‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কাজী নজরুলের কলমে নতুন যুগের বার্তা ঘোষিত হয় আলোচনা করো

‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কাজী নজরুলের কলমে নতুন যুগের বার্তা ঘোষিত হয় আলোচনা করো

'অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কাজী নজরুলের কলমে নতুন যুগের বার্তা ঘোষিত হয় আলোচনা করো
‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে কাজী নজরুলের কলমে নতুন যুগের বার্তা ঘোষিত হয় আলোচনা করো

প্রকাশকাল ও গ্রন্থ পরিচয়: ১৯২২ সালের অক্টোবর মাসে কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। গ্রন্থটির প্রচ্ছদপটের পরিকল্পনা করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং তা এঁকেছিলেন তরুণ চিত্রশিল্পী বীরেশ্বর সেন। গ্রন্থটির উৎসর্গপত্রে কবি লিখেছিলেন- “বাংলার অগ্নিযুগের আদি পুরোহিত সাগ্নিক বীর শ্রীবারীন্দ্রকুমার ঘোষ শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেষু।”

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসের অন্যতম কান্ডারি ঋষি অরবিন্দ ঘোষের ভ্রাতা ছিলেন বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষ। ব্রিটিশ শাসনতন্ত্রের পরাধীনতার বন্ধন থেকে মুক্তির আশায়, বিপ্লববাদে বিশ্বাসী নজরুল নিজেকে বারীন্দ্রকুমারের ‘-হে মহিমান্বিত শিষ্য’ উল্লেখ করে এই গ্রন্থটি তাঁকে উৎসর্গ করেন।

নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘অগ্নিবীণা’ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রথম সংস্করণের প্রায় দু-হাজার কপি সঙ্গে সঙ্গেই নিঃশেষিত হয়। রাজদ্রোহের অপরাধে নজরুল কারাগারে বন্দি হন।

প্রেক্ষাপট ও কাব্যবৈশিষ্ট্য: ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের কেন্দ্রীয় বিষয় ঔপনিবেশিক শাসন ও দেশীয় সামন্ত শোষণ থেকে মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক নানা আইনকানুন জারি, নিপীড়ন, স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে প্রত্যক্ষ শাসন জারি, জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড, খিলাফত আন্দোলন, অসহযোগ আন্দোলনের বিদ্রোহাত্মক প্রেক্ষাপটে ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি রচিত হয়েছে।

১২টি কবিতা সংকলিত এই কাব্যগ্রন্থের মূলভাব ব্যক্ত হয়েছে ‘বিদ্রোহী’ – কবিতায়, একই সঙ্গে অন্য কবিতা যেমন-‘প্রলয়োল্লাস’, ‘ধূমকেতু’ এগুলিও ‘বিদ্রোহী’ কবিতার সম্পূরক ভাবের কবিতা। নানা উপমা-রূপকে, চিত্রকল্পে, মিথ-পুরাণ-ঐতিহ্যে, কিংবদন্তি ও ইতিহাস প্রসঙ্গে নজরুল এই কাব্যগ্রন্থের মধ্য দিয়ে উচ্চারণ করেছেন মুক্তির বাণী।

‘রক্তাম্বরধারিণী মা’ কবিতাটিতে যেমন দেবী দুর্গাকে কবি আহ্বান করেন ধ্বংস করে পুনরায় সৃষ্টির জন্য- “নিদ্রিত শিবে লাথি মার আজ,/ ভাঙো মা ভোলার ভাঙ-নেশা,/ পিয়াও এবার অ-শিব গরল/ নীলের সঙ্গে লাল মেশা।” তেমনই ‘কামাল পাশা’, ‘আনোয়ার’, ‘রণ-ভেরী’, ‘কোরবানী’, ‘খেয়া পারের তরণী’ কবিতায় মুসলিম ইতিহাসের ঐতিহ্য, মিথ-পুরাণের প্রসঙ্গ সাহস ও বীরত্বের কথা রয়েছে।

মূল্যায়ন: শতাব্দীকাল ধরেই ‘অগ্নিবীণা’ বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। ‘অগ্নিবীণা’ কেবল কয়েকটি কবিতার সংকলন নয়। এটি সমগ্র দেশ, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। রবীন্দ্রসাহিত্যের স্বর্ণ যুগে নজরুলকে স্বতন্ত্র কবির মর্যাদা এনে দিয়েছে এই গ্রন্থ। এই কাব্যের মাধ্যমেই নজরুলের কলমে নতুন যুগের বার্তা ঘোষিত হয়।

আরও পড়ুন – নুন কবিতার নামকরণের সার্থকতা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment