বাংলা কাব্যে জীবনানন্দ দাশের অবদান সম্পর্কে লেখো
অথবা,
‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ কার লেখা? তাঁর কাব্যপ্রতিভা আলোচনা করো
রবীন্দ্রোত্তর যুগের আধুনিক কবিদের মধ্যে অন্যতম জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘ঝরা পালক’ (১৯২৭), ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮), ‘রূপসী বাংলা’ (১৯৫৭), ‘বেলা অবেলা কালবেলা’ (১৯৬১) কাব্যগ্রন্থগুলি বাংলা আধুনিক কবিতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ।
ঝরা পালক ও ধূসর পাণ্ডুলিপি: জীবনানন্দের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’-এ তাঁর পূর্ববর্তী কবি মোহিতলাল মজুমদার, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, নজরুল ইসলামের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। কবির প্রকৃতিচেতনার প্রাথমিক প্রকাশ লক্ষ করা যায় তাঁর দ্বিতীয় কাব্য ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’-র মধ্যে। তাঁর অনুভবের আলোকে অসামান্য হয়ে উঠেছে অজস্র পরিচিত নিসর্গ বস্তু ও দৃশ্য।
বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, ‘সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা : জীবনানন্দ দাশ রচিত ‘বনলতা সেন’ কাব্যটি নানা দিক থেকে বাংলা কবিতার স্বতন্ত্র দিকচিহ্ন হয়ে আছে। এই কাব্যে প্রকৃতি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার মধ্য দিয়ে এক পরাবাস্তব জগতের সন্ধান দেয়। এই কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলিতে কবি ইতিহাসচেতনার মাধ্যমে সুদূর অতীতের সঙ্গে বর্তমানের নিশ্ছিদ্র যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। এই গ্রন্থে কবির প্রকৃতিচেতনায় নবীন স্বপ্নের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে সচেতন নিসর্গপ্রেম। পরবর্তী কাব্য ‘মহাপৃথিবী’-তে কবি প্রকৃতপক্ষে নিসর্গ পৃথিবী ও মানব পৃথিবীর সমাহার ঘটিয়েছেন। ‘সাতটি তারার তিমির’ কাব্যে পরিণত কবিমননের পরিচয় পাওয়া যায়। মৃত্যুর পরে প্রকাশিত ৬০টি সনেট সংকলিত কাব্য ‘রূপসী বাংলা’-র কবিতাগুলিতে বাংলার নিজস্ব পল্লি-আবহের সৌন্দর্য প্রকাশিত। এখানে গ্রামবাংলার ঘনিষ্ঠ দেশজ আবেগ প্রকাশিত হয়েছে।
জীবনানন্দের কাব্যজগৎ প্রায় পুরোপুরি চোখে দেখার জগৎ, সেইসঙ্গে মিশেছে তাঁর মৃত্যুচেতনা, ইতিহাসচেতনা ও সময়চেতনা। তাঁর কাব্যে চিত্রকল্পের প্রয়োগ অবিস্মরণীয়। সেজন্য রবীন্দ্রনাথ তাঁকে বলেছিলেন ‘চিত্ররূপময় কবি’।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা