বাংলা কাব্যসাহিত্যের ধারায় প্রেমেন্দ্র মিত্রের অবদান আলোচনা করো
কাব্যসমূহ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিকতা বিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন যে, আধুনিকতা ‘সময় নিয়ে নয়, মর্জি নিয়ে’-এই উক্তির নিরিখে বলা যায় রবীন্দ্রনাথ অপেক্ষা স্বতন্ত্র মর্জিতে বাংলা কাব্য-কবিতার জগতে অনন্য হয়ে উঠেছিলেন যিনি, তিনি প্রেমেন্দ্র মিত্র। ‘প্রথমা’ (১৯৩২), ‘সম্রাট’ (১৯৪০), ‘ফেরারী ফৌজ’ (১৯৯৮), ‘সাগর থেকে ফেরা’ (১৯৫৬), ‘হরিণ- চিতা-চিল’ (১৯৬১), ‘অথবা কিন্নর’ (১৯৬৫), ‘সঙ্গীর নিকটে’ (১৯৭২), ‘কখনো মেঘ’ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থে তাঁর নিজস্ব স্বর প্রতিধ্বনিত হয়। কবির কবিতাগুলি প্রধানত ‘বিজলী’, ‘কল্লোল’, ‘কালিকলম’ ও ‘প্রগতি’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
‘প্রথমা’ কাব্য এবং ‘সম্রাট কাব্য: ‘প্রথমা’ কাব্যেই কবি বীণার তারে যে সুর বেঁধেছিলেন সেই সুরই তাঁর পরবর্তী কাব্যগুলিতে ধ্বনিত হয়েছে। কবির কাব্যে কামার, কাঁসারি, ছুতোর, মুটেমজুর অর্থাৎ তথাকথিত শ্রমিক শ্রেণির মুখের ভাষা এসেছে। নগরজীবনের মানুষ হয়েও নাগরিক জীবনের নৈরাশ্য কবির ‘সম্রাট’ কাব্যের কবিতাগুলিতে পাওয়া যায়। তাঁর কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল ‘সাগর থেকে ফেরা’।
‘ফেরারী ফৌজ’, ‘হরিণ-চিতা-চিল এবং অথবা কিন্নর: ‘ফেরারী ফৌজ’ নামটি প্রতীকী। এই কাব্যে তিনি কল্পনা করেছেন অশুভের সঙ্গে শুভের লড়াই, যা অস্তিত্বের শুরু থেকেই চলে আসছে। ‘হরিণ-চিতা-চিল’ কাব্যেও প্রতীকের মধ্য দিয়ে জীবনের দুরন্ত আবেগকে চিহ্নিত করেছেন কবি। ‘অথবা কিন্নর’ কাব্যে কবি মুখ ফিরিয়েছেন অবচেতনার দিকে।
বাংলা কাব্য-কবিতার জগতে বিষয়বৈচিত্র্য ও প্রকাশভঙ্গির অভিনবত্বে প্রেমেন্দ্র মিত্র যথার্থই এক আধুনিক কবি।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা