নিসর্গসৌন্দর্যের কবি জীবনানন্দ দাশ-আলোচনা করো
কাব্যগ্রন্থসমূহ: কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় নানা আঙ্গিকে প্রকৃতির বর্ণনা পরিস্ফুট হয়েছে। জীবনানন্দের প্রথম কাব্যসংকলন ‘ঝরা পালক’ (১৯২৭) থেকে সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১)-তে রয়েছে নিসর্গ বা প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যবর্ণনা। জীবনানন্দের পরবর্তী গ্রন্থ ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’-তে কবিপ্রকৃতির সঙ্গে মানবজীবনের কঠিন ও কোমল অনুভূতির মিশ্রণ ঘটেছে। ‘বনলতা সেন’ ও ‘রূপসী বাংলা’ কাব্যে প্রেম, প্রকৃতি, ইতিহাস ও মৃত্যুচেতনা এক হয়ে গিয়েছে। ‘মহাপৃথিবী’, ‘সাতটি তারার তিমির’ ও ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ গ্রন্থে কবির প্রকৃতিচেতনার মধ্য দিয়ে প্রধানত মানবসভ্যতা ও মানুষের তীব্র নৈরাশ্যবোধকে অতিক্রম করার প্রয়াস লক্ষ করা যায়।
কাব্যবৈশিষ্ট্য: ‘ঝরা পালক’ কাব্যগ্রন্থে কবি প্রকৃতির এক অপরূপ জগৎ নির্মাণ করেছেন। গ্রীষ্মের কালবৈশাখী, ডাহুকি পাখির আকুল গান কিংবা বর্ষায় ‘বকের পাখার ভিড়ে বাদলের গোধূলি আঁধারে’র অত্যন্ত পরিচিত দৃশ্য এ কাব্যে রয়েছে। প্রকৃতির বিভিন্ন রঙিন চিত্রগুলি ঋতুর অনুষঙ্গে ‘রূপসী বাংলা’র বিভিন্ন কবিতায় তুলে ধরেছেন কবি। এই কাব্যগ্রন্থের ৩ নং কবিতায় কবি তাই লেখেন- “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর”।
‘ঝরা পালক’, ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’, ‘রূপসী বাংলা’, ‘বনলতা সেন’ – প্রভৃতি কাব্যে যেমন রয়েছে প্রকৃতির রমণীয় সৌন্দর্য তেমনই ‘মহাপৃথিবী’, ‘সাতটি তারার তিমির’, ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থগুলিতে রয়েছে বন্যপ্রকৃতি, ঋতুময়তা, ক্লান্ত পৃথিবীর নানা প্রসঙ্গ; কারণ জীবনানন্দের এই কাব্যগ্রন্থগুলি ধ্বংসাত্মক দুই বিশ্বযুদ্ধ সমকালীন পরিস্থিতিতে লেখা হয়েছে। ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যগ্রন্থের ‘তিমির হননের গান’ কবিতায় কবি সমস্ত কুশ্রীতাকে পেছনে ফেলে, হেমন্ত ঋতুর প্রকৃতিতে সুসময়ের প্রত্যাশাকে খুঁজে পান-
"সেই সব রীতি আজ মৃতের চোখের মতো তবু তারার আলোর দিকে চেয়ে নিরালোক হেমন্তের প্রান্তরের তারার আলোক।"
মূল্যায়ন: কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার মাধ্যমে বাংলা কবিতার দিক বদল শুরু হয়। জীবনানন্দ প্রকৃতির কবি-বাংলা সাহিত্যে প্রকৃতির কবিতা মানেই তাই জীবনানন্দের কবিতা।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা