পরোক্ষ গণতন্ত্রের বিপক্ষে যুক্তিগুলি আলোচনা করো
অথবা, পরোক্ষ গণতন্ত্রের অসুবিধাগুলি আলোচনা করো
পরোক্ষ গণতন্ত্রের বিপক্ষে যুক্তিসমূহ
(1) নৈতিক অবক্ষয় ঘটে: গণতন্ত্র নির্বাচনি সাফল্যকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। নির্বাচনি প্রচারে রাজনৈতিক দলগুলি জনসাধারণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, নিজেদের অযোগ্যতা সত্ত্বেও মিথ্যাচারী ও বাক্সটু রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই সাফল্য পান।
(2) গণতন্ত্র ধ্বংসের সম্মুখীন হয়: পরোক্ষ গণতন্ত্রে ব্যক্তি বা নাগরিকের গুণ অপেক্ষা সংখ্যাই বেশি প্রাধান্য পেয়ে থাকে। এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় বাক্যবাগীশ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীবৃন্দ অনেকসময় প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ না করার ফলে গণতন্ত্র ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। এর ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠের নয়, কতিপয় নেতা-মন্ত্রীর স্বপ্নপূরণ হয়, কিন্তু জনগণের স্বপ্নপূরণ হতে পারে না।
(3) নিম্নস্তরের নেতৃত্ব: নির্বাচনি সাফল্যের নিরিখে অনেকসময় অশিক্ষিত ও চতুর ব্যক্তিবর্গ শাসকের পদে আসীন হন। এমন নিম্নমানের নেতৃত্ব সমগ্র জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করতে প্রায়শই ব্যর্থ হয়।
(4) জরুরিকালীন পরিস্থিতিতে পরোক্ষ গণতন্ত্র কার্যকর নয়: পরোক্ষ গণতন্ত্রে জনমতের গুরুত্ব থাকায় যে-কোনো বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণে কালবিলম্ব হয়, তার ফলে জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্তগ্রহণ এই ধরনের শাসনব্যবস্থায় অসম্ভব হয়ে পড়ে।
(5) আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়: এই ধরনের গণতন্ত্রে সর্বোচ্চ স্থানে থাকে সাধারণ জনগণ, যাদের কাছে শাসকগোষ্ঠীকে প্রয়োজনে জবাবদিহি করতে হয়। ফলে বৈষম্যমূলক আচরণ এখানে প্রশ্রয় পায় না। এই কারণেই এখানে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
(6) আমলাতান্ত্রিক শাসনের কুফল: এইরূপ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আমলাতান্ত্রিক শাসনের কুফল ও জটিলতা চোখে পড়ে। অজ্ঞ ও অশিক্ষিতের শাসন, সুযোগ্য নেতৃত্বের অভাব, সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বেচ্ছাচারিতা, স্থায়িত্বের অভাব ইত্যাদি বিষয় এই ব্যবস্থার সাফল্যের পথে প্রধান অন্তরায়।
(7) সুষ্ঠু ভোটপদ্ধতির অনুপস্থিতি: অনেকসময় নির্দিষ্ট কোনো নির্বাচনি এলাকায় নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে সমর্থন জানানোর জন্য জনগণকে বাধ্য করা হয় অথবা উক্ত দলটিকে ক্ষমতায় আসীন করার উদ্দেশ্যে, ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কারচুপি বা দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করা হয়। যাতে এবারের নির্বাচনেও একই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব বহাল থাকে।
(৪) অস্থায়ী নীতি নির্ধারণ: জন প্রতিনিধিগণ সর্বদা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার উদ্দেশ্য দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক স্বার্থের পরিবর্তে কেবলমাত্র স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্যপূরণে দৃষ্টিনিক্ষেপ করে। তাদের এই ধরনের কার্যকলাপ এমন সব প্রীতি নির্ধারণের পথকে প্রশস্ত করে, যা সুস্থায়ী প্রকৃতির হয় না।
(9) দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচার: এইরূপ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের অজ্ঞাতার সুযোগে মুষ্টিমেয় স্বার্থপর নেতা-মন্ত্রীগণ গণতন্ত্রে জনব ল্যাণের নামের অন্তরালে দলগত স্বার্থপূরণে দুর্নীতি ও ভ্রষ্টাচারে লিপ্ত হয়, এর ফলে গণতন্ত্রের আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়।
(10) ব্যয়বহুল শাসনব্যবস্থা: পরোক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা একটি ব্যয়বহুল শাসনব্যবস্থা। সরকারের বিলাসব্যসন, নানান অনুষ্ঠান, রীতিনীতি পালনে সরকারি কোশাগার থেকে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়, ফলে জনগণের প্রকৃত কল্যাণ হয় না।
মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায়, পরোক্ষ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় অসুবিধা লক্ষ করা গেলেও, গণতন্ত্রের সাফল্যের ক্ষেত্রে এইরূপ গণতন্ত্রের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
১। ব্যাপক ও সংকীর্ণ অর্থে গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়? গণতন্ত্রের সর্বাধুনিক সংজ্ঞাগুলি আলোচনা করো
২। গণতন্ত্রের উদ্ভবের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো
৩। গণতন্ত্রের বিকাশ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো
৪। গণতন্ত্রের প্রকৃতি আলোচনা করো
৫। গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
৬। গণতন্ত্র কাকে বলে? এর বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো
৭। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝো? এইরূপ গণতন্ত্রের গুণ বা সুবিধাগুলি আলোচনা করো
৮। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের দোষ বা অসুবিধাগুলি আলোচনা করো
৯। প্রতিনিধিত্বমূলক বা পরোক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়? এইরূপ গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো