনুমান বলা হয়। আবার কোনো অনুমান যদি তিনটির বেশি বচন দ্বারা গঠিত হয় তাহলে সেই অনুমানকে ন্যায়শৃঙ্খল বলা হয়।
বৈধতা সংক্রান্ত নিয়মগুলির ব্যাখ্যা:
বৈধতা সংক্রান্ত নিয়মগুলি হল-
প্রথম নিয়ম: হেতুপদকে দুটি আশ্রয়বাক্যে অবশ্যই একবার ব্যাপ্য হতে হবে। ন্যায় অনুমানে হেতুপদের কাজ হল সাধ্য ও পক্ষপদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা। বস্তুত, সাধ্যপদ যদি হেতুপদের এক অংশের সঙ্গে এবং পক্ষপদ যদি হেতুপদের অন্য এক অংশের সঙ্গে যুক্ত না থাকে, তাহলে সাধ্য ও পক্ষপদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। তাই হেতুপদটিকে দুটি আশ্রয়বাক্যে অবশ্যই একবার ব্যাপ্য হতে হবে।
দ্বিতীয় নিয়ম: যে পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হয়নি, সে পদ কোনো মতেই সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না। অবরোহ অনুমানের বৈশিষ্ট্য হল সিদ্ধান্ত কোনো ক্ষেত্রেই আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হতে পারবে না। কাজেই যদি কোনো পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি নিশ্চয়ই আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হবে।
তৃতীয় নিয়ম: দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় না। কারণ, নঞর্থক বচনের উদ্দেশ্য ও বিধেয় পদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধ থাকে না। কাজেই উভয় আশ্রয়বাক্য যদি নঞর্থক হয় তাহলে সেক্ষেত্রে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়।
চতুর্থ নিয়ম: একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই নঞর্থক হবে। বিপরীতভাবে বলা যায়, সিদ্ধান্তটি নঞর্থক হলে একটি আশ্রয়বাক্য অবশ্যই নঞর্থক হবে। যদি একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হয়, তাহলে অন্য আশ্রয়বাক্যটি অবশ্যই সদর্থক হবে। কারণ ন্যায়ের নিয়ম অনুসারে, দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়।
পঞ্চম নিয়ম: দুটি আশ্রয়বাক্য সদর্থক হলে সিদ্ধান্তটি অবশ্যই সদর্থক হবে। কারণ ন্যায়ের নিয়ম অনুসারে, দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। আবার ন্যায়ের আর একটি নিয়ম অনুসারে, একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তও নঞর্থক হবে। তাই দুটি আশ্রয়বাক্য সদর্থক হলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই সদর্থক হবে।
৭। (ক) বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ের দ্বিতীয় সংস্থানে প্রধান হেতুবাক্যটি সর্বদা সামান্য বচন হয়।
(খ) প্রমাণ করো সিদ্ধান্ত সামান্য হলে হেতুপদ যুক্তিবাক্যগুলিতে মাত্র একবারই ব্যাপ্য হতে পারে।
প্রমাণ: প্রধান আশ্রয়বাক্যটি যদি সামান্য না হয়, তাহলে সেটি বিশেষ হবে এবং সেক্ষেত্রে সাধ্যপদটি আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হবে না। কারণ, দ্বিতীয় সংস্থানে সাধ্যপদটি আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং বিশেষ বচন উদ্দেশ্যকে ব্যাপ্য করে না। এখানে অবৈধ সাধ্যদোষ এড়ানোর জন্য সাধ্যপদটি সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না এবং এই কারণে সিদ্ধান্তটিকে সদর্থক হতে হবে। সাধ্যপদ সিদ্ধান্তে বিধেয় স্থানে থাকে এবং সদর্থক বচন বিধেয়কে ব্যাপ্য করে না। এখন সিদ্ধান্ত যদি সদর্থক হয়, তাহলে ন্যায়ের সাধারণ নিয়ম অনুসারে উভয় আশ্রয়বাক্যকে সদর্থক হতে হবে। সেক্ষেত্রে হেতুপদটি কোনো আশ্রয়বাক্যেই ব্যাপ্য হওয়ার সুযোগ পাবে না। কারণ দ্বিতীয় সংস্থানে হেতুপদটি উভয় আশ্রয়বাক্যের বিধেয় স্থানে থাকে এবং সদর্থক বচন বিধেয়কে ব্যাপ্য করে না। ফলে অনুমানটিতে অব্যাপ্য হেতুদোষ দেখা দেবে। সুতরাং দ্বিতীয় সংস্থানে প্রধান আশ্রয়বাক্য অবশ্যই সামান্য হবে।
প্রমাণ: যদি সিদ্ধান্ত সামান্য হয়, তাহলে এটি A কিংবা E বচন হবে।
এখন যদি সিদ্ধান্ত A বচন হয়, তাহলে ন্যায়ের নিয়ম অনুসারে প্রধান এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য উভয়ই A বচন হবে। এক্ষেত্রে উভয় আশ্রয়বাক্যে মোট দুটি পদ ব্যাপ্য হবে। এই দুটি পদের মধ্যে একটি অবশ্যই পক্ষপদ হবে, কেন-না সিদ্ধান্ত A বচন হওয়াতে সেখানে পক্ষপদটি ব্যাপ্য হয়েছে। কাজেই, অবৈধ পক্ষদোষ এড়ানোর জন্য পক্ষপদটিকে আশ্রয়বাক্যে অবশ্যই ব্যাপ্য হতে হবে। এখন বাকি যে ব্যাপ্য পদটি আশ্রয়বাক্যে থাকবে, সেটি নিশ্চয়ই হেতুপদ হবে, সুতরাং, সিদ্ধান্ত A হলে হেতুপদ একবার মাত্র ব্যাপ্য হবে।
আবার যদি সিদ্ধান্ত E বচন হয়, তাহলে ন্যায়ের নিয়ম অনুসারে একটি আশ্রয়বাক্য অবশ্যই A বচন হবে। সেক্ষেত্রে দুটি আশ্রয়বাক্যে মোট তিনটি পদ ব্যাপ্য হবে। এই তিনটি পদের মধ্যে একটি হবে সাধ্য এবং অপরটি হবে পক্ষ, কারণ সিদ্ধান্ত E বচন হওয়াতে পক্ষপদ ও সাধ্যপদ উভয়ই সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়েছে। কাজেই আশ্রয়বাক্যে যে অবশিষ্ট ব্যাপ্য পদটি থাকবে, সেটি হবে হেতুপদ। সুতরাং সিদ্ধান্ত E বচন হলে হেতুপদ একবার মাত্র ব্যাপ্য হবে।
৮। (ক) বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ে অপ্রধান হেতুবাক্য নঞর্থক হলে প্রধান হেতুবাক্য সামান্য সদর্থক হতে বাধ্য।
(খ) বৈধ নিরপেক্ষ ন্যায়ে যদি অপ্রধান হেতুবাক্য নঞর্থক হয়, তবে হেতুপদ একবার মাত্র ব্যাপ্য হতে পারে।
প্রমাণ: অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে প্রধান আশ্রয়বাক্য সদর্থক হবে। কারণ ন্যায়ের সাধারণ নিয়ম অনুসারে দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। আবার একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে ন্যায়ের নিয়ম অনুসারে সিদ্ধান্তও নঞর্থক হবে।
এখন সিদ্ধান্ত যদি নঞর্থক হয়, তাহলে সিদ্ধান্তের বিধেয় অর্থাৎ সাধ্যপদ ব্যাপ্য হবে। কারণ নঞর্থক বচন বিধেয়কে ব্যাপ্য করে। কাজেই অবৈধ সাধ্যদোষ এড়ানোর জন্য সাধ্যপদকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হতেই হবে। এজন্য সাধ্যপদকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে এমন স্থানে রাখতে হবে, যেখানে সেটি ব্যাপ্য হয়। এখন প্রধান আশ্রয়বাক্য সদর্থক হওয়াতে এখানে বিধেয় পদটি ব্যাপ্য হবে না। কাজেই প্রধান আশ্রয়বাক্যে সাধ্যপদটিকে অবশ্যই উদ্দেশ্যের স্থানে রাখতে হবে এবং প্রধান আশ্রয়বাক্যটিকে অবশ্যই সামান্য সদর্থক হতে হবে। সুতরাং যদি অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হয়, তাহলে প্রধান আশ্রয়বাক্য সামান্য সদর্থক হবে।
প্রমাণ: অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে ন্যায়ের নিয়ম অনুসারে প্রধান আশ্রয়বাক্য সদর্থক হবে এবং সিদ্ধান্ত হবে নঞর্থক বচন। সেক্ষেত্রে প্রধান আশ্রয়বাক্য, অপ্রধান আশ্রয়বাক্য এবং সিদ্ধান্ত মিলিয়ে যে মূর্তিগুলি পাওয়া যেতে পারে সেগুলি হল – AEE, AOO, IEO, IOO। এখন এগুলি পরীক্ষা করে দেখা যাক-
AEE: এই ন্যায়টিতে সিদ্ধান্তে পক্ষপদ বা্যপ্য হবে। তাই পদটিকে অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে অবশ্যই ব্যাপ্য হতে হবে। তা না হলে অবৈধ পক্ষদোষ ঘটবে। তা ছাড়া সিদ্ধান্তে সাধ্যপদ ব্যাপ্য হবে। ওই পদটিকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হতে হবে, না হলে অবৈধ সাধ্যদোষ ঘটবে। এক্ষেত্রে অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে আর-একটি পদ ব্যাপ্য হবে, সেটি হল হেতুপদ। অর্থাৎ ন্যায়টিতে হেতুপদ একবারই ব্যাপ্য হবে।
AOO: এই ন্যায়টিতে সাধ্যপদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়েছে। তাই এই পদটিকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হতে হবে। না হলে অবৈধ সাধ্যদোষ ঘটবে। অপ্রধান আশ্রয়বাক্যে একটি পদ ব্যাপ্য হয়েছে এবং সেটি অবশ্যই হেতুপদ অর্থাৎ হেতুপদ এখানে একবার মাত্র ব্যাপ্য হয়েছে।
IEO: এই ন্যায়টিতে সাধ্যপদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য। অথচ প্রধান আশ্রয়বাক্য 1 বচন হওয়ায় সাধ্যপদ অব্যাপ্য। ফলে যুক্তিটিতে অবৈধ সাধ্যদোষ ঘটেছে। ফলে যুক্তিটি অবৈধ।
IOO: এই ন্যায়টিতে দুটি আশ্রয়বাক্য বিশেষ হওয়ায় সিদ্ধান্ত সম্ভব নয়। সুতরাং বলা যায়, অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে হেতুপদ একবার মাত্র ব্যাপ্য হতে পারে।
৯। (ক) প্রমাণ করো যে, কোনো ন্যায়ের তিনটি পদই দু-বার করে ব্যাপ্য হতে পারে না।
(খ) প্রমাণ করো যে, IE কোনো সংস্থানেই বৈধ মূর্তি নয়।
প্রমাণ: কোনো ন্যায় অনুমানে তিনটি পদই দু-বার করে ব্যাপ্য হতে পারে না। কারণ, সেক্ষেত্রে দুটি আশ্রয়বাক্য এবং সিদ্ধান্তকে হতে হবে সামান্য নঞর্থক বচন বা E বচন। কেন-না, একমাত্র E বচনেই উভয়পদ ব্যাপ্য হয়। সেক্ষেত্রে ন্যায় অনুমানের মূর্তিটি হবে EEE। আর এই EEE মূর্তিটি বৈধ নয়। কেন-না, ন্যায়ের পঞ্চম নিয়মে বলা হয়েছে দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যুক্তিটিতে নঞর্থক আশ্রয়বাক্যজনিত দোষ ঘটবে। সুতরাং বলা যায় যে, কোনো ন্যায়ের তিনটি পদই দু-বার করে ব্যাপ্য হতে পারে না।
প্রমাণ: যে-কোনো সংস্থানে যদি প্রধান আশ্রয়বাক্য । বচন এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য E বচন হয়, তাহলে বৈধ সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। যদি অপ্রধান আশ্রয়বাক্য E বচন হয়, তাহলে ন্যায়ের সাধারণ নিয়ম অনুসারে সিদ্ধান্ত নঞর্থক হবে এবং সিদ্ধান্তের বিধেয় অর্থাৎ সাধ্যপদ ব্যাপ্য হবে। কাজেই, অবৈধ সাধ্যদোষ এড়ানোর জন্য সাধ্যপদটিকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হতেই হবে। কিন্তু প্রধান আশ্রয়বাক্য। বচন হওয়াতে সাধ্যপদ ব্যাপ্য হবে না। কারণ, I বচন কোনো পদকেই ব্যাপ্য করে না। ফলে অনুমানটিতে অবৈধ সাধ্যদোষ ঘটবে। সুতরাং বলা যায়, IE কোনো সংস্থানেই বৈধ মূর্তি হতে পারে না।
১০। (ক) প্রমাণ করো EI সব সংস্থানেই বৈধ মূর্তি।
(খ) প্রমাণ করো দুটি আশ্রয়বাক্যের মধ্যে যে-কোনো একটি নঞর্থক হলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই নঞর্থক হবে।
প্রমাণ: EI মূর্তিটি যদি সব সংস্থানেই বৈধ মূর্তি হয়, তাহলে EI জোড়ের প্রধান আশ্রয়বাক্য হবে নঞর্থক এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্য বিশেষ হওয়ায় সিদ্ধান্ত হবে নঞর্থক এবং বিশেষ। অর্থাৎ বিশেষ নঞর্থক বা ০ বচন। সেক্ষেত্রে মূর্তিটি হবে EIO। এখানে ০ বচন সিদ্ধান্ত হওয়ায় সাধ্যপদটি ব্যাপ্য হবে। ওই সাধ্যপদটি প্রধান আশ্রয়বাক্যের E বচনে থাকায় ব্যাপ্য হবে। কারণ, E বচন উভয় পদকেই ব্যাপ্য করে। আবার ওই দুটি পদের মধ্যে একটি হবে হেতুপদ। সেক্ষেত্রে অব্যাপ্য হেতুদোষও ঘটবে না। ফলে ন্যায় অনুমানের কোনো নিয়ম লঙ্ঘিত না হওয়ায় অনুমানটি বৈধ হবে। সুতরাং বলা যায়, EI সব সংস্থানেই বৈধ মূর্তি হবে।
প্রমাণ: ন্যায় অনুমানের পঞ্চম নিয়মে বলা হয়েছে- দুটি নঞর্থক আশ্রয়বাক্য থেকে কোনো সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় না। অর্থাৎ একটি আশ্রয়বাক্যকে সদর্থক হতেই হবে। যদি একটি আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হয়, তাহলে অন্য আশ্রয়বাক্যটি অবশ্যই সদর্থক হবে। এখন প্রধান আশ্রয়বাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তাহলে হেতু ও সাধ্যপদের মধ্যে কোনো সম্বন্ধ স্থাপন হয় না। আবার, অপ্রধান আশ্রয়বাক্য সদর্থক হওয়ার জন্য পক্ষ ও হেতুপদের মধ্যে সম্বন্ধ স্থাপিত হবে। কিন্তু হেতুপদকে পক্ষ ও সাধ্য-উভয় পদের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন করতে হলে হেতুপদকে উভয় আশ্রয়বাক্যে সাধ্য ও পক্ষপদের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হতে হবে। এক্ষেত্রে হেতুপদের সঙ্গে সাধ্যপদের অস্বীকৃতি এবং পক্ষপদের সঙ্গে স্বীকৃতির সম্বন্ধ ব্যক্ত হওয়ায় সিদ্ধান্তটি নঞর্থক বচন হবে।
অনুরূপভাবে অপ্রধান আশ্রয়বাক্যটি যদি নঞর্থক হয়, তাহলে প্রধান আশ্রয়বাক্যটি সদর্থক হবে। এক্ষেত্রে হেতুপদের সঙ্গে সাধ্যপদের সম্বন্ধ স্থাপিত হয় এবং পক্ষপদের সঙ্গে সম্বন্ধ স্থাপন হয় না। ফলে সিদ্ধান্তে পক্ষপদ ও সাধ্যপদ সম্বন্ধযুক্ত হবে না অর্থাৎ সিদ্ধান্তটি নঞর্থক বচন হবে।
১১। (ক) যে পদ হেতুবাক্যে ব্যাপ্য হয়নি সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারে না।
(খ) প্রমাণ করো প্রথম সংস্থানে হেতুপদ দু-বার ব্যাপ্য হতে পারে না।
প্রমাণ: ন্যায় অনুমানের চতুর্থ নিয়মে বলা হয়েছে, যে পদ হেতুবাক্যে ব্যাপ্য হয়নি সেই পদ সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হতে পারবে না। এই নিয়মটি সকল প্রকার অবরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবরোহ অনুমানের বৈশিষ্ট্য হল: সিদ্ধান্ত কোনো ক্ষেত্রেই আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হতে পারবে না। কাজেই, যদি কোনো পদ আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য না হয়ে সিদ্ধান্তে ব্যাপ্য হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে সিদ্ধান্তটি নিশ্চয়ই আশ্রয়বাক্য থেকে ব্যাপকতর হবে। এর দ্বারা প্রমাণ হয়, যে পদ হেতুবাক্যে ব্যাপ্য হয়নি, সেই পদ সিদ্ধান্তে কখনও ব্যাপ্য হতে পারবে না।
প্রমাণ: প্রথম সংস্থানে হেতুপদটি থাকে প্রধান আশ্রয়বাক্যের উদ্দেশ্যে এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যের বিধেয়ে। হেতুপদটিকে যদি উভয় আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হতে হয়, তাহলে প্রধান আশ্রয়বাক্যকে সামান্য এবং অপ্রধান আশ্রয়বাক্যকে নঞর্থক হতে হবে। অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হলে সিদ্ধান্তও নঞর্থক হবে। ফলে সিদ্ধান্তের বিধেয় স্থানে অবস্থিত সাধ্যপদ ব্যাপ্য হলে, ওই পদটিকে প্রধান আশ্রয়বাক্যে অবশ্যই ব্যাপ্য হতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধান আশ্রয়বাক্যকে নঞর্থক হতে হবে। অবশ্য অপ্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হওয়ায় প্রধান আশ্রয়বাক্য নঞর্থক হতে পারবে না। এক্ষেত্রে ন্যায়ের পঞ্চম নিয়ম লঙ্ঘিত হবে। তা ছাড়া সিদ্ধান্তে যদি সাধ্যপদ ব্যাপ্য না হয়, তাহলে অবৈধ সাধ্যদোষ ঘটবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, প্রথম সংস্থানে হেতুপদ উভয় আশ্রয়বাক্যে ব্যাপ্য হতে পারবে না অর্থাৎ দু-বার ব্যাপ্য হতে পারবে না।
আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টার দর্শন প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টারের ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর
আরো পড়ুন : উচ্চমাধ্যমিক চতুর্থ সেমিস্টারের ইতিহাস প্রশ্ন উত্তর