বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester Boi Kena Probondho WBCHSE

সূচিপত্র

বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর Class 11 Second Semester Boi Kena Probondho WBCHSE

বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর
বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

সে কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায়।’-‘সে কথা’ বলতে বক্তা কোন্ কথাকে ইঙ্গিত করেছেন? বস্তার এমন কথা বলার কারণ লেখো। ২+৩=৫

রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে লেখক ফ্রান্সের প্রখ্যাত সাহিত্যিক আনাতোল ফ্রাঁস-এর কথা তুলে ধরেছেন। মাছি একই সময়ে তার পারিপার্শ্বিক সমগ্র পৃথিবীটা দেখতে পায়। এই প্রসঙ্গ ধরে আলোচনা করতে গিয়ে ফ্রাঁস দুঃখ করে বলেছেন-তাঁর মাথার চারিদিকেই যদি চোখ বসানো থাকত, তবে তিনি আচক্রবাল বিস্তৃত এই সুন্দরী পৃথিবীর সম্পূর্ণ সৌন্দর্য একসঙ্গেই দেখতে পেতেন। লেখকের মতে এই কথাটি খাঁটি কথা। ‘সে কথা’ বলতে বক্তা ফ্রাঁস-এর এই কথাকেই ইঙ্গিত করেছেন।

আলোচ্য প্রবন্ধের শুরুতেই মাছিকে ধরা যে কতটা কঠিন সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে লেখক বলেছেন যে, আমরা দেখতে পাই শুধু সামনের দিক কিন্তু মাছিরা দেখে চতুর্দিক। কারণ মাছির পুঞ্জাক্ষি আছে। অর্থাৎ সমস্ত মাথাজুড়েই মাছির অসংখ্য চোখ রয়েছে, আমরা তা খেয়াল করি না। ফলে কেউ যদি পিছন থেকেও মাছিকে ধরতে চায়, মাছি তা দেখতে পেয়ে সতর্ক হয় এবং উড়ে পালায়। অর্থাৎ মাথায় চক্রাকারে চোখ সাজানো আছে বলেই একই সময়ে তারা (মাছি) সমস্ত পৃথিবীটাই পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম। কিন্তু মানুষের তা থাকে না। জ্ঞানীগুণী দুঃখ করে বলেছেন তাঁর মাথার চর্তুদিকে চোখ নেই বলেই পৃথিবীর সবটা সৌন্দর্য তিনি একই সময়ে উপলব্ধি করতে পারছেন না। ফ্রাঁস-এর এমন উক্তি যে সম্পূর্ণ সঠিক, তা চিন্তা করলেই আমরা অনুভব করতে পারব। এই কারণেই বস্তা প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন।

‘আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়।’-বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে এমন উক্তি করেছেন? মনের চোখের বিকাশের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করো। ২+৩=৫

প্রশ্নোদৃত অংশটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বস্তা হলেন ফরাসি দার্শনিক আনাতোল ফ্রাঁস। জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা দিক সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আমাদের মনের চোখের অবলম্বন নেওয়া প্রয়োজন। অন্যভাবে বলা যাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান আয়ত্ত করার সঙ্গে সঙ্গেই মনের চোখেরও বিকাশ ঘটতে থাকে। অর্থাৎ মনের চোখের নানা দিক আছে। তার প্রসার ঘটানো বা কমানো ব্যক্তির সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। এই প্রসঙ্গেই ফ্রাঁস উক্তিটি করেছেন।

মনের চোখের বিকাশের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে ব্রিটিশ লেখক, দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেলের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছেন লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী আলোচ্য প্রবন্ধে। রাসেলের মতে-মনের চোখ ফোটাতে পারলে আমরা এই পৃথিবীর বই পড়ে এবং দেশভ্রমণ করে মনের মধ্যে অসংখ্য ভুবন সৃষ্টি করা যায় কিন্তু ভ্রমণের সুযোগ সকলের থাকে না সামর্থ্য ও স্বার্থ্যের কারণে। তাই বই-ই হল শ্রেষ্ঠ পথ মনের ভুবনে বিচরণ করার। এই প্রসঙ্গেই কবি-দার্শনিক ওমর খৈয়াম বলতে চেয়েছেন-‘বুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু বইখানা অনন্ত-যৌবনা -যদি তেমন হয়।’ অর্থাৎ বইয়ের মতো ভালো সাথি আর কিছুই হতে পারে না। বই সর্বক্ষণই জ্ঞানালোকের সন্ধান দেয়, বইয়ের প্রকৃত কোনো ক্ষয় নেই, তাই সে অনন্ত-যৌবনা। পাঠকের সঙ্গেও বইয়ের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। এভাবে মনের চোখের বিকাশের মাধ্যমে তিনি নিজের এবং পরিবার বা সমাজেরও বৌদ্ধিক ও সাংস্কৃতিক উন্নতি ঘটাতে পারবেন। তাই মনের চোখের বিকাশের প্রয়োজন রয়েছে।

‘ইতিহাস হার মানলে ভূগোল-আরো কত কি।’-বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন? এই প্রসঙ্গে ওমর খৈয়ামের মন্তব্য আলোচনা করো। ২+৩=৫

প্রশ্নোদৃত অংশটি রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটি করেছেন স্বয়ং লেখক। মনের চোখের বিকাশ ঘটানোর একটি উপায় হল ভালো বই পড়া। তা ছাড়া বই পাঠের মাধ্যমে সংসারজীবনের অনেক দুঃখযন্ত্রণাকে এড়িয়ে থাকা যায়। মনের মধ্যে যে যত ভুবন সৃষ্টি করতে পারবে সে তত বেশি করে যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতার অধিকারী হবে। এক্ষেত্রে সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি নানা দিক আছে। এই প্রসঙ্গেই বক্তা প্রশ্নের উক্তিটি করেছেন।

‘জনগণ যদি পুস্তকের সম্মান করতে না শেখে, তবে তারা দেবভ্রষ্ট হবে।’-বক্তা কেন এরূপ মন্তব্য করেছেন? উক্তিটির মাধ্যমে বস্তার কোন্ মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে? ৩+২=৫

প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বক্তা লেখক নিজেই। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক বলতে চেয়েছেন-জ্ঞানার্জনের প্রতি বাঙালিদের আকাঙ্ক্ষা চিরপ্রচলিত; অথচ বই কেনার প্রতি তাদের অনীহাও সর্বজনবিদিত। ‘গণপতি’ অর্থাৎ ‘গণেশ’ হলেন হিন্দু তথা বাঙালিদের আরাধ্য দেবতা। সকল প্রকারের মঙ্গল কাজের শুরুতেই বিঘ্নহন্তা রূপে দেব গণেশের পূজা করেন হিন্দু বাঙালিরা। হিন্দুদের বিরাটতম গ্রন্থ নিজ হাতে তুলে নিয়েছিলেন দেব গণেশ। গণপতি অর্থাৎ ‘জনগণের পতি’ অর্থাৎ দেবতা। তাঁকে দেবতারূপে মানা হয় অথচ তাঁর রচনা বা গ্রন্থপাঠের প্রতি বাঙালিরা চরম অবহেলা দেখিয়ে থাকে। ‘গণ’ অর্থাৎ ‘জনগণ’-ই যদি তাদের দেবতার সৃষ্টিকে অসম্মান করে, তবে তো একদিক থেকে স্রষ্টাকেই অসম্মান বা অপমান করা হয়। অর্থাৎ পুস্তককে প্রকৃত সম্মান না-করে বাঙালিরা দেবভ্রষ্ট হচ্ছেন। তাই বক্তা প্রশ্নের মন্তব্যটি করেছেন।

উক্ত মন্তব্যের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, বস্তা নিজে বাঙালি হয়ে বইপড়ার প্রতি স্বজাতির অনীহাকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না এবং তিনি এক্ষেত্রে যথেষ্ট হতাশও। এক্ষেত্রে বই কিনে অর্থ খরচের অজুহাতকেও তিনি মেনে নিতে চাননি। বক্তা অর্থাৎ লেখক চান বাঙালি যেন তাদের এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারে। কারণ জ্ঞানার্জনের আকাঙ্ক্ষা বাঙালিদের আছে। যাঁরা বই পড়েন তাঁদের প্রতি দরদও প্রকাশ পেয়েছে লেখকের উক্তিটিতে।

আমাদের নাভিশ্বাস ওঠে দু’হাজার ছাপাতে গেলেই’ -বক্তার এমন উক্তির প্রেক্ষাপট আলোচনা করে, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার দিকনির্দেশ করো। ৩+২=৫

প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। বক্তা হলেন জনৈক বাঙালি প্রকাশক। আলোচ্য প্রবন্ধে লেখক বলেছেন বই না-কেনার সপক্ষে বাঙালির একটি অজুহাত হল-বই কেনার জন্য অত কাঁচা পয়সা তাদের নেই। কথাটার মধ্যে সামান্য যে সত্য আছে তা হল-বই কিনতে পয়সা লাগে-এইটুকুই। বইয়ের দাম কমালে বইয়ের বিক্রয় বাড়বে কিন্তু প্রকাশককে বইয়ের দাম কমাতে বললে, তিনি অজুহাত দিয়ে বলবেন-যথেষ্ট পরিমাণ বই বিক্রি না-হলে দাম কমানো সম্ভব নয়। পৃথিবীতে ফরাসি ভাষায় কথা বলার মানুষ বাংলা ভাষাভাষীর তুলনায় অনেক কম হলেও যুদ্ধের পূর্বে ফরাসি প্রকাশকগণ বারোআনা, চৌদ্দোআনাতেও ভালো বই প্রকাশ করতে পারতেন কিন্তু বাঙালিরা সেটা করতে পারেন না। ফরাসি প্রকাশক এক ঝটকায় বিশ হাজার বই ছাপাতে পারে। কারণ তা বিক্রি করা সম্ভব। বাংলা বইয়ের তেমন বাজার নেই। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটেই বক্তা প্রশ্নের উক্তিটি করেছেন।

লেখকের মতে বই সস্তা নয় বলে লোকে কেনে না। আবার লোকে বই কেনে না বলে প্রকাশক বইয়ের দাম কমাতে পারেন না-এটা একটা ‘অচ্ছেদ্য চক্র’। এই চক্র থেকে বেরোনো খুব কঠিন। বই বিক্রির অর্থেই প্রকাশকের সংসার চলে, তাই বইয়ের দাম কমানো বা প্রচুর সংখ্যায় বই ছাপানোর ঝুঁকি তিনি নিতেই পারবেন না। একমাত্র ক্রেতা যদি পকেটের পয়সা খরচ করে বই কিনে বই বিক্রির বাজারকে সমৃদ্ধ করে তবেই এই ‘অচ্ছেদ্য চক্র’ থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।

মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরিখানা নাকি দেখবার মত ছিল।’-মার্ক ৬ টুয়েনের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিয়ে, তাঁর লাইব্রেরিটির পরিচয় দাও। ২+৩=৫

মার্ক টুয়েন ছিলেন উনবিংশ শতকের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন খ্যাতনামা রম্যরচনাকার। তাঁর প্রকৃত নাম স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স। তাঁর ছদ্মনাম মার্ক টুয়েন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশ্রেষ্ঠ রসিকতাবাদী সাহিত্যিক হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ১৮৩৫ সালের ৩০ নভেম্বর ফ্লোরিডায় তাঁর জন্ম হয়। তাঁর লেখা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপন্যাস হল-‘Adventures of Huckleberry Finn’, ‘The Adventures of Tom Sawyer’, ‘The Mysterious Stranger’, ‘The Innocents Abroad, or, The New Pilgirm’s Progress’, ‘Life on the Mississippi’ ইত্যাদি। ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ২১ এপ্রিল তিনি ইহধাম ত্যাগ করেন।

মার্ক টুয়েনের বিখ্যাত একটি লাইব্রেরি ছিল। লাইব্রেরিটির বৈশিষ্ট্য হল মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত গাদাগাদা বই স্তূপীকৃত ছিল, মেঝেতে পা রাখার পর্যন্ত জায়গা ছিল না। তবে সেই লাইব্রেরিতে কোনো শেলফ ছিল না। মার্ক টুয়েনের এক বন্ধু মার্ককে বলেন-বইগুলো মেঝেতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে, গোটা কয়েক শেলফ জোগাড় করছ না কেন। সেই কথার সূত্র ধরেই মার্ক টুয়েন বন্ধুকে জানান যে, তিনি যে কায়দায় লাইব্রেরিটা গড়ে তুলেছেন, সেই কায়দায় তো শেলফ জোগাড় করতে পারেননি। অর্থাৎ লাইব্রেরির বইয়ের অধিকাংশই বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকেই ধার করে নেওয়া বা উপহার হিসেবে পাওয়া, কিন্তু “শেলফ তো আর বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ধার চাওয়া যায় না।” এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখা দরকার যে, দুনিয়ার অধিকাংশ ব্যক্তিই লাইব্রেরি গড়ে তোলেন কিছু বই কিনে আর কিছু বই বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ধার করে ফেরত না, দিয়ে।

‘এক আরব পণ্ডিতের লেখাতে সমস্যাটার সমাধান পেলুম।’-বক্তা কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন? তিনি কীভাবে সমস্যার সমাধানের পথ পেয়েছিলেন লেখো। ২+৩=৫

সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধের বক্তা লেখক স্বয়ং। আলোচ্য প্রবন্ধে মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরি গড়ে তোলাকে কেন্দ্র করে লেখক বলেছেন যে, অধিকাংশ মানুষই লাইব্রেরি গড়ে তোলে কিছু বই কিনে, আর কিছু বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে ধার করে ফেরত না-দিয়ে। যে মানুষ পরের জিনিস গলা কেটে ফেললেও ছোঁবে না, সেই মানুষই দেখা যায় বইয়ের ক্ষেত্রে সর্বপ্রকারের বিবেকবর্জিত। এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা; এর সমাধান প্রসঙ্গেই বক্তা প্রশ্নের উক্তিটি করেছেন।

এক আরব পন্ডিতের লেখা থেকেই লেখক তথা বক্তা সমস্যা সমাধানের পথ পেয়েছিলেন। আরব পন্ডিত ধনী ও জ্ঞানীর একটি তফাত প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেন, তিনি যে জিনিসটি লক্ষ করেছেন, তা বিচক্ষণ মানুষের দৃষ্টিগোচর করাতে চান। তিনি বলেন, ধনীর মেহন্নতের ফল হল টাকা। সেই ফল জ্ঞানীর হাতে তুলে দিলে তিনি সেটা পরমানন্দে কাজে লাগাবেন এবং শুধু তাই নয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় জ্ঞানীরা অর্থ খরচ করেন ধনীদের থেকেও ভালো পথে এবং উত্তম পদ্ধতিতে। অন্যদিকে জ্ঞানচর্চার ফল যে পুস্তকরাজিতে সঞ্চিত থাকে, তা ধনীদের হাতে গায়ে পড়ে তুলে ধরলেও তাঁরা তার সঠিক ব্যবহার জানেই না, কারণ তাঁরা বই পড়েন না। পন্ডিতের কথার সারার্থ হল-জ্ঞানার্জন ধনার্জনের থেকেও মহত্তর। এভাবেই লেখক প্রাসঙ্গিক সমস্যাটির সমাধানের পথ পেয়েছিলেন।

কাউকে মোক্ষম মারাত্মক অপমান করতে হলেও তারা ঐ জিনিস দিয়েই করে।’-লেখক কোন্ প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন? কীভাবে তিনি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন? ২+৩=৫

প্রশ্নোদ্ভূত অংশটি সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে। উক্তিটির বস্তা হলেন লেখক স্বয়ং। জ্ঞানের বাহনরূপে পুস্তক সংগ্রহের জন্য প্রকৃত মানুষ অকাতরে অর্থ খরচ করে কিন্তু বাঙালিরা তা করে না। অর্থাৎ বই কিনে পয়সা খরচ করাটাকে অধিকাংশ বাঙালিই অপছন্দ করে। এই বিষয়ে লেখক তাঁর এক বন্ধুর কাছে দুঃখ প্রকাশ করলে, সেই বন্ধু লেখককে একটি গল্প শুনিয়েছিল, সেই গল্পের ড্রইংরুম-বিহারিণীর কাছেও একের বেশি বই কেনা শুধু অর্থের অপচয়। লেখক জানেন বইয়ের প্রকৃত সম্মান করে ফ্রান্স। এই প্রসঙ্গে তিনি প্রশ্নের উক্তিটি করেন।

লেখক তাঁর আপন অভিজ্ঞতা থেকে অনুভব করেছেন যে, ফরাসিরা কাউকে অপমান করতে হলেও বইকেই অস্ত্র হিসেবে প্রয়োগ করে। যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তি তার দেশকে প্রাণ-মন দিয়ে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন; তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেই ব্যক্তির সামনে তার দেশ সম্পর্কে কটূক্তি করা বা দেশকে অপমান করা হলে সেই ব্যক্তি কোনোভাবেই সেটা মেনে নিতে পারবেন না। তাই যে ব্যক্তি দেশপ্রাণ ব্যক্তিকে অপমান করতে চায়, সে অবশ্যই দেশপ্রাণ ব্যক্তির দেশকেই অপমান করবে। নিজের অপমান অনেক সময় চোখ-কান বন্ধ করে মেনে নেওয়া যেতে পারে কিন্তু দেশের অপমান বহুদিন দংশন করবে। ফ্রান্সের খ্যাতনামা সাহিত্যিক আঁদ্রে জিদ তাকে উপহাররূপে দেওয়া বন্ধুদের বই নিলাম ডেকে বিক্রি করে, তার বন্ধুদের এমন অপমান করেছিলেন যে, বন্ধুরা তড়িঘড়ি সেই বইগুলি দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে কিনে নিয়েছিলেন, যাতে ঘটনাটা বেশি লোক জানতে না-পারে। এই ঘটনা থেকেই লেখক প্রশ্নোদ্ভূত সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরী’-র বিশেষত্ব কী ছিল? আঁদ্রে জিদ কীভাবে লেখক বন্ধুদের শিক্ষা দিয়েছিলেন? ২+৩=৫

রম্যরচনাকার সৈয়দ মুজতবা আলী রচিত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধ থেকে মার্কিন সাহিত্যিক মার্ক টুয়েনের নিজের হাতে গড়ে তোলা লাইব্রেরির কথা জানা যায়। আলোচ্য রচনায় লেখক উক্ত লাইব্রেরির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে বলেছেন-লাইব্রেরির মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত গাদাগাদা বই স্তূপীকৃত হয়ে থাকত। মেঝেতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে এত বই ছিল যে কোথাও পা রাখার স্থান ছিল না। তবে লাইব্রেরিতে কোনো সেলফ ছিল না। লাইব্রেরির অধিকাংশ বই-ই বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নিয়ে আর ফেরত না-দেওয়া কিন্তু এই কায়দায় সেলফ সংগ্রহ করা যায়নি।

জিদ-এর অনেক নামকরা লেখক বন্ধু ছিল। একবার জিদ সোভিয়েত রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি প্রাণঘাতী গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তখন প্যারিসের স্তালিনীয়রা গালিগালাজ ও কটূক্তি করে জিদ-এর প্রাণ অতিষ্ট করে তোলে। সেইসময় জিদ-এর অধিকাংশ লেখকবন্ধু নীরব হয়ে ছিলেন, তাঁরা জিদ-এর পক্ষে লড়েননি। বন্ধুদের এমন নেতিবাচক মনোভাব জিদ-এর অহংবোধে • আঘাত করেছিল। এই কারণেই জিদ স্থির করেছিলেন উক্ত বন্ধুদের তিনি একটা শিক্ষা দেবেন। তিনি কাগজে বিজ্ঞাপন দিলেন যে, তিনি তাঁর লাইব্রেরিটি নিলামে বেচে দেবেন। খবরটা শুনে প্রথমটায় প্যারিস মূর্ছা গেলেও পরে তারা ছুটল নিলামখানার দিকে। সেখানে গিয়ে সকলের চক্ষুস্থির। যে-সমস্ত সাহিত্যিক জিদ-এর হয়ে লড়েননি, তাঁরা যেসকল পুস্তক স্বাক্ষরসহ জিদকে উপহার দিয়েছিলেন, জিদ কেবল সেই বইগুলিই নিলামে চড়িয়েছিলেন। খবরটার গুরুত্ব বিবেচনা করে রয়টার সেটা বেতারে ছড়িয়েছে। আবার দৈনিক কাগজেও সেটা সাড়ম্বরে প্রকাশিত হয়েছে। অপমানিত লেখক-বন্ধুরা ডবল, তিন ডবল দামে লোক পাঠিয়ে দ্রুত সেই বইগুলি কিনে নিয়েছিলেন; কারণ এমন খবরটা লোকে যত কম পায় ততই তাঁদের মঙ্গল। এভাবেই জিদ তাঁর লেখক-বন্ধুদের শিক্ষা দিয়েছিলেন।

‘আমাকে খামাখা চটাবেন না।’-বক্তার চটার কারণ কী? ‘বই কেনা’ প্রবন্ধের শেষাংশে লেখক কোন্ গল্পটি উল্লেখ করেছেন? ২+৩=৫

বাঙালির বই কেনার প্রতি অনিহার কথা বলতে গিয়েই লেখক সৈয়দ মুজতবা আলী উক্তিটি করেছেন। লেখক কিছুটা বেদনাহত এই কারণেই যে, বাঙালির জ্ঞানতৃয়া প্রবল অথচ বই কেনার সময়েই তারা নানাপ্রকার অজুহাত তৈরি করে। জ্ঞানতৃষ্ণা আছে অথচ জ্ঞনের আধার যে বই, তা তারা কিনতে চায় না। কেউ কেউ আবার এ কথাও বলে যে, বাঙালির পয়সার অভাব আছে, কিন্তু কোথায় দাঁড়িয়ে বলছে এ কথা-হয় ফুটবল মাঠের সামনে দাঁড়িয়ে বা সিনেমার টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে। এই কারণেই বই কেনার অদ্ভুত অজুহাতের কথায় বক্তা চটে যান।

‘বই কেনা’ প্রবন্ধের শেষাংশে লেখক আরব্য উপন্যাসের একটি গল্প বিবৃত করেছেন। গল্পটি এমন-জনৈক রাজা তাঁর হেকিমের কাছ থেকে বহু দিন ধরে চেষ্টা করেও একটা বই কিছুতেই বাগিয়ে নিতে পারছিলেন না। শেষপর্যন্ত হেকিমকে খুন করে রাজা সেই বই হস্তগত করেন। রাজা সব কিছু ভুলে গিয়ে সেই বই পড়তে থাকেন। বইয়ের প্রতিটি পাতা জুড়ে যাওয়ায় রাজা বারবার আঙুল দিয়ে মুখ থেকে থুতু নিয়ে জোড়া ছাড়িয়ে পাতা ওলটাতে থাকেন। এদিকে হেকিম তাঁর মৃত্যুর জন্য তৈরিই ছিলেন। তিনি তাই নিজের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ারও ব্যবস্থা করে যান। তিনি বইটির প্রত্যেক পাতার কোণে কোণে মারাত্মক বিষ মাখিয়ে রেখেছিলেন। রাজা যখন আঙুলে থুতু নিয়ে বইয়ের পাতা খুলছিলেন, তখন প্রতিবার আঙুলে লেগে বিষ চলে যাচ্ছিল রাজার মুখে। তবে রাজাকে এই প্রতিহিংসার কথাও বইয়ের শেষ পাতায় লিখে গিয়েছিলেন হেকিম। সেটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিষবাণের আঘাতে রাজা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

লেখক প্রবন্ধের শেষাংশে এই গল্পের কথাই উল্লেখ করেছেন।

আরও পড়ুন – রাষ্ট্রের প্রকৃতি প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment