কবি নজরুল ইসলামের কবিতায় পুরাণপ্রসঙ্গের ব্যবহার এবং ভাষার বৈচিত্র্য সম্পর্কে আলোচনা করো
নজরুলের কবিতায় পুরাণ: মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যধারায়, বিশেষত মঙ্গলকাব্যে, আখ্যানকাব্যে, অনুবাদ সাহিত্যে এমনকি, বৈয়ব সাহিত্যেও পুরাণ অনুষঙ্গের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে বাঙালির রামায়ণ, মহাভারত ও ভাগবতের সঙ্গে যোগসূত্র নিবিড়। নজরুলের বিভিন্ন কবিতায় কীভাবে পুরাণপ্রসঙ্গ এসেছে, তা আমরা আলোচনা করতে পারি। যথা-
হিন্দু পুরাণপ্রসঙ্গ
- রামায়ণ-এর প্রসঙ্গ: (ক) ‘লবকুশে বনে ত্যজিয়াছে রাম, পালন করেছে সীতা।’ (নারী) (খ) ‘…… সীতা সম সতী মায়ে।’ (বারাঙ্গনা) (গ) ‘অহল্যা যদি মুক্তি লভে মা-‘ (বারাঙ্গনা)।
- মহাভারত-এর প্রসঙ্গ: (ক) ‘মহাভারতের মহাবীর জাগে’ (সব্যসাচী) (খ) ‘এই রণভূমে বাঁশরী কিশোর গাহিলেন মহাগীতা’ (সাম্যবাদী) (গ) ‘ক্ষ্যাপা দুর্বাসা, বিশ্বামিত্র শিষ্য’ (বিদ্রোহী)।
- শিব-এর প্রসঙ্গ: (ক) ‘মহাপ্রলয়ের আমি নটরাজ’ (বিদ্রোহী) (খ) ‘আমি ধূর্জটি’ (সব্যসাচী) (গ) ‘এলো ভোলানাথ’ (মানুষ)।
ইসলামীয় পুরাণপ্রসঙ্গ
‘ঈশামুসা ইব্রাহিম মোহম্মদ’ (মানুষ), ‘ইস্রাফিল’ (বিদ্রোহী), ‘হাবিয়া দোজখ’ (বিদ্রোহী)
গ্রিক পুরাণপ্রসঙ্গ
‘অর্ফিয়াসের বাঁশরী’ (বিদ্রোহী) ‘ প্লুটো’ (বারাঙ্গনা)।
এইভাবেই নজরুল তাঁর বিভিন্ন কবিতায় পৌরাণিক প্রসঙ্গের অবতারণা ঘটিয়েছেন।
নজরুলের কবিতার ভাষা: আধুনিক বাংলা কাব্য-কবিতার জগতে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর কবিতায় অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা জেগে উঠেছিল। তিনি বিভিন্ন বিদেশি শব্দভান্ডার থেকে শব্দ সংগ্রহ করে কবিতার কায়া নির্মাণ করেন। তবে শুধুমাত্র বিদেশি শব্দের মধ্যে নয়; তৎসম, তদ্ভব ও দেশি শব্দের মিশ্রণে বক্তব্যের উপযোগী করে সমগ্র বিষয়টিকে দেখিয়েছেন নজরুল। সেই দৃষ্টান্ত তাঁর বেশ কিছু কবিতায় লক্ষ করা যায়-
বিদ্রোহী: আরশ ছেদিয়া = আরবি শব্দ + বাংলা ক্রিয়া।
সপ্তনরক হাবিয়া দোজখ = বাংলা + ফারসি শব্দ।
আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে: লক্ষ বাগের = তৎসম + ফারসি শব্দ।
এইভাবেই কবি নজরুল তাঁর কবিতায় তৎসম, তদ্ভব, দেশি শব্দের সঙ্গে আরবি, ফারসি ভাষার মিশ্রণে নতুন কবিতার ভাষানির্মাণে সচেষ্ট হয়েছেন।
আরও পড়ুন – নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা