হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা প্রবন্ধ রচনা

হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা প্রবন্ধ রচনা
হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। আর এই সমাজের বাঁধাধরা গোষ্ঠীর মধ্যে ক্রমাগত সে চাকার মতো ঘুরতে থাকে। বর্তমানে এই আধুনিক জীবন মানুষকে আরও যন্ত্রে পরিণত করেছে। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে প্রতিটি মানুষকেই ভীষণভাবে ব্যস্ত থাকতে হয় প্রতি মুহূর্তে। তবে এই একঘেয়ে জীবনে মানুষ হয়ে পড়ে ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। তার ক্লান্ত মন চায় একটু অবকাশ, খোলা হাওয়া। নিজের মতো করে কোনো সুদূরে হারিয়ে যেতে চায় তার মন। মানুষ মানসিকভাবে তার পরিচিত বা অপরিচিত জগতে হারিয়ে গিয়ে নতুন সৃষ্টির আনন্দে মেতে ওঠে।

হারিয়ে যাওয়ার রকমফের

হারিয়ে যাওয়া বহু রকমের হয়। আক্ষরিক অর্থে হারিয়ে যাওয়া নেতিবাচক শব্দ। আমরা প্রতিদিন অনেক মানুষকে হারিয়ে যেতে দেখি। কত মানুষের জীবন হারিয়ে যায় মৃত্যুর অন্ধকারে, স্বপ্ন হারিয়ে যায় বাস্তবের কঠিন পথে। তাই বলে অন্ধকার মানুষের জীবনের শেষ কথা নয়। তাই হতাশার অন্ধকারে দিশেহারা মানুষ আবার জীবনকে ফিরে পেতে মনে মনে নতুন করে পথ হারায় আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে। তাই তো কবি বলেছেন-“কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে!! মেলে দিলেম গানের সুরের এই ডানা মনে মনে।”

শারীরিক ও মানসিকভাবে হারিয়ে যাওয়া

দৈনন্দিন কর্মব্যস্ত জীবন থেকে ক্লান্ত মন ছুটি খোঁজে। কিন্তু সবসময় এই ছুটি পাওয়া যায় না। তাই মন তখন হারিয়ে যেতে চায় ‘মনে মনে’। মানুষ ক্লান্ত মনে পাড়ি দেয় তার স্বপ্নের জগতে। নিজের সঙ্গে নিজের মতো সময় কাটিয়ে আবার ফিরে আসে বাস্তবের দুনিয়ায়। গতানুগতিক জীবনে আসে নতুনত্বের ছোঁয়া।

হারানোতে নেই কোনো বাধাবন্ধন। মনের ডানায় ভর করে সুদূরে বিলীন হতে চায় মন পাখি। কিন্তু তাকে ফিরে আসতে হয় বাস্তবের মাটিতে। ইহজাগতিক জীবনযাপনের প্রয়োজনেই এই ফিরে আসা জরুরি।

বাস্তবের রূঢ় আঘাতে কেউ কেউ নিজেকে এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে নিতে চায়। কিন্তু এটা কাপুরুষতার নামান্তর। মানুষের জীবনে দুঃখ-জরা-ব্যাধি আসবেই। আর এই সবকিছুকেই জয় করে বাঁচতে হবে। নিজেকে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে।

নতুনত্বের খোঁজে হারানো

মাঝে মাঝে নতুনত্বের খোঁজে হারিয়ে গেলে গতানুগতিক জীবনচর্চার একঘেয়েমি দূর হয়। এর ফলে অবসরের মুহূর্তে মানুষ নতুন এক জীবনের প্রত্যয়কে খুঁজে পায়। তার মানসিক ও আত্মিক জগতের বিস্তার ঘটে। প্রথাবদ্ধ জীবন থেকে বেরিয়ে এসে বৃহত্তর জীবনের সান্নিধ্যে যাওয়ার যে অভিজ্ঞতা তা অর্জিত হয় হারিয়ে যাওয়ার মধ্যে।

কাজের মধ্যে হারানো ও কল্পনায় হারানো

আধুনিক যন্ত্রসভ্যতায় মানুষ ক্রমশ গতিশীল হয়ে পড়ছে। জীবন এখন অনেকটাই দ্রুত, আর এর জন্য নিজেকে করে তুলতে হয় যুগোপযোগী। এই কাজে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের দায়িত্ব থাকে। যে পরিবারে মানুষ বেড়ে ওঠে সেই পরিবারের গুরুদায়িত্ব অতি যত্নে লালিত করার, সময়ের সঙ্গে তাল মেলানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হয়। নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। সামাজিক জীবনযাপনকেও উদার সংস্কারমুক্ত করার কাজে যত্নবান হতে হয়।

যন্ত্রসভ্যতার দমবন্ধ করা পীড়নে মানুষ আজ দিশেহারা, আর এই কারণেই নির্মল আনন্দও আজ উধাও। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে কাজ করে যেতে হয়। এই কাজে নিমগ্ন থাকতে থাকতে একসময় মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসে। আর তখন প্রয়োজন সেই কর্মময় জীবন থেকে সাময়িকভাবে ছুটি নিয়ে অবসর বিনোদনের মধ্যে ডুব দেওয়া। তার সেই অবসরটুকুকে সে ভরিয়ে তোলে নিজের শখ-শৌখিনতা দিয়ে। হারিয়ে যায় নিজের ভালো লাগার জগতে। কেউ হারিয়ে যায় রং-তুলির আঁচড়ে, কেউ-বা বইয়ের পাতায়, কেউ নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চায় প্রকৃতির কোলে। আর এই হারিয়ে যাওয়া থেকেই জন্ম নিয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন শিল্পকর্মগুলি। জীবনকে আরও ব্যাপক তাৎপর্যে উপলব্ধি করতে চাইলে হারিয়ে যাওয়া যেন বাধ্যতামূলক।

জীবন থেকে জীবনের মাঝে হারানো

এই হারিয়ে যাওয়া জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া নয়, জীবনকে আরও গভীরভাবে বোঝার জন্য প্রয়োজন হারিয়ে যাওয়া। তাই নেতিবাচক অর্থে নয়, ‘হারিয়ে যাওয়া’ আসলে বৃহত্তর অর্থে এক ইতিবাচক প্রকাশ। তাই আমাদের হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা।

উপসংহার

মানুষের মন নতুনের পিয়াসি। তাই প্রতি মুহূর্তে সেই মন চায় হারিয়ে যেতে বাধাবন্ধনহীন খোলা আকাশে। বিশ্বের সকল প্রাণের সঙ্গে প্রাণ মিলিয়ে মানুষ নিজেকে হারানোর নেশায় মেতে ওঠে। হারানোর মাঝে আমরা ‘আপন আমি’-র কাছে ধরা দিই। কবির ভাষায় “আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,/আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে।।”

আরও পড়ুন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment