স্বাধীনতার অধিকার ১৯-২২ নং ধারা আলোচনা করো
স্বাধীনতার অধিকার ১৯-২২ নং ধারা
আধুনিক যুগে স্বাধীনতার অধিকার গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হিসেবে স্বীকৃত। স্বাধীনতা হল ব্যক্তির এক জন্মগত অধিকার, এ এক চিরন্তন রাজনৈতিক আদর্শ। বস্তুতপক্ষে স্বাধীনতার অধিকার ছাড়া ব্যক্তিসত্তার পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাস্কি-র মতে, স্বাধীনতা বলতে এমন এক পরিবেশের সযত্ন সংরক্ষণকে বোঝায় যেখানে ব্যক্তি তার সত্তার পূর্ণাঙ্গ বিকাশের সুযোগ পায়। ভারতীয় সংবিধানে ১৯-২২ নং ধারার মধ্যে স্বাধীনতার অধিকার ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দের ৪৪তম সংবিধান সংশোধনীর পর বর্তমানে ভারতীয় নাগরিকরা ছয় প্রকার স্বাধীনতার অধিকার ভোগ করতে পারে। ৪৪তম সংবিধান সংশোধনীতে সম্পত্তির অধিকারকে মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানে বর্তমানে ১৯(১) নং ধারায় ছয় প্রকার স্বাধীনতার অধিকার এর উল্লেখ রয়েছে। এই স্বাধীনতার অধিকারগুলি হল-
- বাল্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের অধিকার
- শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার
- সংঘ বা সমিতি গঠনের অধিকার
- ভারতের সর্বত্র চলাফেরা করার অধিকার
- ভারতের যে-কোনো অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বসবাস করার অধিকার
- যে-কোনো বৃত্তি, পেশা গ্রহণের বা ব্যাবসা-বাণিজ্য করার অধিকার।
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, উপরোক্ত অধিকারগুলি কখনোই নিরঙ্কুশ নয়। সুপ্রিমকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি বিজনকুমার মুখোপাধ্যায় এ কে গোপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য মামলায় (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে) মন্তব্য করেন, স্বাধীনতা কখনোই চরম এবং অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। চরম ও অনিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতা থেকে জন্ম নেয় নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা। আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্র যাতে এই স্বাধীনতাগুলির উপর যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে সেই ব্যবস্থা ভারতীয় সংবিধানে করা হয়েছে।
(1) বাকস্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের অধিকার
সংবিধানের ১৯(১) (ক) নং ধারায় বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার স্বীকৃতি লাভ করেছে। গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত হল এই অধিকার। এর ফলে নাগরিকরা নিজস্ব বিবেকবুদ্ধি, মতাদর্শ ও ধ্যানধারণা অনুযায়ী লিখিত বা মৌখিকভাবে স্বাধীন মতামত প্রকাশ করতে পারে। পত্রপত্রিকা, পুস্তক-পুস্তিকা, সংবাদপত্র, সভাসমিতি প্রভৃতির মাধ্যমে মতামত প্রকাশ করা যেতে পারে। মুদ্রণযন্ত্রের স্বাধীনতাকে এই মত প্রকাশের অধিকারের অঙ্গীভূত করা হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে যেমন নাগরিকদের জন্য আলাদাভাবে মুদ্রণযন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছে ভারতের সংবিধানে সেভাবে স্বতন্ত্রভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গণপরিষদের এক বিতর্কে ড. আম্বেদকর মন্তব্য করেছিলেন, মুদ্রণযন্ত্র বা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অধিকার আলাদা করে লিপিবদ্ধ করার প্রয়োজন নেই। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে রমেশ থাপ্পার বনাম মাদ্রাজ রাজ্য মামলায় সুপ্রিমকোর্ট মুদ্রণযন্ত্রের স্বাধীনতাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার অঙ্গীভূত বলে রায় দেয়।
- বাক্স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশের অধিকারের নিয়ন্ত্রণসমূহ : সংবিধানে ঘোষিত এই গুরুত্বপূর্ণ অধিকারটির উপর কতকগুলি যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সেগুলি হল-
- ভারতের সার্বভৌমত্ব ও সংহতি রক্ষা
- রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষা
- বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রক্ষা
- দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখা
- শালীনতা রক্ষা
- আদালতের অবমাননা প্রতিরোধ
- মানহানি প্রতিরোধ
- অপরাধমূলক কাজে প্ররোচনা প্রতিরোধ [১৯(২) নং ধারা]।
(2) শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার
১৯(১)(খ) নং ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার স্বীকার করা হয়েছে। কোনো বিষয় যদি জনস্বার্থ সম্পর্কিত হয় তাহলে সেই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করার জন্য নাগরিকরা জনসমাবেশ আহবান করতে পারে এবং শোভাযাত্রাতেও সামিল হতে পারে।
- শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকারের নিয়ন্ত্রণসমূহ : শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকারের উপর কিছু যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে। এগুলি হল- সভা-সমাবেশ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হবে, নাগরিকদের নিরস্ত্রভাবে সমবেত হতে হবে, জনশৃঙ্খলা এবং সার্বভৌমিকতা ও সংহতির স্বার্থে রাষ্ট্র যে-কোনো সমাবেশের উপর এই বিধিনিষেধগুলি আরোপ করতে পারে। তাছাড়া ষোড়শ সংবিধান-সংশোধনী আইন (১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দ) অনুসারে রাষ্ট্র ভারতের সার্বভৌমিকতা ও সংহতি রক্ষার জন্য প্রয়োজনে এই অধিকারগুলির উপর ‘যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে’ [১৯ (৩) নং ধারা]।
(3) সংঘ বা সমিতি গঠনের অধিকার
১৯(১) (গ) নং ধারা অনুযায়ী ভারতের নাগরিকরা যে-কোনো সংঘ বা সমিতি স্বাধীনভাবে গঠন করতে পারে। সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, খেলাধুলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সংঘ বা সমিতি গঠন করা ছাড়াও রাজনৈতিক দল এবং শ্রমিক সংঘ গঠন এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। অধ্যাপক পাইলি বলেছেন, ‘Infact, freedom of assembly and freedom of speech go hand in hand. ‘
- সংঘ বা সমিতি গঠনের অধিকারের নিয়ন্ত্রণসমূহ: এই অধিকারের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে সংবিধানে বলা হয়েছে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাবিঘ্নকারী, বিশৃঙ্খলাসৃষ্টিকারী এবং নীতি-বিগর্হিত উদ্দেশ্যে গঠিত সংঘ বা সমিতির উপর রাষ্ট্র যুক্তিসংগত নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে। তাছাড়া সংহতি ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নগত ক্ষেত্রে অধিকারটি নিয়ন্ত্রিত হতে পারে [১৯(৪) নং ধারা]। তবে এই বিধিনিষেধগুলিকে বিচার করার ক্ষমতা আদালতের হাতে অর্পিত।
(4) ভারতের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার
১৯(১) (ঘ) নং ধারা অনুযায়ী ভারতের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাচলের অধিকার ভারতীয় নাগরিকদের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। তবে রাষ্ট্র যদি মনে করে তাহলে এই অধিকারটির উপর যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
(5) ভারতের সর্বত্র বসবাসের অধিকার
১৯(১) (ঙ) নং ধারায় ভারতীয় ভূখণ্ডের যে-কোনো অঞ্চলে বসবাস করার অধিকার ভারতীয় নাগরিকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধিকাররূপে স্বীকৃত। এ কে গোপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য মামলায় (১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ) সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি বিজনকুমার মুখোপাধ্যায় এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘এই অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করে সংবিধান যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চায় তা হল সমগ্র ভারতবর্ষ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বিভক্ত হওয়া সত্ত্বেও আসলে ভারত হল এক অখণ্ড সত্তা, বিশেষত তার নাগরিকদের কাছে’ (‘What the Constitution emphasises upon by guaranteeing these rights is that the whole of India in spite of its being divided into a number of state is really one unit so far as the citizens are concerned.’) I
তবে জনস্বার্থে এবং তপশিলি উপজাতিদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র এই অধিকারটির উপর যুক্তিসংগত বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে [১৯(৫) নং ধারা]।
(6) বৃত্তি, পেশা বা ব্যাবসাবাণিজ্যের অধিকার
১৯(১) (ছ) নং ধারা অনুযায়ী যে-কোনো বৃত্তি, পেশা বা ব্যাবসাবাণিজ্যের অধিকার প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এই অধিকারটিও কিছু কিছু বিধিনিষেধের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। যেমন, জনস্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজন হলে রাষ্ট্র উপযুক্ত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন বৃত্তির ক্ষেত্রে কর্মীদের যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষমতা রাষ্ট্রের আছে (১৯(৬) নং ধারা]। তবে এই বিধিনিষেধগুলি যুক্তিসংগত কি না তা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের উপর অর্পিত হয়েছে। আদালত যদি বিচার করে দেখে অধিকারগুলির উপর অযৌক্তিকভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে তাহলে আদালত সংশ্লিষ্ট আইন বা তার যে-কোনো অংশকে সংবিধানবিরোধী বলে বাতিল করে দিতে পারে।
(7) ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে দেখা যায়, সংবিধানের ১৯(১) নং ধারাটির মাধ্যমে একদিকে যেমন স্বাধীনতার মূল্যবান অধিকারগুলি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তেমনই ১৯(১)-(৬) নং ধারার অধিকারগুলির উপর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে সংবিধানে বলা হয়েছে, এই বিধিনিষেধগুলি যুক্তিসংগত হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে এ কে গোপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য মামলার রায়দানকালে বিচারপতি মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, স্বাধীনতা কখনোই চরম বা অনিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। এই ধরনের স্বাধীনতা সমাজের পক্ষে বিপজ্জনক এবং তা নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করে। ব্যক্তি এবং সমাজের পরস্পরবিরোধী স্বার্থের মধ্যে সমন্বয়সাধন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সাধারণভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের জীবনকে স্বাধীনভাবে পরিচালনা করার অধিকার ভোগ করে।
অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি কীভাবে তার নিজের জীবন পরিচালনা করবে সেটি তার একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কোনো ব্যক্তি কোথায় বসবাস করবে, কোথায় যাবে, কোন্ ধরনের বৃত্তি বা পেশা গ্রহণ করবে ইত্যাদি নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা ভোগ করে। অন্যদিকে বলা যেতে পারে, প্রত্যেক ব্যক্তি যাতে স্বাধীনতার অধিকারগুলি ভোগ করতে পারে সেই জন্য অধিকারগুলির উপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এইভাবে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে ভারতীয় সংবিধান সামঞ্জস্যবিধানের চেষ্টা করেছে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে, স্বাধীনতাগুলির উপর আইনকর্তৃক কিছু বিধিনিষেধ আরোপিত হয়েছে। এই বিধিনিষেধগুলি বিচার করে দেখার ক্ষমতা আদালতের উপর অর্পিত হয়েছে। যুক্তি সংগতভাবে বিধিনিষেধ আরোপিত হয়নি মনে করলে আদালত তা বাতিল করে দিতে পারে (কুরেশি বনাম বিহার রাজ্য, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দ)। ভারতের সুপ্রিমকোর্টের মতে কোনো বিধিনিষেধ যুক্তিসংগত বলে তখনই বিবেচিত হবে যখন তা ব্যক্তিগত অধিকার ও সামাজিক অধিকারের মধ্যে সামঞ্জস্যবিধান করতে পারবে (চিন্তামণি রাও বনাম মধ্যপ্রদেশ রাজ্য, ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ)।
এ প্রসঙ্গে দূর্গাদাস বসুর অভিমত হল, বিধিনিষেধকে শুধু যথোচিত হলেই চলবে না, সেইসঙ্গে বিধিনিষেধ আরোপ পদ্ধতিকে ন্যায়সংগত ও যথার্থ হতে হবে। তাঁর ভাষায় “যুক্তি সংগত বিধিনিষেধ বলতে বোঝায় এমন এক বিধিনিষেধ, যা স্বাধীনতা ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যে একটা ভারসাম্যের ব্যবস্থা করে” (“The expression, reasonable restriction, seeks to strike a balance between the freedom…and social control.”) ।
(8) দোষী সাব্যস্ত ও শাস্তিদান সম্পর্কিত ব্যবস্থাবলি
ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের অধিকারগুলি যাতে আরও যথার্থভাবে সংরক্ষিত হয় সেইজন্য আরও কতকগুলি ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে। ২০ নং ধারানুযায়ী বলা যায়, কোনো অপরাধের জন্য নাগরিককে বেআইনি শাস্তি প্রদানের হাত থেকে রক্ষা করা হবে।
দ্বিতীয়ত, ২০(১) নং ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তিকে কোনো অপরাধ করার জন্য অভিযুক্ত করা হলে, যে সময়ে ওই কাজটি ঘটেছিল সেই সময়ের প্রচলিত আইন ভঙ্গের জন্য উক্ত ব্যক্তি অপরাধী না হলে তাকে দোষী বিবেচিত করা যাবে না। অপরাধ যে সময়ে ঘটেছে সেই সময়কার প্রচলিত আইন অনুযায়ী ঠিক যতটা শাস্তি দেওয়া যায় তার অধিক শাস্তি দেওয়া চলবে না। তাছাড়া পরবর্তীকালে নতুন আইন তৈরি করে আগে সংঘটিত কোনো অপরাধকে গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ বলে চিহ্নিত করা যাবে না।
তৃতীয়ত, ২০ (২) নং ধারা অনুসারে, একই অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার শাস্তি দেওয়া যাবে না। কোনো আইন যদি একই অপরাধের জন্য কোনো ব্যক্তিকে একাধিকবার শাস্তি প্রদান করে তাহলে সেই আইনটি সংবিধান বিরোধী বলে বাতিল হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে একটা কথা উল্লেখ্য যে, যে-কোনো সরকারি বা বেসরকারি কর্মচারী কোনো অপরাধের জন্য একবার শাস্তি লাভের পরেও যদি তার করা অপরাধের জন্য, সে তার কর্তৃপক্ষের দ্বারা দ্বিতীয়বার শাস্তি লাভ করে সেক্ষেত্রে সেই কর্তৃপক্ষের কাজ সংবিধান বিরোধী বলে বিবেচিত হবে না।
চতুর্থত, ২০(৩) নং ধারা অনুসারে, কোনো ব্যক্তিকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদানে বাধ্য করা যাবে না।
(9) জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার
সংবিধানের ২১ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, (Procedure established by law) আইননির্দিষ্ট পদ্ধতি ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে তার জীবন ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। এই ধারায় ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে সংবিধানের ২১ নং ধারার পরিধিতে মৃত্যুদণ্ড অন্তর্ভুক্ত নয়। দূর্গাদাস বসু মনে করেন যে, সংবিধানে উল্লিখিত ২১ নং ধারাটি শাসন বিভাগের স্বেচ্ছাচারী (Arbitrary) বা বেআইনি (Illegal) ক্রিয়াকলাপের বিরুদ্ধে ব্যক্তিকে রক্ষা করলেও এটি আইন বিভাগের আধিপত্যের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ বলে গণ্য হয় না।
- ব্যক্তিস্বাধীনতার অর্থ ও প্রকৃতি: ২১ নং ধারায় ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আইননির্দিষ্ট পদ্ধতির বর্ণনা আছে। তবে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও আইননির্দিষ্ট পদ্ধতির অর্থ ও প্রকৃতি নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ আছে এবং এ সম্পর্কে আজ অবধি কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অর্থ সংকীর্ণ ও ব্যাপক দুপ্রকারেরই হতে পারে। প্রথমদিকে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট ব্যাপক অর্থে ব্যক্তিস্বাধীনতাকে গ্রহণ করতে চায়নি। পরবর্তীতে সুপ্রিমকোর্ট কিছুটা হলেও ব্যাপক অর্থে ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা কথাটিকে ব্যাখ্যা করতে শুরু করে। ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে মানেকা গাধি বনাম ভারত ইউনিয়ন মামলার রায়প্রদানকালে সুপ্রিমকোর্ট ঘোষণা করে যে, ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার ১৯ নং ধারায় যে অধিকারগুলির বর্ণনা রয়েছে সেই অধিকারগুলির সঙ্গে সম্পর্কহীন নয় বরং একটি অন্যটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাই বলা যায়, ব্যক্তিস্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে আইননির্দিষ্ট পদ্ধতির যৌক্তিকতা বিচারের ক্ষমতা আদালতের রয়েছে।
- আইনের যথাবিহিত পদ্ধতির অর্থ ও প্রকৃতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ‘আইনের যথাবিহিত পদ্ধতির’ উল্লেখ রয়েছে। মার্কিন সংবিধান প্রণেতাগণ আইনের যথাবিহিত পদ্ধতির দ্বারা অনুপ্রাণিত না হয়ে জাপানি সংবিধানের ৩১ নং ধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁরা ৩১ নং ধারার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ‘আইন-নির্দিষ্ট পদ্ধতির’ ব্যবস্থাকে সংবিধানে স্থান দিয়েছিলেন। এখন প্রশ্ন হল- ‘আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি’ এবং ‘আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতির’ মধ্যে পার্থক্য কী? সেক্ষেত্রে বলা যায়, ‘আইনের যথাবিহিত পদ্ধতি’ অনুযায়ী মার্কিন সুপ্রিমকোর্ট বিচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে দেখেন যে আইনটি যথাযথ পদ্ধতি অনুসারে প্রণীত হয়েছে কি না। শুধু তাই নয়, আইনটি ন্যায়নীতিবোধ (‘Principle of Natural Justice’)-এর বিরোধী কি না সেটিও বিচার করে। অন্যভাবে বলা যায়, কোনো আইন ন্যায়সংগত বা যুক্তিসংগত কি না তার বিচারকার্যগত ক্ষমতা মার্কিন সুপ্রিমকোর্টের রয়েছে।
- আইননির্দিষ্ট পদ্ধতির অর্থ ও প্রকৃতি : ‘আইননির্দিষ্ট পদ্ধতি’ অনুযায়ী আদালত কোনো আইন ন্যায়নীতিবোধ বিরোধী কি না অর্থাৎ আইনের গুণাগুণ, তা বিচার করতে পারে না। আইননির্দিষ্ট পদ্ধতি বলতে বোঝায়, যে আইন অনুযায়ী ব্যক্তিস্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হবে সেই আইনটি বিধিসম্মতভাবে আইনসভা কর্তৃক প্রণীত কি না তা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের থাকবে। ভারতীয় সংবিধানের বর্ণিত আইননির্দিষ্ট পদ্ধতির প্রকৃতির ব্যাখ্যা প্রদানকালে এ কে গোপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য মামলায় এই কথাগুলিকে সুপ্রিমকোর্ট সংকীর্ণ অর্থে প্রয়োগ করেছিলেন। এই মামলার রায়ে সুপ্রিমকোর্টের অধিকাংশ বিচারপতি বলেছিলেন, সংবিধানের ২১ নং ধারায় ‘আইননির্দিষ্ট পদ্ধতি’-এই কথাগুলি লিপিভুক্ত করার মধ্য দিয়ে ভারতের সংবিধান ব্যক্তিগত স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনের ‘যথাবিহিত’ পদ্ধতি অনুসরণের বদলে ‘ব্যক্তিস্বাধীনতা’ সম্পর্কিত ব্রিটিশ ধারণাকে স্বীকার করেছে। অন্যভাবে বলা যায়, ভারতীয় সংবিধান বিচারবিভাগের প্রাধান্যের পরিবর্তে পার্লামেন্টের সার্বভৌমিকতাকেই স্বীকার করে নিয়েছে। তাই কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে কি না তা দেখার ক্ষমতা আদালতের উপর ন্যাস্ত করা হয়েছে। এ কে গোপালন মামলায় আইন নির্দিষ্ট পদ্ধতিকে যেভাবে সংকীর্ণ অর্থে গ্রহণ করা হয়েছে মানেকা গালি মামলায় (১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দ) সুপ্রিমকোর্ট ততটা সংকীর্ণ অর্থে আইননির্দিষ্ট পদ্ধতির ধারণাকে গ্রহণ করতে সম্মত হননি। এই মামলার রায় অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্ট বলেছিল যে, ‘আইননির্দিষ্ট পদ্ধতির যৌক্তিকতা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে’। সাম্প্রতিককালের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট কোনো জনস্বার্থবাহী মামলার (Public Interest Litigattion বা PIL) রায় প্রদানকালে কোনো আইন ন্যায়নীতিবোধের বিরোধী কি না তা বিচার করে।
- শিক্ষার অধিকার: ২১(ক) নং ধারাটি ২০০২ সালে ৮৬ তম সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে স্থান পায়। এই ধারায় শিক্ষার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে বিবেচ্য। এই ধারা অনুযায়ী বলা যায়, ৬-১৪ বছর বয়স্ক শিশুদের জন্য রাষ্ট্র অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করবে। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষাকেই মৌলিক অধিকারের আওতায় আনা হয়েছে, উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত শিক্ষাকে নয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়, উন্নিকৃয়াণ বনাম অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্য মামলায় (১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ) সুপ্রিমকোর্ট যে রায় দিয়েছিল তা হল- শিক্ষার অধিকার হল জীবনের অধিকার এবং শিক্ষার অধিকার জীবনের অধিকারের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই রায় ঘোষণা করার পরেই তৎকালীন যুক্তফ্রন্ট সরকার উদ্যোগ নেয় এবং শিক্ষার অধিকারকে মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য রাজ্যসভায় ৮৩ তম সংবিধান সংশোধনী বিল পেশ করে। সংশ্লিষ্ট বিলে ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স্ক সকল শিশুর শিক্ষালাভের অধিকার সুরক্ষিত করতে এবং শিক্ষালাভের অধিকারকে মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে উন্নীত করতে ২১(ক) নং একটি ধারা সংবিধানে সন্নিবিষ্ট করার কথা বলা হয়। বহু টালবাহানার পরে বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন পূর্বতন জোট সরকার ওই বিষয়ে ৯৩তম সংশোধনী বিল পার্লামেন্টে উত্থাপন করে এবং অবশেষে ২০০২ সালে সেটি ৮৬ তম সংবিধান সংশোধনী আইন হিসেবে গৃহীত হলে শিক্ষার অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে মর্যাদা লাভ করে। ২০০৯ সালে শিক্ষার অধিকার আইন (Right to Education Act, 2009) প্রণীত হয়। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে আইনটিকে কার্যকর করে কেন্দ্রীয় সরকার এবং সেই নির্দেশনা রাজ্যগুলিকেও দেওয়া হয়।
- গোপনীয়তার অধিকার: ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ২১ (গ) নং ধারায় (Puttuswamy vs Union of India) সুপিমকোর্ট নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার (Right to privacy)-কে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করে। এই রায়ে সুপ্রিমকোর্ট জানায়, জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারের সঙ্গে নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের আধার কার্ডে তথ্য ফাঁস হওয়া নিয়ে এক মামলায় সুপ্রিমকোর্ট এই রায় দেয়।
(10) গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কিত ব্যবস্থাবলি
সংবিধানের ২২ নং ধারায় স্বেচ্ছাচার ও অবৈধভাবে গ্রেফতার এবং আটকের বিরুদ্ধে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
- ২২(১) নং ধারায় আটক ব্যক্তিকে তার পছন্দমতো আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করার এবং আইনজীবীর দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার প্রদান করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তিকে শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে আটক করা যাবে না।
- ২২(২) নং ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটতম ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে হাজির করতে হবে।
- ২২(৩) নং ধারানুসারে, নিবর্তনমূলক আটক আইনে ধৃত ব্যক্তি ও শত্রুভাবাপন্ন বিদেশিদের ক্ষেত্রে ২২(১) ও ২২(২) নং ধারায় উল্লিখিত নিয়মগুলি প্রযোজ্য হবে না।
(11) নিবর্তনমূলক আটক-এর অর্থ ও প্রকৃতি
নির্বতনমূলক আটক আইন বলতে বোঝায় কোনো ব্যক্তি যদি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে থাকে, অথবা কোনো ব্যক্তি যদি ভবিষ্যতে অপরাধ করতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সরকার বিনা বিচারে গ্রেফতার করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারকে কোনো আটক জনিত কারণ দেখাতে হয় না। পার্লামেন্ট এবং রাজ্য আইনসভাগুলি যে-সমস্ত উদ্দেশ্যে ‘নিবর্তনমূলক আটক আইন’ প্রণয়ন করতে পারে সেগুলি হল-জনশৃঙ্খলা, ভারতের প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয়, দেশের অথবা কোনো অঙ্গরাজ্যের নিরাপত্তা অত্যাবশ্যক দ্রব্যসামগ্রীর সরবরাহের ব্যবস্থা প্রভৃতি।
সংবিধানের ২২(৪)-(৭) নং ধারাগুলি অনুসারে বলা যায়, কোনো ব্যক্তিকে ৩ মাসের বেশি বিনা বিচারে আটক করে রাখা যাবে না। যদি ক্ষেত্রবিশেষে ৩ মাসের বেশি আটক করে রাখতে হয় সেক্ষেত্রে একটি উপদেষ্টা পর্ষদ-এর অনুমতি প্রয়োজন। উপদেষ্টা পর্ষদটি হাইকোর্টের কর্মরত কিংবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অথবা অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন একাধিক ব্যক্তিকে নিয়ে গঠিত হবে। তবে পার্লামেন্ট দ্বারা এরূপ আটকের সর্বাধিক মেয়াদ স্থিরীকৃত হয়।
- নিবর্তনমূলক আটক আইনের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ব্যবস্থা : সরকারি কর্তৃপক্ষ যাতে যথেচ্ছহারে এই নিবর্তনমূলক আটক আইনকে প্রয়োগ করতে না পারে, তার জন্য আটককারী কর্তৃপক্ষ যতদ্রুত সম্ভব আটক ব্যক্তিকে তার আটকের কারণ জানাবে [২২(৫) নং ধারা]। তবে কর্তৃপক্ষ যদি আটকের কারণ জনস্বার্থের কথা মাথায় রেখে প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক হয়, সেক্ষেত্রে আটককারী ব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষ আটকের কারণ জানাতে বাধ্য নয় [২২(৬) নং ধারা]।
- নিবর্তনমূলক আটক আইনের ক্ষেত্রে আদালতের ভূমিকা: কোনো ব্যক্তিকে যদি নিবর্তনমূলক আটক আইনের ভিত্তিতে আটক করা হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি বন্দি প্রত্যক্ষীকরণ (৩২ ও ২২৬ নং ধারা)-এর দাবিতে যথাক্রমে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের কাছে আবেদন করতে পারে। এক্ষেত্রে আদালত যেসকল বিষয়ে বিচারবিবেচনা করে সেগুলি হল- যে আইনের দ্বারা আটক করা হয়েছে সেই আইনের বৈধতা, আইনকর্তৃক নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে আটক করা হয়েছে কি না, আটকের পশ্চাতে যেসব কারণ কর্তৃপক্ষ প্রদর্শন করেছেন সেসকল কারণের বৈধতা আছে কি না, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্তৃপক্ষ আটককারী ব্যক্তিকে আটকের প্রাথমিক কারণ দেখিয়েছেন কি না এবং আটককারী কর্তৃপক্ষের আটকের প্রকৃত ক্ষমতা আছে কি না। উপরে বর্ণিত কারণগুলি বিচারবিবেচনা করে যদি আদালত সন্তুষ্ট না হয়, সেক্ষেত্রে আদালত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
- ভারতে নিবর্তনমূলক আটক আইন: ভারতে নিবর্তনমূলক আটক আইন (Preventive Detertion Act) ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে পাস হয় এবং অনেকবার সংশোধনের পর ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই আইন চালু ছিল। বর্তমান ভারতে ‘কোফেপোসা’ (‘COFEPOSA’-Conservation of Foreign Exchange and Prevention of Smuggling Activities Act, 1974), ‘নাসা’ (‘NASA’-National Security Act, 1980), ‘এসমা’ (‘ESMA’-Essential Services Maintenance Act, 1981), ‘বেআইনি কার্যকলাপ সংশোধনী আইন’ [‘UAPAA’-Unlawful Activities (Prevention) Amendment Act, 2008] প্রভৃতি আটক আইনের উপস্থিতি লক্ষণীয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ২০০০ সালে ড. মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বাধীন সরকার ‘সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ আইন’ বা ‘পোটা’ (POTA- Prevention of Terrorism Act, 2002) ও ‘টাডা’ (TADA-Terrorist and Disruptive Activities Prevention Act, 1987 and its amendment in 1993) আইনগুলি বাতিল ঘোষণা করে দেয়। তবে অতীতে প্রণীত ‘বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনটি’ [The Unlawful Activities (Prevention) Act-UAPA] সংশোধিত হওয়ার মধ্য দিয়েই সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার মনে করে।
মূল্যায়ন
ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত স্বাধীনতার অধিকার নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে লেখকরা বলেছেন, ধনবৈষম্যমূলক সমাজব্যবস্থা থাকার জন্য ভারতে স্বাধীনতার অধিকারের সার্থক রূপায়ণ সম্ভব নয়। নিবর্তনমূলক আটক আইনের প্রকৃতি অগণতান্ত্রিক এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার বিরোধী। পাইলি যথার্থই বলেছেন, ন্যায্যতার বিষয়টি যাই হোক-না-কেন, বিধিবদ্ধ আইনের গ্রন্থে যতদিন পর্যন্ত ‘নিবর্তনমূলক আটক আইন’ বিষয়টি থাকবে, ততদিন ভারতীয় গণতন্ত্রের মুখে একটি অশোভন দাগ থেকে যাবে (Whatever be the justification, so long as the Preventive Detention Act remains on the Statute Book there will also remain an unseemly spot on the fair face of democracy in India.) I
আসলে স্বাধীনতার অধিকারের সাফল্যের জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন জনগণের সচেতনতা, বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা এবং জনকল্যাণকামী শাসনব্যবস্থা।
Also Read – The Garden Party questions and answers