টীকা লেখো: টমাস মুনজের
টমাস মুনজের
উগ্রবাদী আন্দোলনের অপর এক প্রবক্তা ছিলেন টমাস মুনজের (Thomas Muntzer, ১৪৮৯-১৫২৫ খ্রি.)। তিনি আচারবর্জিত ধর্মচর্চার কথা প্রচার করলে দরিদ্র মানুষেরা তা সানন্দে গ্রহণ করেন। জার্মানিতে তখনও সামন্ততান্ত্রিক শোষণ অব্যাহত ছিল। সাধারণ মানুষ ধর্মসংস্কারকদের কাছ থেকে আধ্যাত্মিক মুক্তির পাশাপাশি শোষণমুক্তির পথের দিশা প্রত্যাশা করেছিলেন। উগ্রবাদীরা ‘ঈশ্বরের চোখে সবাই সমান’ -এই মত প্রচার করলে দরিদ্র শ্রমজীবীরা আশার আলো দেখেন এবং দলে দলে উগ্রবাদীদের সঙ্গে যোগ দেন।
(1) মতাদর্শ: ১৫২৪ খ্রিস্টাব্দে মুনজের টমাস মুনজের Sermons before the Princes নামক পুস্তিকায় আচার-অনুষ্ঠান বর্জিত বৈপ্লবিক ধর্মতত্ত্ব প্রকাশ করেন। এই পুস্তিকায় উল্লিখিত ধর্মীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবিসমূহ বুদ্ধিজীবী এবং যুক্তিবাদীদের সমর্থন লাভ করে। ফলে চার্চবিরোধিতার পরিমণ্ডলে মার্টিন লুথারের পাশাপাশি ভিন্নমাত্রার আরও একটি ধর্মসংস্কার আন্দোলন জার্মানিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ঈশ্বর সকল মানুষের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সৃষ্টি করেছেন-মুনজেরের এই তত্ত্ব কৃষকদের খাজনা প্রদান বন্ধ করতে উৎসাহিত করে। তাঁর এই আন্দোলনের প্রভাব প্রধানত দক্ষিণ জার্মানিতে অনুভূত হয়েছিল। ১৫২৪- ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দের কৃষক বিদ্রোহকে তিনি ঈশ্বরের ইচ্ছার প্রকাশ বলে অভিহিত করেন। অবশ্য সরকার ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করে এবং মুনজেরকে হত্যা করা হয়।
(2) সাম্যবাদী সমাজের কল্পনা: অবশ্য মুনজেরকে মৃত্যুদণ্ড দানের পরেও অ্যানাব্যাপটিস্টদের গতি স্তব্ধ করা যায়নি। কারণ দেখা যায় যে, এক দশক বাদেই জার্মানির মুনস্টার-এ (Munster) এই বৈপ্লবিক প্রতিবাদী আন্দোলনের পুনরভ্যুত্থান ঘটেছে। ইয়ান ম্যাথিস ও জন নামক দুজন ডাচ প্রবাসী প্রোটেস্ট্যান্ট মুনস্টারে যে আন্দোলন সংগঠিত করেন, তাতে সাম্যবাদী সমাজচেতনার আভাস পাওয়া যায়। এঁরা প্রচার করেন যে, ঈশ্বর বিশ্বাসী খ্রিস্টীয় সমাজে বৈষম্য থাকা উচিত নয়। যেহেতু সম্পত্তির বৈষম্য সামাজিক ভেদাভেদ তৈরি করে, তাই যথার্থ খ্রিস্টান সমাজে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অবসান জরুরি। ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে মুনস্টারের নগর প্রশাসন দখল করে এই উগ্রবাদীরা সাম্যবাদী সমাজগঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর