নবজাগরণের বিভিন্ন পর্যায়সমূহ আলোচনা করো
নবজাগরণের বিভিন্ন পর্যায়সমূহ
বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বিচার করে রেনেসাঁ বা নবজাগরণের কাল (Renaissance Period)-কে মূলত চারটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়। যথা-
(1) প্রথম পর্যায়: নবজাগরণের প্রথম পর্যায়কে রোমের সংস্কৃতির পুনরুত্থান (Back to Rome) বলা হয়। এই সময় কার্ডিনাল বেম্বো (Cardinal Bembo) অশুদ্ধ ল্যাটিন রীতিতে রচিত ব্রিডিয়ারি বা প্রার্থনাপুস্তক পড়তে অস্বীকার করেন। পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস (Pope Julius II) সেন্ট পিটারস গির্জার বদলে ব্যাসিলিকা নির্মাণ শুরু করেন। এই ঘটনা ও নিদর্শনগুলি জনমনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এর ফলেই পুরোনো সংস্কৃতির প্রতি মানুষের আগ্রহ, কৌতূহল বাড়ে। মানুষ এইসকল সংস্কৃতির চর্চা করে এবং নবরূপায়ণ ঘটায়।
(2) দ্বিতীয় পর্যায়: নবজাগরণের দ্বিতীয় পর্যায়কে এথেন্সে ফিরে যাওয়া (Back to Athens) বলা হয়। এটি মানবতাবাদী পর্যায় নামেও পরিচিত। এই সময় রাষ্ট্রনীতি, সাহিত্য, শিল্পকলা প্রভৃতি বিষয়ে জ্ঞানলাভ করার জন্য অনেকেই গ্রিক ভাষা শিখতে আরম্ভ করে এবং গ্রিসের ইতিহাসপাঠে আগ্রহী হয়। এজন্য ল্যাটিন ভাষার পাশাপাশি গ্রিক ভাষার চর্চা বেড়ে যায়। গ্রিক রচনায় উদার ও ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তাধারা এযুগের পণ্ডিতদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রদান করে এবং মানবতাবাদ গড়ে ওঠে।
(3) তৃতীয় পর্যায়: নবজাগরণ কালের তৃতীয় পর্যায় ছিল ধর্মীয়। একে জেরুজালেমে ফিরে যাওয়া (Back to Jerusalem) বলা হয়। ইতিমধ্যে রোমান চার্চের দুর্নীতি এবং পোপের প্রাধান্যের বিরুদ্ধে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অসন্তোষ দানা বাঁধে। বহু চিন্তাবিদ চার্চব্যবস্থার সংস্কারের মাধ্যমে নতুন নিয়মকানুন তৈরি করে পরিচালনার কথা ভাবেন। স্থানে স্থানে বিক্ষোভ দেখা দেয়, কিন্তু পোপ কৌশলে এই বিক্ষোভগুলির অবসান ঘটান। এ ছাড়া গুটেনবার্গ ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করলে ল্যাটিন ও আঞ্চলিক ভাষায় বাইবেল প্রকাশিত হতে থাকে। ফলে সীমিত হলেও সাধারণ মানুষ বাইবেল পড়ে খ্রিস্ট ধর্মের প্রকৃত স্বরূপ সম্বন্ধে জানতে পারে। ক্রমশ যাজকতন্ত্রের উপর তাদের শ্রদ্ধা কমে যায়। মানবতাবাদীরা তাই খ্রিস্ট ধর্মের প্রকৃত রূপ ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হন।
(4) চতুর্থ পর্যায়: আল্পস পর্বত অতিক্রম করে নবজাগরণের ধারা ইটালি থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রবেশ করলে তার প্রকৃতি বা রূপ বদলায়। জার্মান সাহিত্যে, চিত্রকলায়, স্থাপত্যে যা লক্ষণীয়। মুক্ত চিন্তা, অনুসন্ধিৎসা এবং উদ্যম প্রবল হয়। ছাপাখানা আবিষ্কার, ধর্মসংস্কার আন্দোলন, জার্মান ভাষায় বাইবেল প্রকাশনা-র মতো যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী হয় জার্মানি। আরও উত্তরে পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী কোপারনিকাস সৌরকেন্দ্রিক বিশ্বব্রহ্মান্ডের কথা বলেন। ইংল্যান্ডে শেকস্পিয়র ও অন্যান্যরা সাহিত্যের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখেন। আঞ্চলিক ইংরেজি ভাষার বহুল ব্যবহার শুরু হয়। বিজ্ঞান, সংগীত, স্থাপত্যেও নবজাগরণ ধারার সঙ্গে আঞ্চলিক রীতির মিশ্রণ ঘটে। ফ্রান্স ও স্পেনেও আঞ্চলিক ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টি হয়। মানবতাবাদী ধারার সীমিত প্রভাব স্থাপত্য, ভাস্কর্য, সংগীত, চিত্রকলার উপর পড়ে। গথিক স্থাপত্যরীতির আঞ্চলিক রূপ দেখা যায়। একে নবজাগরণ ধারার চতুর্থ পর্যায় বা উত্তরের মানবতাবাদ বলেও অভিহিত করা হয়। অনেক ঐতিহাসিক আবার রেনেসাঁর পর্যায়গুলিকে অন্যভাবেও ভাগ করে থাকেন। তাঁদের মতে, রেনেসাঁর চারটি পর্যায় হল- রেনেসাঁ-পূর্ব পর্যায় (The Pre-Renaissance), রেনেসাঁর প্রাথমিক পর্যায় (The Early Renaissance), রেনেসাঁর পরিণত পর্যায় (The High Renaissance) এবং রেনেসাঁ-উত্তর পর্যায় (The Late Renaissance) I
আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর