ক্রুসেড কী? এর ফলাফলগুলি লেখো
(1) ক্রুসেড
প্রভু জিশুর স্মৃতিবিজড়িত জেরুজালেম অধিকার করার জন্য খ্রিস্টান ও সেলজুক তুর্কিদের মধ্যে প্রায় দুশো বছর ধরে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলেছিল, তা ক্রুসেড নামে পরিচিত।
(2) ক্রুসেডের ফলাফল
আপাতবিচারে ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধগুলি ছিল দীর্ঘ ব্যর্থতার ইতিবৃত্ত। এর মূল উদ্দেশ্য ছিল জেরুজালেম উদ্ধার; কিন্তু তা সফল হয়নি। তবে ইউরোপীয় সমাজ-সংস্কৃতির উপর এর প্রতিক্রিয়া ছিল সুদূরপ্রসারী।
(1) ব্যাপক ধ্বংসলীলা ও সম্পদের অপচয়: ক্রুসেডের ফলে ধর্মযোদ্ধা ছাড়াও বহু সাধারণ মানুষও মারা যায়। ব্যাপক হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসলীলার পাশাপাশি প্রচুর ধনসম্পত্তির অপচয় হয়, যা এক দুর্দশাপূর্ণ জীবনের সূচনা করে।
(2) ইসলামীয় শক্তির অবদমন: দীর্ঘকালীন ক্রুসেডে অংশগ্রহণের ফলে ইসলামীয় শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে খ্রিস্টান তথা রোমান সম্রাটদের পক্ষে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কনস্ট্যান্টিনোপলে টিকে থাকা সম্ভব হয়।
(3) পোপের ক্ষমতা বৃদ্ধি: পবিত্রভূমি দখলে ব্যর্থ হলেও, ক্রুসেড সংগঠনের ফলে রোমান চার্চ ও পোপ নতুন মর্যাদা ও প্রতিপত্তির অধিকারী হন। সম্রাট বা রাজার পরিবর্তে পোপই বিধর্মীদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান সমাজের সর্বোচ্চ নেতার আসনে অধিষ্ঠিত হন। পোপের ইন্ধনে চার্চ অন্যায়ভাবে অর্থসংগ্রহে লিপ্ত হয়, যা ধর্মসংস্কার আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করে।
(4) মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব: সামন্ততন্ত্রের পতনের পর স্বাধীন কৃষক ও শ্রমিকদের হাতে অর্থের প্রাচুর্য দেখা দেয়, ফলে ইউরোপে মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব হয় এবং তাদের প্রচেষ্টায় ছোটো ছোটো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে।
(5) ভৌগোলিক জ্ঞান বৃদ্ধি: প্রায় দুশো বছর ধরে ধর্মযোদ্ধারা স্থল ও জলপথে জেরুজালেমে আসে। এর ফলে অর্জিত ভৌগোলিক জ্ঞান পরবর্তীকালে সমুদ্রযাত্রা ও ভৌগোলিক আবিষ্কারের পথ নির্দেশ করে।
(6) নবজাগরণ-এর পদধ্বনি: ক্রুসেডের এক যুগান্তকারী ফল ছিল ইউরোপের সমাজ, সাহিত্য, ভাবনাচিন্তার জগতে এক আমূল পরিবর্তনের পূর্বাভাস। প্রাচ্য সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ইউরোপীয়দের মধ্যে নবচেতনার উন্মেষ ঘটায়।
(7) বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশ: ক্রুসেডের হাত ধরে প্রাচ্যের দেশগুলিতে ইউরোপীয় বাণিজ্যের পুনরুজ্জীবন ঘটে। শিল্প ও বাণিজ্যের অগ্রগতির পথ সুগম হয়।
(8) প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের যোগাযোগ: ধর্মযুদ্ধের ফলে প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপিত হয়। ফলে পরোক্ষভাবে এই ক্রুসেড সমস্ত বিশ্বের ইতিহাসকে প্রভাবিত করে।
আরও পড়ুন –
১। সামন্ততন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
২। ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি কী ছিল?
৩। ‘ফিফ’ ও ‘শিভালরি বলতে কী বোঝো?
৪। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পতনের কারণ সম্পর্কে লেখো।
৫। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের ইতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৬। ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের নেতিবাচক প্রভাবগুলি কী ছিল?
৭। পোপতন্ত্রের বিকাশের কারণগুলি লেখো।
৮। ইউরোপে মধ্যযুগকে ‘অন্ধকার যুগ (Dark Age) বলা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
১০। সেন্ট বেনেডিক্ট-এর সংস্কারসমূহ সম্পর্কে লেখো।
১২। টীকা লেখো- ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন।
১৩। ওয়ার্মস-এর চুক্তির তাৎপর্য লেখো।
১৪। ক্রুসেড’ কী?
১৫। ক্রুসেডের ধর্মীয় কারণ আলোচনা করো।
১৬। ক্রুসেড সংগঠনে খ্রিস্টান চার্চের ভূমিকা কী ছিল?
১৭। ক্রুসেডের অর্থনৈতিক কারণ আলোচনা করো।
১৮। ক্রুসেডের সামাজিক কারণ আলোচনা করো।
১৯। সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ক্রুসেডের অন্যতম কারণ ছিল- ব্যাখ্যা করো।
২০। সাধারণ মানুষ কেন দলে দলে ক্রুসেডে যোগ দিয়েছিল।
২১। ক্রুসেডের প্রত্যক্ষ কারণ উল্লেখ করো।
২২। টীকা লেখো – প্রথম ক্রুসেড।
২৩। টীকা লেখো – দ্বিতীয় ক্রুসেড।
২৪। প্রথম চারটি ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
২৫। টীকা লেখো- শিশুদের ক্রুসেড।
২৬। পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম ক্রুসেডের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।