প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে উলরিখ জুইংলির ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে উলরিখ জুইংলির ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

অথবা, টীকা লেখো – উলরিখ জুইংলি

প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে উলরিখ জুইংলির ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে উলরিখ জুইংলির ভূমিকা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলনে উলরিখ জুইংলির ভূমিকা

জার্মানিতে মার্টিন লুথারের নেতৃত্বে ধর্মসংস্কার আন্দোলনের বিস্তারের পাশাপাশি সুইটজারল্যান্ডেও তা ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয়। এক্ষেত্রে উলরিখ জুইংলির (Ulrich Zwingli, ১৪৮৪-১৫৩১ খ্রিস্টাব্দ)-এর ভূমিকা ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

(1) প্রথম জীবন: জাতিতে জার্মান জুইংলি ভিয়েনা ও বাসেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ করেন। পাশাপাশি গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষাতেও তিনি যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। তিনি ছাত্রাবস্থায় মানবতাবাদী পণ্ডিত কনরাড কেল্টিস (Conrad Celtes)-এর কাছে যুক্তিবাদে দীক্ষিত হন। এরপর ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে জুইংলি জুরিখের প্রধান পুরোহিতের পদে নিযুক্ত হন। এই সময় থেকেই তিনি সুইটজারল্যান্ডের ক্যাথলিক চার্চের দুর্নীতি ও অনাচার দেখে ধর্মসংস্কার আন্দোলন শুরু করেন।

(2) মতবাদ: জুইংলি মনে করতেন যে, ক্যাথলিক ধর্মমতের সংস্কার প্রয়োজন এবং এই কাজে চার্চ নয়, সরকারের উদ্যোগই যথার্থ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, ধর্ম ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলারক্ষার জন্য লোকায়ত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ, সরকারের সদর্থক ভূমিকা জরুরি। উইলিয়ম ডানিং (William Dunning)-এর মতে, জুইংলি চার্চ ও রাষ্ট্রকে একক ধর্মীয় সংগঠনে সমন্বিত করেছিলেন।

(3) পোপতন্ত্রের বিরোধিতা: মার্টিন লুথারের ধর্মসংস্কার আন্দোলনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উলরিখ জুইংলি সুইটজারল্যান্ডে ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দে Indulgence বা পাপমুক্তির ছাড়পত্রের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি জুরিখের ধর্মসভায় ৬৭টি নিবন্ধ (67 Theses) প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, বাইবেল যেহেতু ঈশ্বরের বাণী, তাই তা অভ্রান্ত এবং স্বয়ং পোপও এর পরিবর্তন করতে পারেন না। জুইংলি বিভিন্ন ক্যাথলিক আচার যেমন, উপবাস, যাজকদের ব্রহ্মচর্য, তীর্থভ্রমণ, নরক ও প্রায়শ্চিত্ত -এই সবকিছুকে আক্রমণ করেন। সমস্ত প্রতীক, ক্রুশ, মন্ত্রণাগান বাতিল করার পরামর্শ দেন।

(4) খ্রিস্ট ধর্মের শুদ্ধতা রক্ষা: খ্রিস্ট ধর্মের শুদ্ধতা রক্ষার জন্য জুইংলি জুরিখ শহরে প্রিভি কাউন্সিল নামক একটি সভা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়ে -বলেন যে, এই সভা চার্চ ও রাষ্ট্রপরিচালনা করলে চার্চের দুর্নীতি কমবে – এবং রাষ্ট্র জনগণের স্বার্থে কাজ করতে উদ্যত হবে। এ ছাড়া জুইংলি প্রস্তাব দেন যে, যাজকদের বিবাহের স্বাধীনতা স্বীকার করা হলে তাঁরা চারিত্রিক কলুষতামুক্ত হবেন এবং চার্চের অনাচারও বন্ধ হবে।  তাঁর আদর্শ ও কার্যকলাপের ফলে সুইটজারল্যান্ডে প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মের বিশেষ প্রসার ঘটে।

(5) ক্যাথলিক চার্চের বিরুদ্ধে যুদ্ধ: ১৫২৯ খ্রিস্টাব্দ থেকেই সুইটজারল্যান্ডের ক্যাথলিক চার্চ, জুইংলি এবং প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে শুরু করে। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে জুইংলির পরামর্শে সুইস পার্লামেন্ট ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে সম্মত হয়। শেষপর্যন্ত ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে ক্যাপ্পেল (Kappel) নামক এক স্থানে সংঘটিত এক যুদ্ধে জুইংলি স্বয়ং ক্যাথলিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। এই যুদ্ধে জুইংলি মারা যান।

মূল্যায়ন

জুইংলির সুইটজারল্যান্ড ও দক্ষিণ জার্মান কেন্দ্রিক প্রোটেস্ট্যান্ট আন্দোলন সমগ্র খ্রিস্টান জগতের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। সুইটজারল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ধর্মসহিষ্ণুতার বাতাবরণ। বিশিষ্ট পণ্ডিত ও রাষ্ট্রনীতিবিদ রেমন্ড গেটেল (Raymond Gettell)-এর মতে, জুইংলি ছিলেন, “More of a humanist and more radical than Luther.”

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment