হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর (মহাশ্বেতা দেবী) ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা

সূচিপত্র

হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর (মহাশ্বেতা দেবী) ক্লাস 12 চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা | Harun Salemer Masi Golper Question Answer Class Twelve 4th Semester Bengali

হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর
হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর

১। ছোটোগল্পের সংজ্ঞা ও বৈশিষ্ট্য নিরূপণের মধ্য দিয়ে ‘হারুন সালেমের মাসি’ ছোটোগল্প হিসেবে কতটা সার্থক, তা দেখাও। 

ছোটোগল্প: বাংলা ছোটোগল্পের সার্থক স্রষ্টা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনিই প্রথম ‘ছোটোগল্প’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ছোটোগল্প কেবল ভাবাশ্রয়ী কল্পনামুখ্য নয়, বরং জীবননির্ভর এবং এতে রয়েছে খণ্ড কাহিনির ব্যবহার। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ছোটোগল্পের বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল-

  • ছোটোগল্পের পরিসর ক্ষুদ্র। এই ক্ষুদ্র পরিসরেই ধরা থাকে জীবনের সমগ্রতা। অর্থাৎ এ হল বিন্দুতে সিধুদর্শন।
  • ছোটোগল্পের স্বল্প আয়তনে ঘটনা বা কাহিনির কোনো বাহুল্য থাকে না। চরিত্র থাকে গুটিকয়েক।
  • আদর্শ ছোটোগল্পে কেবল একটি ক্লাইম্যাক্স বা মহামুহূর্ত থাকে।
  • ছোটোগল্প পাঠকমনে একটি একক ধারণা তৈরি করে।
  • ছোটোগল্পে থাকে আরম্ভের তির্যক ভঙ্গি আর সমাপ্তির চমৎকারিত্ব। অর্থাৎ এক ধরনের জমাটি নাটকীয়তা লক্ষ করা যায়।
  • ছোটোগল্প শেষ হওয়ার পরেও একটা আক্ষেপ, অতৃপ্তি থেকে যায়।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষাযাপন’ কবিতার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চরণ-

"নাহি বর্ণনার ছটা    ঘটনার ঘনঘটা,
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ।
অন্তরে অতৃপ্তি রবে     সাঙ্গ করি' মনে হবে
শেষ হয়ে হইল না শেষ।"

ছোটোগল্পের বৈশিষ্ট্য নিরূপণে এই পঙ্ক্তিগুলির গুরুত্ব অপরিসীম।

ছোটোগল্পরূপে সার্থকতা: মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ একটি স্বল্প পরিসরবিশিষ্ট কাহিনি। হারাকে কেন্দ্র করে গৌরবি, আয়েছা বিবি, যশি, মুকুন্দ প্রমুখ অল্প সংখ্যক চরিত্রের আবর্তন ও সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়। গল্পের ঘটনাধারাও একমুখী পরিণামের দিকেই ধাবিত হয়েছে। গল্পে খুব বেশি পূর্ব কাহিনি বর্ণনা করার প্রয়োজন পড়েনি, বিন্দুতেই সিধু দর্শন করিয়েছেন গল্পকার। গৌরবির সঙ্গে তার ছেলেমেয়ের সম্পর্ক, হারাকে আশ্রয় দেওয়াকে কেন্দ্র করে গ্রামসমাজের ধর্মীয় সংস্কার ও সংকীর্ণতা, পরিশেষে হারা ও গৌরবির শহরে চলে যাওয়ার ঘটনায় গল্পের পরিণতি ও সমাপ্তি। কিন্তু গল্প শেষ হওয়ার পরও পাঠকের মনে হয় এরপর কী হল- হারা ও গৌরবি শহরে কীভাবে আছে, কী খাচ্ছে, কীভাবে চলছে তাদের জীবন- তা জানার কৌতূহল জন্মায় অর্থাৎ একটা অতৃপ্তির রেশ থেকে যায়। কয়েকটি চরিত্র আর বিশেষ ঘটনাধারার বাস্তবতার মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে গ্রামজীবনের সমাজবাস্তবতা ও হতদরিদ্র মানুষের জীবনযন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে এই গল্পে। সুতরাং ‘হারুন সালেমের মাসি’ নিঃসন্দেহে একটি সার্থক ছোটাগল্প।

২। হারুন সালেমের মাসি গল্পের গৌরবি চরিত্রটি আলোচনা করো।

ভূমিকা: মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘হারুন সালেমের মাসি’ ছোটোগল্পের প্রধান তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র গৌরবি। গল্পকার আলোচ্য গল্পে নিজস্ব লিখনশৈলীর গুণে মাতৃহৃদয়ের আত্মিক টানকে তুলে ধরেছেন গৌরবি চরিত্রের মধ্য দিয়ে।

বন্ধুত্বসুলভ মানসিকতা: জন্ম থেকে গৌরবির একটা পায়ে খুঁতের কারণে জীবিকা অর্জনে সে অক্ষম। তাই দীনদুঃখী অসহায় বিধবা গৌরবি তার প্রতিবেশী হারার মা আয়েছা বিবির দেখানো উপার্জনের পথেই এগিয়েছে। শুধু তাই নয়, দুজনের মধ্যে একটা মনের মিলও তৈরি হয়েছে- ফলত উভয়কেই একসঙ্গে রোজ সকালে খালপাড়ে, বিলের ধারে শাকপাতা গুগলি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে এবং সেগুলি হাটুরে যশি ওরফে যশোদার মারফত শহরের বাজারে বিক্রি করিয়ে পয়সা রোজগার করতে দেখা গিয়েছে আর সেই আয় দিয়ে গৌরবির রোজকার দিন চলেছে কোনোরকমে। একদা আয়েছ। বিবিকে রমজান মাস পালন করতে দেখে গৌরবি জানতে পেরেছে যে তাদের ধর্ম আলাদা তবু ধর্মপরিচয় তাদের বন্ধুত্বে ছেদ ফেলেনি বরং কাজের অবসরে হারার মা গৌরবির উঠোনে বসে গৌরবির মাথার উকুন বেছেছে আবার দুজনে একই সঙ্গে হাটুরেদের বাজার ফেরত ফেলে যাওয়া বাঁধাকপির বুড়ো পাতা, থেতলে যাওয়া বিলিতি বেগুন কুড়িয়েছে। দুজনের সমাজ আলাদা হলেও তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে হৃদ্যতা, তৈরি হয়েছে সখ্য। গৌরবির মনের ধর্মীয় সংস্কার কখনোই তার আর হারার মায়ের বন্ধুত্বের উপর প্রকট হয়ে চেপে বসেনি।

উদার ও সংস্কারমুক্ত মানসিকতা : ছেলে নিবারণ গৌরবিকে ভাত দিতে অস্বীকার করলেও ছেলের সঙ্গে ঝগড়া করে ভাত আদায় করতে যায়নি সে। আবার ছেলেমেয়েকে গালমন্দও করেনি। বাস্তবকে স্বীকার করে নিয়ে সেই অনুযায়ীই নিজের জীবনকে পরিচালিত করেছে গৌরবি। হারার মায়ের জাতধর্ম তো দূরে থাক, নামটা পর্যন্ত বহুদিন জানত না গৌরবি। রমজানের মাসে হারার মাকে রোজা রাখতে দেখে বুঝেছিল তাদের সমাজ আর গৌরবির সমাজ আলাদা- কিন্তু তাতে গৌরবির আচরণে বা মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি, গৌরবির কাছে ব্যবহারই মানুষের আসল পরিচয়। আয়েছা বিবি আর হারাকে তাই তার আপনজন বলেই মনে হয়েছে। জীবনের সারবস্তু সে বুঝেছে- যে সব গরিবের স্বর্গ আসলে এক। গ্রামের মেয়ে, গ্রামের বউ গৌরবির মনে সুবিশাল সমুদ্রের উদারতা, সেখানে কেবল মাতৃস্নেহ, মানবিকতা ও স্বার্থশূন্য ভালোবাসার ঢেউ ওঠে। গৌরবির পেটে খিদের আগুন জ্বললেও হৃদয়ে জ্বলে সহানুভূতির প্রদীপ। তবে সমাজের অন্দরে গেঁথে যাওয়া সাম্প্রদায়িক বৈষম্য যে গৌরবির মনেও ছুৎমার্গ বা একঘরে হওয়ার ভয় সৃষ্টি করেনি তা নয়, কিন্তু সকল ভয়কে জয় করেই হারাকে নিজের উঠোনে স্থান দিয়েছিল গৌরবি।

মানসিক দৃঢ়তা: যশির কাছ থেকে হারার ব্যাপারে পরামর্শ নিলেও শহরের ফুটপাথে হারাকে মরতে পাঠায়নি গৌরবি। যশির বাঁকা কথার বিষ নিঃশব্দে গিলে নিয়েছে সে। সাত বছরের অনাথ ছেলেটিকে অজানা অচেনা পথে মরতে পাঠানোর মতো অমানবিক নয় গৌরবি। বরং হারাকে শহরে ছেড়ে এলে নিবারণের বাড়িতে আশ্রয় পাওয়ার যে সুবর্ণ সুযোগ গৌরবি পেতে পারত সেটিও অবলীলায় ত্যাগ করেছে সে।

গৌরবির পা খোঁড়া তবে তার ভাবনা পঙ্গু নয়। অদ্ভুত এক দৃঢ় চেতনায় গৌরবি ক্রমশ ধর্মনিরপেক্ষতার সার্থক প্রতিনিধি হয়ে উঠতে পেরেছে। মাতৃহারা অনাথ হারার বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণের বেলায় কেবল নিজের মনের কথা নিজের হৃদয়ের ডাকই শুনেছে গৌরবি।

মানবিক সিদ্ধান্ত: শুধুমাত্র সাত বছরের অনাথ হারাকে বাঁচানোর তাগিদে গৌরবি রাতের অন্ধকারে তাকে নিয়েই শহরের উদ্দেশে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ায়। গৌরবি শহরের ব্যস্ততম রাজপথে ভিক্ষে করে হারাকে বাঁচাবে, যেখানে কেউ তাদের জাতধর্ম জিজ্ঞেস করবে না। জাতধর্মের নিরিখে নয়, এভাবেই মানবিকতার পবিত্র সুতোর বন্ধনে হারার সঙ্গে নিজেকে বেঁধে নেয় গৌরবি।

মা থেকে মাসি: গৌরবি জাতধর্ম ত্যাগ করে, পিছুটান ভুলে মনপ্রাণ দিয়ে কেবলই ‘হারুন সালেমের মাসি’ হয়ে উঠতে চেয়েছে। গৌরবি আসলে বিধর্মী এক মাতৃহারা বালকের মায়ের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছে। অধসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজকে সমুচিত শিক্ষা দিয়ে গৌরবি সব সামাজিক রীতিনীতির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এবং প্রমাণ করেছে মায়ের কোনো জাত হয় না। নিবারণের মা গৌরবির এই হারুন সালেমের মাসি হয়ে ওঠার যাত্রা আসলে তার নিজের আত্মপরিচয় অর্জনের যাত্রা, তার স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার যাত্রা।

৩। হারুন সালেমের মাসি’ গল্প অবলম্বনে হারা চরিত্রটির পরিচয় দাও। 

বুদ্ধিমান ও সংযত: ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পের ঘটনাধারা আবর্তিত হয়েছে মূলত বছর সাতেকের হারাকে কেন্দ্র করেই- যার প্রকৃত নাম হারুন সালেম। রোগা ছেলেটার কথা সড়োগড়ো নয়- আবার পেটে খিদের আগুন ও অপুষ্টিতে ভোগা হারা নির্বোধও নয়। তাই মাকে কোনোরকম নড়াচড়া করতে না দেখে পরিস্থিতি বুঝে সে আগে এসেছে মাসি গৌরবির কাছেই এবং আড়ষ্ট উচ্চারণে বলেছে, “মা ললে না মাসি!” অজগাঁয়ে গৌরবি মাসিই যে তাদের সুখদুঃখের একমাত্র সাথি সে কথা ছোট্ট হারা বুঝে গিয়েছে আগেভাগেই। পাশাপাশি দেখা যায়, সদ্য মাতৃহারা ছেলেটা শোকে-দুঃখে বিলাপ না করে মাসির কথামতো কাজ করেছে। বয়স অল্প হলেও জীবন অভিজ্ঞতায় বিজ্ঞ হারা মায়ের মৃত্যুর পর যাবতীয় দায়িত্ব পালন করে মাসির কাছে এসে উঠেছে। বয়স আন্দাজে সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও সংযত।

অনুগত: মায়ের শিখিয়ে যাওয়া “মাসির পা ধরে পড়ে থাকিস”- এই শেষ কথাগুলি হারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে। গৌরবির সব নির্দেশ মান্য করতে দেখা গিয়েছে হারাকে। গৌরবির নির্দেশে মায়ের কবরে মাটি দেওয়া, দূরসম্পর্কের কাকার কাছে আশ্রয় নিতে যাওয়া এমনকি গৌরবির ভর্ৎসনা শুনে নিজের বাড়িতে পালিয়ে গিয়েও পুনরায় মাসির কাছেই ফিরেছে সে। মাসির হাত ধরে নিরাপদে অচেনা শহরের পথে নির্দ্বিধায় পাড়ি দিয়েছে হারা। গৌরবির প্রতি তার আনুগত্যের এগুলিই প্রমাণ।

বাস্তববোধসম্পন্ন: হারা শুধুই বাধ্য বা অনুগত ছিল না- মানুষ চেনার ক্ষমতাও তার সেই স্বল্প বয়সেই হয়ে গিয়েছিল। খিদে সহ্য করতে করতেই সে একেবারে বিজ্ঞ হয়ে উঠেছিল। বাবার মৃত্যুর সময় সে নিজের সমাজের লোকের দুর্ব্যবহার দেখেছে- মা মরতেই কাকার স্বার্থপরতা উপলব্ধি করেছে। তাই ছোট্ট হারা নিজের সমাজের কাছে আশ্রয় খুঁজতে যায়নি। গৌরবি মাসির কাছে থাকলে সে প্রাণে বাঁচবে- এই বাস্তব শিক্ষাই হারা চরিত্রের অর্জন।

মাসির প্রতি দায়িত্ববান: খোঁড়া মাসিকে সাহায্য করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল সে। ঘর থেকে সে মেটে আলু এনে দিয়েছে মাসিকে। থানকুনি শাক তুলেছে মাসির সঙ্গে, দোকানে ফাইফরমাস খেটে মাসির ঘরে লক্ষো জ্বালানোর কেরোসিন তেল জোগাড় করেছে। মাসির সঙ্গে মিয়োনো চালভাজা চিবিয়েছে।

মায়ের প্রতি অনুভূতিপ্রবণ: হারার ভবিষ্যতের কথা ভেবে গৌরবি একসময় উন্মাদের মতো হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে হারাকে আগলে রাখার অপরাধে নিজের আশ্রয় হারানোর ভয়ে গৌরবি হারাকে দূর দূর করে তাড়িয়েও দিয়েছে। মাসির তাড়া খেয়ে একলা হারা নিজের ঘরের মেঝেতে এসে শুয়েছে- ঘুমের ঘোরে মাকে দেখেছে। মনে হয়েছে এখনই মা এসে তার জন্য রাঁধতে বসবে- সব আবার আগের মতো হয়ে যাবে। মাতৃহীন হারার বুকের ভিতর মায়ের জন্য জমানো কান্না ঢেউ-এরমতো আছড়ে পড়েছে। ঘুমের মধ্যে সে ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছে। অনাথ হারার এই বুকফাটা যন্ত্রণা ও মাতৃস্নেহবঞ্চিত এক শিশুর দুর্বলতা সত্যিই মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো।

মাসির প্রতি আস্থাবান: গৌরবি হারাকে নিয়ে শহরে পালানোর কথা বললে তখনও সে মাসির কথা ভেবেছে- খোঁড়া মাসি শহরের ব্যস্ততম রাজপথে কেমন করে তাল রাখবে। তবুও সহজসরল বিশ্বাসে আর মাসির প্রতি অগাধ ভরসা নিয়ে হারা গ্রাম ছেড়েছে। হারা মানুষের প্রতি অর্থাৎ মানবতার প্রতি গভীর আস্থায় মাসির হাত ধরে চেনা জীবন ছেড়ে অচেনা শহরের পথে পা বাড়িয়েছে-বলা বাহুল্য মাসিই তার কাছে মা হয়ে উঠেছে।

৪। মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে চিত্রিত নিবারণ চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো। 

নিবারণের ঈর্ষা: মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পের প্রধান চরিত্র গৌরবি, তার ছেলে হল নিবারণ। নিবারণ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজের তৈরি বাড়িতে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে। বিধবা মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব সে নেয়নি, এমনকি নিজের বাড়িতে আশ্রয়ও দেয়নি মাকে। একমাত্র বোন পুটির বিয়েতে ঘর তৈরির টাকা ভেঙে বাবা জামাইকে ঘড়ি-টর্চ-সাইকেল দেওয়ায় নিবারণের হিংসা ও রাগ। গৌরবি সেইসময় বলেছিল, বয়সকালে মেয়েই তাদের দেখভাল করবে। কিন্তু পুঁটির আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সেখানেও গৌরবির ঠাঁই হয়নি। অথচ নিবারণের ক্ষমতা থাকলেও সে মাকে তার কাছে রাখেনি। বোনের বরকে বিয়েতে দেওয়া সাইকেল-ঘড়ির প্রতি নিবারণের ঈর্ষা তাকে মায়ের প্রতিও বিমুখ করে তুলেছে।

মানসিক সংকীর্ণতা: নিবারণের ঘরে দেড়শো টাকা দামের রেডিয়ো বাজে, অথচ একটা গাই-গোরু কিনে পালন করার জন্য গৌরবি একশো টাকা চাইলে সে দেয় না। সদ্য মাতৃহারা অনাথ বালক হারাকে নিয়ে গৌরবি নিবারণের কাছে আশ্রয় চাইতে গেলে মুসলমান বালককে আশ্রয় দেওয়ার আস্পর্ধা দেখে মাকে কটুকথা বলে নিবারণ। গৌরবিকে শত্রু বলে গণ্য করে সে। নিবারণ আবার সুবিধাবাদীও বটে। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর দেখাশোনার জন্যই নিবারণ মাকে রাখতে রাজি হয়। কিন্তু হারাকে ত্যাগ করার শর্ত দেয় গৌরবিকে। স্বার্থপরতা, মায়ের প্রতি অবমাননা, ধর্মীয় সংস্কারাচ্ছন্নতা, ছোট্ট হারার প্রতি নিষ্ঠুর মনোভাব নিবারণের সংকীর্ণ মনেরই পরিচায়ক।

প্রতিহিংসাপরায়ণতা: গৌরবির বর্তমান আশ্রয়দাতা ভাইপো মুকুন্দকেও নিবারণ মায়ের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করতে চেয়েছে। মায়ের শেষ আশ্রয় ও অবলম্বনটুকু কেড়ে নিয়ে নিবারণ তার প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চেয়েছে। ছেলেবেলার রাগ পুষে রেখে প্রবল প্রতিহিংসায় অমানবিক এক কুপুত্র হয়ে উঠেছে গল্পের নিবারণ।

৫। হারুন সালেমের মাসি ছোটোগল্প অবলম্বনে যশোদা চরিত্রটি আলোচনা করো। 

যশোদার জীবনযুদ্ধ: মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘হারুন সালেমের মাসি’ ছোটোগল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র যশোদা বা যশি। সে স্বাবলম্বী, সংগ্রামী এক নারী। সাত বছর বয়স থেকে সে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ “ওদের পুরুষরা কোনোদিন ভাত-কাপড় দেয় না, যশির বরও দেয় না। যশিরা শরীরে খেটে সংসার বেঁধে তোলে।”

চেহারা ও স্বভাববৈশিষ্ট্য: যশির মুখটি পানপাতার মতো হরতনি ছাঁদের, নাকটি চাপা, দৃষ্টি সতর্ক। নানারূপ তিক্ত অভিজ্ঞতা তাকে জীবন চিনতে শিখিয়েছে। রূঢ় বাস্তবের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যশিকে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়। তাই আপাতভাবে তার স্বভাব অত্যন্ত বৃঢ়, কথাবার্তা খুব রুক্ষ। কঠিন-কঠোর বাস্তব জীবনই তাকে এসব শিখিয়েছে। তাই “দয়া-টয়া দেখলে ওর অঙ্গ জ্বলে।” যশি নিজের জীবনে কারও কাছে দয়া পায়নি। ছোটোবেলা থেকে তাকে খেটে খেতে হয়েছে। এখন সে চাল বিক্রি করে। সঙ্গে নিয়ে যায় গৌরবি-আয়েছাদের সংগৃহীত শাকপাতা-গুগলি। ট্রেনে বসার জায়গা, চাল বিক্রির লাভের টাকা সবকিছুই – জোরজবরদস্তি করে আদায় করতে হয় তাকে। সহস্র প্রতিকূলতার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যশি সদাব্যস্ত। তাই তার দু-দণ্ড দাঁড়িয়ে কথা বলার অবসর থাকে না। ছুটে চলে যশি।

বাস্তবতাবোধ: যশোদার বাস্তবতাবোধ প্রবল। মুসলমান বালক অনাথ হারাকে কাছে রাখার ব্যাপারে গৌরবি হিন্দু সমাজের বাধার সম্মুখীন হবে ও বড় বিপদে পড়বে তা সে জানে। তখন হারাকে শহরে উদ্বাস্তুদের ভিড়ে ছেড়ে আসার বাস্তব পরামর্শ দেয় যশি, আপাতভাবে একথা নিষ্ঠুর শোনালেও গল্পের শেষে শহরের ভিড়েই মিশে যেতে দেখা যায় হারা ও গৌরবিকে- সেটাই ছিল তাদের ভবিতব্য।

আপাত রুক্ষতার আড়ালে স্নেহমমতা: বাইরের রুক্ষতার আড়ালে যশির মধ্যেও রয়েছে এক মমতাময় হৃদয়। সে তার ছেলেপিলেকে জন্তুর মতো জাপটে ভালোবাসে, স্বামীকে তোয়াজ করে কাছে রাখে। সংসারকে সচ্ছল করার জন্য সর্বদা পরিশ্রম করে। আয়েছা-গৌরবির মতো অসহায় নারীদের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিয়ে সাহায্য করে। যশি তার না পাওয়া নিয়ে অভিযোগ করে না বরং পরিশ্রম দ্বারা অর্জিত ফল নিয়ে সে নিজের জীবনটুকু কাটিয়ে দিতে চায়।

যশি আসলে একটি শ্রেণিচরিত্র। গল্পের দরিদ্র, শোষিত, মেহনতি, নারীসমাজের প্রতিনিধি যশোদা।

৬। গৌরবি তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারে না।”- গৌরবির এই সমস্যার কারণ কী? হাঁটার সমস্যার কারণে সে কার উপর, কীভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল?

সমস্যার কারণ: মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘হারুন সালেমের মাসি’ ছোটোগল্পে বর্ণিত গৌরবি বিশেষভাবে সক্ষম এক দরিদ্র, অসহায় বিধবা। তার একটি পা জন্ম থেকেই ত্রুটিযুক্ত, গোড়ালি ও পাতা বাঁকা। পায়ের ‘আঙুলগুলো পেছনে বাঁকানো।’ এই কারণে সে তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারে না। পা টেনে টেনে কষ্ট করে হাঁটতে হয় গৌরবিকে।

নির্ভরশীলতা: হাঁটার সমস্যার কারণে গৌরবি জীবিকার প্রয়োজনে শহরে যেতে পারে না। একাকী অসহায় নারী আর এক দুঃখিনী প্রতিবেশী আয়েছা বিবির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আয়েছা বিবি ওরফে হারার মা গৌরবিকে জীবিকার উপায় বলে দেয়। দুজনে মিলে বিলের ধারে, খালপাড়ে থানকুনি পাতা, কচুশাক, যজ্ঞডুমুরের ডাল, দূর্বাঘাস, বেলপাতা তোলে। তারপর সেগুলি বেচতে দেয় যশিদের কাছে। যশিরা শহরে সেসব বেচে পয়সা দেয় ওদের- এতে তাদের দিন গুজরান হয়। শাকপাতা, গুগলি সংগ্রহ করতে হারার মা গৌরবিকে সাহায্য করে। এইভাবে গৌরবি জীবিকা বা আর্থিক দিক থেকে আয়েছার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এমনকি দুই নারী ছিল পরস্পরের সুখদুঃখের সঙ্গী। ফলে মানসিকভাবেও গৌরবি, হারার মা-র উপর নির্ভরশীল ছিল।

৭। ঈশ্বরের জিনিস তো! শাকে-পাতায় দোষ নেই।”- তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো। 

অথবা, “ঈশ্বরের জিনিস তো! শাকে-পাতায় দোষ নেই।”-শাকপাতাকে কেন ‘ঈশ্বরের জিনিস’ বলা হয়েছে? এসব জিনিস দোষমুক্ত কেন?

ঈশ্বরের জিনিস: মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে গৌরবির মনে হয়েছে শাকপাতা ঈশ্বরের জিনিস। কারণ এগুলি প্রকৃতির দান আর বিশ্বপ্রকৃতি তো ঈশ্বরেরই সৃষ্টি। গৌরবি দীনদুঃখী সাধারণ এক বিধবা নারী। তার গ্রাম্য সরলতায় ধর্মীয় সংস্কার ও ঈশ্বরবিশ্বাস থাকা স্বাভাবিক। সেই বিশ্বাস থেকে তার মনে হয়েছে খালপাড়ে বা বিলের ধারে আপনাআপনি গজিয়ে ওঠা থানকুনি পাতা, বেলপাতা, ঢেঁকিশাক, দূর্বাঘাস, যজ্ঞডুমুরের ডাল ইত্যাদি উদ্ভিদ ঈশ্বরের জিনিস। এমনকি জলাশয়ে যে গুগলি পাওয়া যায় সেও ঈশ্বরেরই দান।

দোষমুক্তির কারণ: এইসব শাকপাতা ও গুগলি যা গৌরবি ও আয়েছা বিবি সংগ্রহ করে এবং যেগুলি তাদের জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন- সেই ‘ঈশ্বরের জিনিস’ ধর্মীয় সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত। গৌরবির এক পা খোঁড়া বলে শাকপাতা তোলার কাজে সে আয়েছা বিবির উপর নির্ভরশীল। যেহেতু আয়েছা মুসলমান তাই তার হাত থেকে শাকপাতা নিতে হিন্দু গৌরবির বাধো বাধো ঠেকত কারণ দূর্বা, বেলপাতা পুজো ও শুভ কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে এসব জিনিস মানুষের চাষ করা নয়, এমনকি কারও ব্যক্তিগত জমিতেও জন্মায় না। তাই গৌরবি নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার ছলে মনে করত ঈশ্বরের জিনিস শাকপাতা বিধর্মীর স্পর্শদোষ থেকে মুক্ত।

৮। “হারার কথা শুনে গৌরবি অবাক হয়ে গেল।”- উদ্ধৃতাংশটি সপ্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করো। 

অথবা, “হারার কথা শুনে গৌরবি অবাক হয়ে গেল।”- হারার কোন্ কথা শুনে গৌরবি অবাক হয়ে গেল? অবাক হওয়ার কারণ কী?

হারার কথা: প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘হারুন সালেমের মাসি’ রচনাংশের অন্তর্গত। প্রশ্নোদৃতাংশে কথক গল্পের অন্যতম চরিত্র হারুন সালেম তথা হারাকে উদ্দেশ করেছেন। জিভের আড়ষ্টতার কারণে সে স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলতে পারে না। অঘ্রানের এক সকালে সে গৌরবির উঠোনে এসে বলল “মা ললে না মাসি! ডেকে ডেকে দেখলাম মা রা দেয় না।” অর্থাৎ তার মা নড়াচড়া করছে না, অনেক ডাকাডাকিতেও সাড়া দিচ্ছে না- হারার এই কথা শুনে গৌরবি অবাক হয়ে গিয়েছিল।

অবাক হওয়ার কারণ: হারার মা আয়েছা বিবির সঙ্গে তার অনেক দিনের বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দুজনেই দীনদুঃখী, অসহায়, বিধবা প্রতিবেশী। সহমর্মী এই দুই নারী জীবিকার উপকরণ সংগ্রহে একসঙ্গে বের হয়। খালপাড়ে-বিলের ধারে শাকপাতা, গুগলি ইত্যাদি সংগ্রহ করে যশিদের মাধ্যমে বিক্রি করে। দুজনে আলাদা ধর্মের মানুষ হলেও দুঃখ-দারিদ্র্য তাদের এক করেছে। পরস্পর সুখ-দুঃখের গল্প করে, একে অপরের মাথায় উকুন বেছে দিব্যি দিন কেটে যায় দুজনের। জীবনসংগ্রামের সেই একমাত্র সহায়ক সঙ্গীর হঠাৎ এমন অবস্থা হতে পারে গৌরবি তা কখনও ভাবতে পারেনি। যদিও গৌরবি জানত যে প্রত্যেক রাতে হারার মায়ের জ্বর আসে। কিন্তু সাতসকালে হারার মা ঘুম ভেঙে ওঠেনি, এমনকি সাড়াশব্দও করেনি-অকস্মাৎ এমন কথা হারার মুখে শুনে গৌরবি অবাক হয়ে যায়।

৯। “সঙ্গে যা হারা। মাটি দে।”- বক্তার নাম উল্লেখ করে ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করো।

অথবা, “সঙ্গে যা হারা। মাটি দে।”- প্রশ্নোদ্ভূত ঘটনার প্রেক্ষিত বর্ণনা করো।

ঘটনার প্রেক্ষিত: মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্প থেকে গৃহীত প্রশ্নোদ্ভূত অংশটির বক্তা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র গৌরবি। অঘ্রানের এক সকালে গল্পের শিশু-চরিত্র হারা এসে গৌরবিকে জানায় তার মায়ের সাড়া না দেওয়ার কথা। তা শুনে হতচকিত হয়ে যায় গৌরবি। ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সে হারাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। হারার বাবা সামান্য ঘরামি হওয়া সত্ত্বেও পালবাবুদের চেয়ে উঁচু করে ঘর তোলায় এমন বিলাসিতা মেনে নিতে পারেনি সমাজ। ঘটনাক্রমে কিছুদিনের মধ্যেই সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় হারার বাবার। স্বামীর মৃত্যুতে কাতর হয়ে পড়ে আয়েছা বিবি। সাত বছরের ছোট্ট ছেলেটাকে নিয়েই তার দিন গুজরান হচ্ছিল। ইতিমধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। রোজ রাতে জ্বর আসত হারার মায়ের আর সেই উঁচু করে বাঁধা ঘরেই একা শুয়ে কাঁদত সে। এভাবেই একদিন নিথর হয়ে যায় তার দেহ, হারা ডেকে ডেকে আর মায়ের সাড়া পায় না।

হারার মায়ের মৃত্যুতে গৌরবিও ভীষণভাবে আহত হয় কারণ গৌরবির নিঃসঙ্গ জীবনে একমাত্র সঙ্গী ছিল এই আয়েছা বিবি। হারার মায়েরও সাতকুলে কেউ ছিল না, কেবল এক দুঃসম্পর্কের কাকা ছিল হারার, সে মোট বয়, মাঝে মাঝে বাস-স্ট্যান্ডে থাকে। তার আসার অপেক্ষায় ব্যর্থ হয়ে অবশেষে বিকেলবেলায় রাজমিস্ত্রি পাড়ার কয়েকজন এসে হারার মাকে কবরস্থ করে। সেইসময় হারার ধর্মানুযায়ী, তার মাকে মাটি দেওয়া প্রসঙ্গে বক্তা অর্থাৎ গৌরবি উক্ত মন্তব্যটি করেছে।

১০। গৌরবির নিজের জন্যে বড় কষ্ট হল।”—গৌরবির কষ্ট হল কেন?

অথবা, “কে মুখ শলা করবে কে জানে!”- গৌরবির এই চিন্তাভাবনায় হতাশা কেন? 

অথবা, “এইসব সময়ে গৌরবির বড়ো কষ্ট হয়। ও রেললাইনের দিকে চেয়ে থাকে।”- গৌরবির কষ্টের কারণ কী? সে বেললাইনের দিকে চেয়ে থাকে কেন?

কষ্টের কারণ: মহাশ্বেতা দেবীর লেখা ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পের প্রধান চরিত্র গৌরবি চিরদুঃখী এক বিধবা নারী। প্রতিবেশী, বান্ধবী আয়েছা বিবির অর্থাৎ হারার মা-র মৃত্যুর পর পুত্র-পরিত্যক্তা নিঃসঙ্গ গৌরবি নিজের জীবনের অন্তিম পরিণতির কথা চিন্তা করে কষ্ট পায়। হারার মাকে তার নিজের চেয়ে ভাগ্যবতী বলে মনে হয় কারণ আয়েছা বিবি নিজের ঘরে মৃত্যুবরণ করেছে এবং সে তার পুত্র হারার হাতের মাটি পেয়েছে। কিন্তু গৌরবির কোথায় মৃত্যু হবে, কে তার মুখাগ্নি করবে সে তা জানে না। তাই সে মনে মনে ভাবে- “আমি বা কোথায় মরব, কে মুখ শলা করবে কে জানে।”। ছেলে নিবারণ মাকে আশ্রয় দেয়নি, দেখাশোনাও করে না। তাই গৌরবি নিজের ঘরেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করতে পারবে কি না এবং ছেলের হাতের আগুন পাবে কি না সে বিষয়ে তার সংশয় আছে। তাই নিজের পরিণতির কথা চিন্তা করেই কষ্ট পেয়েছে গৌরবি।

রেললাইনের দিকে চেয়ে থাকার কারণ: পুত্রস্নেহে কাতর গৌরবি তার কষ্টের সময়ে রেললাইনের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাত্র কয়েকটা স্টেশন দূরে গৌরবির সমাজের লোকেরা জমি পেয়েছে। তার ছেলে নিবারণও সেখানে ঘর বানিয়ে বাস করছে। কিন্তু মাকে সে তার ঘরে থাকতে দেয়নি, নেয়নি ভরণ-পোষণের দায়িত্ব। এক পায়ের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে, অসম্ভব দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করতে হচ্ছে গৌরবিকে। স্বার্থপর, প্রতিহিংসাপরায়ণ নিবারণ তার নিজের বোনের বরকে বিয়েতে সাইকেল-ঘড়ি-টর্চ দেওয়ার রাগে মাকে আশ্রয় না দিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। তাই মৃত্যুর পর আত্মজের হাতের আগুনটুকু পাওয়ার আশা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কায়, কষ্টে গৌরবি উদাস নয়নে তাকিয়ে থাকে রেললাইনের দিকে-যে রেললাইন মাতৃহৃদয়কে নিয়ে যায় ছেলের কাছে।

আরো পড়ুন : হলুদ পোড়া গল্পের প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment