দীনবন্ধু মিত্রের কমেডি বা প্রহসনগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভূমিকা: বাংলা নাটকের ইতিহাসে মধুসূদন দত্ত সমকালীন সমাজের ব্যভিচার, অনাচারকে বিদ্রুপ করে প্রহসন রচনার যে ধারা প্রতিষ্ঠা করেন, দীনবন্ধু মিত্র সেই ধারার এক সফল উত্তরসাধক।
প্রহসনসমূহ: সমষ্টির নৈতিক অধঃপতন যে সামাজিক ব্যাধির জন্ম দিয়েছিল তাকে ব্যঙ্গে-বিদ্রূপে বিদ্ধ করে, দীনবন্ধু মিত্র তিনটি হাস্যরসাত্মক নাটক তথা প্রহসন রচনা করেন। এগুলি হল- ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’, ‘সধবার একাদশী’, ‘জামাই বারিক’।
‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ (১৮৬৬): এক বিপত্নীক বৃদ্ধ রাজীবলোচন গোপনে অসহায় বালিকাকে বিবাহ করতে গিয়ে পাড়ার মানুষের হাতে কীভাবে নাকাল হয়েছিলেন তার কৌতুকময় বর্ণনা এই প্রহসনের উপজীব্য।
‘সধবার একাদশী’ (১৮৬৬): দীনবন্ধু মিত্রের জনপ্রিয় এই প্রহসনে সমকালীন সময়ের উঠতি ধনী শ্রেণির মাদকাসক্তি, চারিত্রিক স্খলন, মূল্যবোধের পতনকে নির্দেশ করা হয়েছে। অটল, কেনারাম ডেপুটি, ভোলানাথ চরিত্রগুলি জীবন্ত রেখায় চিত্রিত হলেও তাঁর রচিত নিমচাঁদ চরিত্রটি কপটতা, খল মানসিকতা, ব্যঙ্গের তীব্রতার আড়ালে সূক্ষ্ম বিবেকদংশনে সকলকে ছাপিয়ে সেই যুগসন্ধির সময়ের এক প্রতিনিধিমূলক চরিত্রে পরিণত হয়েছে।
‘জামাই বারিক’ (১৮৭২): বহুবিবাহের লাঞ্ছনা, ঘরজামাই পদ্মলোচনের জীবনকে কীভাবে দুর্বিষহ করে তুলেছিল তার বর্ণনা ‘জামাই বারিক’ নাটকে রূপায়িত হয়েছে। স্বপত্নী-কোন্দল, হাস্যকৌতুকের সমাবেশ, নানা অসংগতিপূর্ণ ঘটনার সংযোজনে এই নাটক উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
কৃতিত্ব: হাস্যরস হল প্রহসনের প্রাণ এবং সমাজশোধন হল তার উদ্দেশ্য। দীনবন্ধুর উদ্দেশ্য ছিল হাস্যরস সৃষ্টি করা-আঘাত করা নয়। তাই পূর্ববঙ্গের ভাষা আয়ত্ত করে ‘সধবার একাদশী’-র রামমাণিক্য চরিত্রটি তিনি সৃষ্টি করেছিলেন। এর অনুকরণে পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের অনেক চরিত্র রচিত হয়। সুতরাং, প্রহসন রচনায় তাঁর দক্ষতা ছিল সুদূরপ্রসারী।
আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা