বুদ্ধদেব বসুর কবিকৃতিত্ব আলোচনা করো
বিশ শতকের ত্রিশের দশকে ‘কল্লোল’-কে আশ্রয় করে যে রবীন্দ্রবিরোধী আধুনিক কাব্যধারা প্রবাহিত হয়েছিল তার প্রাণপুরুষ হলেন বুদ্ধদেব বসু।
কাব্যগ্রন্থসমূহ: ১৯৩০-এ প্রকাশিত ‘বন্দীর বন্দনা’ কাব্য থেকে কবি তাঁর কবিতায় নিজস্বতার চিহ্ন রাখেন। এরপর প্রকাশ পেয়েছে ‘পৃথিবীর প্রতি’ (১৯৩৩), ‘কঙ্কাবতী’ (১৯৩৭), ‘দময়ন্তী’ (১৯৪৩), ‘দ্রৌপদীর শাড়ি’ (১৯৪৮), ‘শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর’ (১৯৫৫), ‘যে আঁধার আলোর অধিক’ (১৯৫৮), ‘মরচে পড়া পেরেকের গান’ (১৯৬৬) ইত্যাদি। ‘কবিতা’ পত্রিকা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তরুণ কবিদের অন্তর জয় করেন তিনি এবং রবীন্দ্রপ্রভাবকে সযত্নে অতিক্রম করে নতুন আদর্শের কবিতারচনার ক্ষেত্রেও তিনি বিশিষ্টতা দেখান।
কাব্যদর্শন: বুদ্ধদেব বসু রচিত ‘বন্দীর বন্দনা’ প্রেমের কাব্য হলেও সে প্রেম রোমান্টিক নয়। এদিক থেকে রবীন্দ্র জীবনদর্শনের সঙ্গে বুদ্ধদেবের জীবনদর্শন বিপরীত মেরুতে অবস্থিত। ‘পৃথিবীর প্রতি’ কাব্যের সমস্ত কবিতাই প্রেমের। তাঁর তৃতীয় কাব্য ‘কঙ্কাবতী’-তে আধুনিকতার পরিচয় আছে। শব্দ ও চিত্রের সমন্বয়ে তাঁর কবিতা ভিন্ন ভাবনার হয়ে ওঠে। ‘দময়ন্তী’ কাব্যে কবি মিথকে অবলম্বন করে ভোগের পথ বর্জন করে প্রেমের প্রকৃষ্ট রূপকে দর্শন করতে সচেষ্ট হলেন। তাঁর শেষদিকের কাব্যসমূহে দেহ ও আত্মার, আদর্শ ও বাস্তবের এবং প্রবৃত্তি ও প্রেমের দ্বন্দ্ব দেখা যায়।
কবিকৃতিত্ব: ভাবনার দিক থেকে তিনি অনেকটা আধুনিক হলেও উনিশ শতকের ভাবধারাকে সম্পূর্ণভাবে পরিহার করতে পারেননি। ‘দ্রৌপদীর শাড়ী’ কাব্যে পরিণত বয়সের অনিবার্য পরিচয়কে অঙ্কন করেছেন তিনি। ‘শীতের প্রার্থনা: বসন্তের উত্তর’ কাব্যেও একই ভাবনার অনুরণন এবং সৃষ্টির আদিলগ্নের জিজ্ঞাসা একাত্ম হয়ে আছে। কবিতাকর্ম যথার্থ আধুনিক না হলেও আধুনিক চিন্তার বিকাশ যে তাঁর হাতেই লালিত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা