গিরিশচন্দ্র ঘোষের নাট্যকৃতিত্ব আলোচনা করো
ভূমিকা: উনিশ শতকের শেষভাগের বাংলা নাটকে নাট্যকার, অভিনেতা, সংগঠক, পরিচালক হিসেবে যে নাট্যব্যক্তিত্ব সর্বাধিক শ্রদ্ধার আসন অধিকার করে আছেন; তিনি গিরিশচন্দ্র ঘোষ। তিনি পঁচাত্তরটি সম্পূর্ণ ও চারটি অসম্পূর্ণ নাটক রচনা করেন।
নাট্যসম্ভার
গীতিনাট্য: তাঁর প্রথম দুটি গীতিনাট্য ‘আগমনী’ ও ‘অকালবোধন’। এরপর তিনি লিখলেন ‘দোললীলা’ (১৮৭৮), ‘মায়াতরু’ ও ‘মোহিনী প্রতিমা’। যদিও তেমন নাট্যগুণ না থাকায় এগুলির অভিনয় হয়নি।
পৌরাণিক নাটক: পুরাণকথার উপর নির্ভর করে লেখা তাঁর কয়েকটি নাটক হল- ‘অভিমন্যু বধ’, ‘রাবণবধ’, ‘রামের বনবাস’, ‘সীতাহরণ’, ‘পাণ্ডবের অজ্ঞাতবাস’, ‘জনা’, ‘পাণ্ডব গৌরব’ প্রভৃতি। ‘জনা’ তাঁর শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক। তাঁর লেখা ‘চৈতন্যলীলা’ ও ‘বিল্বমঙ্গল’ ভক্তিরসের নাটক হিসেবে দর্শকদের মনোরঞ্জন করেছে।
ঐতিহাসিক নাটক: তাঁর স্বদেশপ্রীতি তথা রাজনৈতিক চেতনার প্রকাশ মেলে ঐতিহাসিক নাটকে। এ প্রসঙ্গে ‘সিরাজদ্দৌল্লা’, ‘মীরকাশিম’, ‘ছত্রপতি শিবাজী’, ‘অশোক’ প্রভৃতি নাটকের নাম করা যায়।
পারিবারিক ও সামাজিক নাটক: পারিবারিক জীবন নিয়ে লেখা তাঁর শ্রেষ্ঠ নাটক ‘প্রফুল্ল’। এ ছাড়া ‘বলিদান’, ‘হারানিধি’, ‘মায়াবসান’প্রভৃতি নাটকে সমকালের অস্থিরতা, যুগজীবনের সংকট, সমাজ প্রতিবেশের চিত্র আঁকা হয়েছে। ‘প্রফুল্ল’ নাটকেই তাঁর প্রতিভার শ্রেষ্ঠত্ব ধরা পড়ে। কিন্তু অনেক সমালোচকের মতে, করুণরস ঘনীভূত হলেও এই নাটক যথার্থ ট্র্যাজেডি হয়নি।
রঙ্গব্যঙ্গের নাটিকা ও প্রহসন: গিরিশ ঘোষ প্রহসনধর্মী রঙ্গব্যঙ্গের নাটিকাও লিখেছেন। এগুলি হল- ‘সপ্তমীতে বিসর্জন’, ‘বেল্লিক বাজার’, ‘সভ্যতার পান্ডা’, ‘বড়দিনের বখশিস’, ‘য্যায়সা কি ত্যায়সা’ প্রভৃতি। প্রহসনগুলি মজাদার হলেও এতে রুচিহীনতার পরিচয় নাটকের নাট্যগুণ নষ্ট করেছে।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা