গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো
গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো

গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্যসমূহ

গণতন্ত্রের বেশ কয়েকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের অংশগ্রহণ এবং অধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

(i) গণসার্বভৌমত্ব: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারি কর্তৃপক্ষ জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে এবং টিকে থাকে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণ তাদের এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে।

(ii) আইনের অনুশাসন : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সকল ব্যক্তি এবং সমাজস্থ সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানসমূহ রাষ্ট্রীয় আইনের প্রতি অনুগত থাকে। যে-কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আইনের প্রতি দায়বন্ধশীল থেকে নিজ নিজ কার্যসম্পাদন করতে হয়, অন্যথায় এই আইন বাস্তবে সকলের উপর সমভাবে প্রযুক্ত হয়। একেই আইনের অনুশাসন (Rule of Law) বলা হয়।

(iii) রাজনৈতিক সাম্য : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা মূলত রাজনৈতিক সাম্যের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। রাজনৈতিক সাম্য বলতে, রাজনীতি তথা রাষ্ট্রনীতিতে সকলের অংশগ্রহণের সমান সুযোগসুবিধাকে বোঝায়। প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা ভোটদানের অধিকার, নির্বাচিত হওয়ার অধিকার বা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমান সুবিধা ভোগ করাকেই রাজনৈতিক সাম্য বলে মনে করা হয়। এখানে রাজনৈতিক অংশগ্রহণে জন্মগত বা ধনগত বৈষম্যকে স্বীকার করা হয় না, সকলেই সমমর্যাদা ও সমানাধিকারসম্পন্ন।

(iv) সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন ও সংখ্যালঘু অধিকার সংরক্ষণ : গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তকে অধিক গুরুত্ব দেওয়ার ফলে এই ধরনের শাসনব্যবস্থা সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনে পরিণত হয়। রাজনৈতিক ভোটাভুটিতে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে, সেই দলের নেতা বা নেত্রী সরকার গঠন ও পরিচালনা করার সুযোগ পান। অনেকে তাই মনে করেন, গণতন্ত্র কখনোই সমাজের সমগ্র অংশের শাসন নয়, কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশেরই শাসনমাত্র।**

(v) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন: গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন (Free and Fair Election)। এখানে নির্বাচন প্রক্রিয়াটি নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয়, যাতে রাষ্ট্রের সকল যোগ্য নাগরিক যে-কোনো দলের প্রার্থী কিংবা যে-কোনো দলের সদস্যপদ গ্রহণের সমান সুযোগ ভোগ করতে পারে।

(vi) প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার: গণতন্ত্র বলতে বর্তমানে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই বোঝায়। বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ রাষ্ট্রই বর্তমানে আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে বৃহৎ। ফলত, জনসাধারণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাই আধুনিককালে পরোক্ষ বা প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র (Indirect or Representative Democracy) প্রাধান্য পেয়েছে।

(vii) প্রতিনিধি নির্বাচন: এই শাসনব্যবস্থায় জনগণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করে না। নির্দিষ্ট সময় অন্তর জনগণ সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিনিধিদের দ্বারা শাসনকার্যে অংশগ্রহণ করে। জনপ্রতিনিধিরাই শাসনক্রিয়াকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

(viii) গণঅংশগ্রহণ: গণতন্ত্রে নাগরিকরা কখনও সরাসরি আবার কখনও বা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে থাকে।

(ix) ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির উপস্থিতি: গণতন্ত্রে ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতির (Separation of Powers) উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। অর্থাৎ, সরকারের তিনটি বিভাগ যথা-শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে তাদের কার্যসম্পাদন করে। কিন্তু সরকারের কোনো একটি বিভাগ যাতে স্বৈরাচারী হয়ে না ওঠে বা ক্ষমতা কুক্ষিগত করে না ফেলতে পারে, সেক্ষেত্রে বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্যের নীতি (Checks and Balance)-টিও প্রাধান্য পেয়েছে।

(x) বহুত্ববাদ: আধুনিক গণতন্ত্রের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হল বহুত্ববাদ (Pluralism)-এর স্বীকৃতি। বর্তমানে রাজনৈতিক মতামতের বৈচিত্র্যময়তা, বহুবিধ রাজনৈতিক দলের উপস্থিতি, স্বার্থগোষ্ঠীসমূহের অস্তিত্বকে গণতন্ত্রে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সহাবস্থানকে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।

(xi) দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা: গণতন্ত্রে সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকে। সরকারি কার্যাবলির উপর জনগণের বিশ্বাস সুনিশ্চিত করতে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতেই সরকারকে জনসাধারণের নিকট জবাবদিহি করতে হয়। ফলে সরকারি কার্যের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়।.

(xii) জনসম্মতিতে এবং জনস্বার্থে পরিচালিত: গণতন্ত্রে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রেণির হাতে ন্যস্ত থাকে। কিন্তু, এই শাসনকার্য কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থেই নয়, জনগণের সার্বিক কল্যাণের জন্যও পরিচালিত হয়। এই শাসনব্যবস্থায় সংখ্যালঘু স্বার্থ সংরক্ষণ ও তাদের মতামতকেও স্বীকৃতি প্রদান করা হয়, তাই রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু অংশও গণতন্ত্রকে সমর্থন করে। অর্থাৎ, রাষ্ট্রের সমগ্র অংশই গণতন্ত্রকে সমর্থন করে। এই কারণেই গণতন্ত্রকে জনসম্মতির উপর প্রতিষ্ঠিত সরকার (Government based on Consent) বলে অভিহিত করা হয়।

(xiii) জনমতের গুরুত্ব : গণতন্ত্র যেহেতু জনমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত, তাই অনেকে জনমতকে গণতন্ত্রের প্রাণ বলার পক্ষপাতী। জনমতকে উপেক্ষা করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হতে পারে না। তাই সকল সরকারি সিদ্ধান্ত জনমতের ভিত্তিতে গৃহীত হয়।

(xiv) মানবাধিকারের সংরক্ষণ : গণতন্ত্রের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মানবাধিকারের সংরক্ষণ। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা, বাক্ ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, আইনসভায় মতামত প্রকাশের অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতির মাধ্যমে রাষ্ট্র নাগরিকদের মানবাধিকার সংরক্ষিত রাখার প্রচেষ্টা করে।

আরও পড়ুন – জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment