প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝো? এইরূপ গণতন্ত্রের গুণ বা সুবিধাগুলি আলোচনা করো

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝো? এইরূপ গণতন্ত্রের গুণ বা সুবিধাগুলি আলোচনা করো

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝো? এইরূপ গণতন্ত্রের গুণ বা সুবিধাগুলি আলোচনা করো
প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলতে কী বোঝো? এইরূপ গণতন্ত্রের গুণ বা সুবিধাগুলি আলোচনা করো

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র

যে শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিকরা মিলিত হয়ে দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করে, তাকে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলা হয়। প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সমস্ত নাগরিকরা এক জায়গায় মিলিত হয়ে আইন প্রণয়ন, শাসননীতি নির্ধারণ, আয়-ব্যয় মঞ্জুর, যুদ্ধ ও শান্তি সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিচারকার্য সম্পাদন করে। সমস্ত নাগরিকই রাষ্ট্রকার্যে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করায় এই শাসনব্যবস্থাকে Participatory Democracy বা অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্রও বলা হয়। মূলত ক্ষুদ্রায়তন রাষ্ট্র ছাড়া প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। প্রাচীন রোম ও গ্রিসের ক্ষুদ্র নগররাষ্ট্রগুলিতে এই শাসনব্যবস্থা প্রচলিত ছিল।

প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের গুণ বা সুবিধা

[1] জনগণই শক্তির প্রয়োগ ও ব্যবহারের অধিকারী: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের সর্বপ্রধান সুবিধা হল, এই ব্যবস্থায় তত্ত্বগতভাবে সার্বভৌম শক্তির অধিকারী জনসাধারণ বাস্তবে ওই শক্তির প্রয়োগ ও ব্যবহারের অধিকারী। এই ব্যবস্থাকে বিশুদ্ধ গণতন্ত্রও বলা যায়, তার কারণ জনসাধারণের ইচ্ছা ও মতামতের ভিত্তিতেই সমগ্র শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়।

[2] প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র সহজ ও সরল: প্রত্যক্ষ গণতান্ত্রিক শাসন সহজ ও সরল এবং কম ব্যয়বহুল। এইরূপ গণতন্ত্রে জনগণ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সহজ, সরল প্রকৃতির হওয়ায় আইন, শাসন এবং বিচার বিভাগের মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায় না।

[3] নাগরিকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিকরা শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে। এর ফলে সে দেশের সমস্যা সম্বন্ধে অবহিত হয় এবং সমাধানের ব্যাপারে একে অপরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নেয়। তাই নাগরিকদের শিক্ষা ও রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি পায়।

[4] দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে শাসক ও শাসিতের সরাসরি সম্পর্ক থাকার ফলে যে-কোনো বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্তগ্রহণ করা সম্ভব হয়। এর ফলে আলোচ্য বিষয়টিকে অন্য কোনো স্থানে প্রেরণ করতে হয় না। ফলে এইরূপ গণতন্ত্রকে অনেকে জরুরি অবস্থার উপযোগী বলে মনে করেন।

[5] সরকারের স্বৈরাচারিতা রোধ: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল স্তরে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকে বলে, সরকার জনদরদি ও জনকল্যাণকামী ভূমিকা পালন করে থাকে। এর ফলে সরকারের স্বৈরাচারিতা জনগণের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।

[6] ব্যয়সাপেক্ষ: এরূপ শাসনব্যবস্থা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ন্যায় ব্যয়বহুল নয়।

[7] আইন প্রণয়ন পদ্ধতি: প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে আইন প্রণয়ন পদ্ধতিটি অত্যন্ত সহজ ও সরল প্রকৃতির হয়ে থাকে। এরূপ গণতন্ত্রে জনগণ নির্দিষ্ট একটি স্থানে সমবেত হয়ে আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। ফলে সময়ের অপচয়ও ঘটে না।

[8] জনগণ দেশপ্রেমে উদ্‌বুদ্ধ হয় : প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রে জনগণকে প্রশাসনিক কার্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়ে সুযোগ দেওয়ার ফলে তারা নিজেদেরকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করে। জনগণ নিজেদের সম্মান ও মর্যাদার ব্যাপারে সচেতন হয়। এর ফলে গভীর দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবাদ জন্ম নেয়।

[9] আমলাতন্ত্রের প্রভাবমুক্ত : প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র আমলাতান্ত্রিক প্রভাব থেকে মুক্ত। কারণ এই শাসনব্যবস্থায় জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো প্রতিনিধিরা তাদের আমলা বা উচ্চপদস্থ কর্মচারী দ্বারা শাসনকার্য সম্পন্ন করে না। এর ফলে জনগণ সরাসরি প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ করে।

[10] বিপ্লবের আশঙ্কামুক্ত: এইরূপ গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ ব্যাপকভাবে অংশগ্রহণ করায় তাদের মধ্যে কোনো দীর্ঘকালীন অসন্তোষ দানা বাঁধতে পারে না, ফলে বিপ্লবের আশঙ্কা এখানে থাকে না।

মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান বিশ্বে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র একেবারে অচল, তবুও আধুনিক গণতন্ত্রের আদিরূপ হিসেবে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যায় না।

১। ব্যাপক ও সংকীর্ণ অর্থে গণতন্ত্র বলতে কী বোঝায়? গণতন্ত্রের সর্বাধুনিক সংজ্ঞাগুলি আলোচনা করো

২। গণতন্ত্রের উদ্ভবের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো

৩। গণতন্ত্রের বিকাশ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করো

৪। গণতন্ত্রের প্রকৃতি আলোচনা করো

৫। গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

৬। গণতন্ত্র কাকে বলে? এর বিভিন্ন রূপগুলি আলোচনা করো

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment