গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটির উপর একটি টীকা লেখো

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটির উপর একটি টীকা লেখো

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটির উপর একটি টীকা লেখো
গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটির উপর একটি টীকা লেখো

গান্ধিজির তত্ত্বের একটি অন্যতম প্রধান নীতি হল সত্যাগ্রহ, তাঁর কাছে সত্যাগ্রহ হল সুসংবদ্ধ জীবনদর্শন, যা ব্যক্তিকে তার স্বার্থের বন্ধন থেকে মুক্ত করে তাকে সমাজমুখী করে তোলে।

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণা

গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাগুলি নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল

[1] সত্যাগ্রহের সংজ্ঞা: গান্ধিজির সত্যাগ্রহ কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল সত্যের প্রতি আগ্রহ (সত্য আগ্রহ)। সত্যাগ্রহ হল বলপ্রয়োগ না করে অর্থাৎ ঘৃণা, ক্রোধ ও হিংসার আশ্রয় না নিয়ে যুদ্ধ করার এক অভিনব কৌশল সত্য, অহিংসা ও আত্মত্যাগের সমন্বয়ী রূপই হল সত্যাগ্রহ-যা প্রতিটি মানুষের সহজাত বা জন্মগত অধিকার বলে বিবেচিত হয়।

[2] সত্যাগ্রহের প্রকৃতি: গান্ধিজি সত্যাগ্রহের প্রকৃতি বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে কয়েকটি দিকের কথা উল্লেখ করেছেন।

(i) নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয়: গান্ধিজির মতে, সত্যাগ্রহ নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ নয়, সত্যাগ্রহ হল নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শক্তির দ্বারা অন্যায়কে প্রতিরোধ করার সংগ্রাম। সত্যাগ্রহ সুনির্দিষ্ট ও ন্যায়সংগত দাবির উপর প্রতিষ্ঠিত।

(ii) অহিংসা নীতি: গান্ধিজির রাজনৈতিক দর্শন তাঁর অহিংসা তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। সত্যসন্ধানের উদ্দেশ্যে তিনি অহিংসাকে খুঁজে পেয়েছিলেন, যা তাঁর মস্তিষ্কজাত নয়। অহিংসার মধ্য দিয়ে সত্যলাভ সম্ভব বলেই একজন সত্যাগ্রহী সর্বদাই হিংসাকে পরিহার করে চলবে।

(iii) আত্মনিগ্রহ: আত্মনিগ্রহের নামান্তর হল সাহস। প্রতিপক্ষের হৃদয় জয় করার জন্য সত্যাগ্রহীদের আত্মপীড়নরূপ সাহসের প্রয়োজন হয়। গান্ধিজির মতে, ভালোবাসা কোনো কিছুর দাবি করে না, ভালোবাসা কখনও প্রতিশোধ নেয় না বরং তার পরিবর্তে নিজে যন্ত্রনা ভোগ করে।*

(iv) ভয়হীনতা: গান্ধিজি প্রবর্তিত সত্যাগ্রহে দুর্বলতা, ভীরুতা ও কাপুরুষতার কোনো স্থান ছিল না। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন, দুর্বল, ভীরু ও কাপুরুষরা কখনোই সত্যাগ্রহী হতে পারবে না। কারণ সত্যলাভ না হওয়া পর্যন্ত একজন সত্যাগ্রহীকে অবিরাম বা একটানা লড়াই চালিয়ে যেতে হবে-এ কাজ ভীরু বা কাপুরুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। প্রতিপক্ষকে সত্যাগ্রহীরা বিশ্বাস করতে কখনোই শঙ্কিত হবে না।

(v) কলাকৌশল: গান্ধিজি সত্যাগ্রহে কতকগুলি কলাকৌশলকে অনুসরণ করতে বলেছেন, যথা- কারোর কোনো কথায় প্রলোভনের ফাঁদে পা না দেওয়া, জনগণের কাছে যে ব্যাপারগুলি মৌলিক গুরুত্ব বলে বিবেচিত হয়, সেগুলিকে কষ্ট স্বীকারের দ্বারা অর্জন করতে হবে, • সত্যাগ্রহে নিয়মশৃঙ্খলা মেনে সবসময় চলতে হবে। এখানে উচ্ছৃঙ্খলতার কোনো স্থান নেই, সত্যাগ্রহীকে আত্মবলে বলীয়ান হতে হবে প্রভৃতি।

(vi) সত্যাগ্রহ আন্দোলনের চরিত্র ও তাৎপর্য: সত্যাগ্রহ-এর সারমর্মই হল জাতীয় জীবনে সত্যতার ও নম্রতার প্রাথমিক প্রয়োগ ঘটানো। এই আন্দোলনে বাদী ও বিবাদী, নিপীড়ক ও নিপীড়িত উভয়েরই কল্যাণ সাধিত হয়ে থাকে। তিনি মনে করতেন সত্যাগ্রহের নীতি হল ভালোবাসার পরিচায়ক, ভালোবাসার চিরন্তন নীতি এখানেই গান্ধিজির সত্যাগ্রহের তাৎপর্য বা গুরুত্ব। সত্যকে আশ্রয় করার মধ্যেই নিহিত রয়েছে সত্যাগ্রহ শব্দটির তাৎপর্য।

[3] সত্যাগ্রহের বিভিন্ন রূপ: গান্ধিজি সত্যাগ্রহের বিভিন্ন ধরনের রূপের কথা বলেছেন। যথা- পিকেটিং, অহিংস অসহযোগ, আইন অমান্য, অনশন, গঠনমূলক কর্মসূচি, অন্যান্য পদ্ধতি।

মূল্যায়ন: গান্ধিজির সত্যাগ্রহ সম্পর্কিত ধারণাটি সমালোচনার ঊর্ধ্বে নয়, যথা-

(1) অনেক সমালোচকদের মতে, গান্ধিজি প্রবর্তিত সত্যাগ্রহ এতটাই আধ্যাত্মিক যে, ঈশ্বরে অবিশ্বাসীদের কাছে এই আন্দোলন একেবারেই গুরুত্বহীন।

(2) গান্ধিজি তাঁর সত্যাগ্রহ সম্পর্কে নিজেই আস্থাশীল ছিলেন না। এই কারণেই বহু আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটিয়ে তা পুনরায় বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।

সমালোচনা সত্ত্বেও পরিশেষে বলা যায়, গান্ধিজির সত্যাগ্রহ মানবমুক্তি সংগ্রামের ঐতিহাসিক আন্দোলনের এক উল্লেখযোগ্য এবং অনন্য প্রয়াস।

আরও পড়ুন – সরকারের বিভিন্ন রূপ বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment