ভারতের মঙ্গল অভিযান প্রবন্ধ রচনা
“থাকবো নাকো বন্ধ ঘরে দেখবো এবার জগৎটাকে”
-কবি কাজী নজরুল ইসলাম
ভূমিকা
মানুষ সুদূরের পিয়াসী। ক্ষুদ্র গন্ডির মধ্যে মানুষ জীবন কাটাতে চায় না, তাই বার বার চলে যায় গণ্ডিবদ্ধ জীবনের বাইরে। সে দুঃসাহসিক অভিযান করেছে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গের ওপরে, দুর্গম মরু প্রান্তরে এবং সমুদ্রতলে। যা ছিল মানুষের কল্পনায়, তাই সে আপন শক্তির সামর্থ্যে ও দুঃসাহসিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে সম্ভব করেছে। মানুষের এই শক্তির সামর্থ্যে ও দুঃসাহসিক অভিযানের নেশায় সম্প্রতি মঙ্গলগ্রহের অভিযান সফল হয়েছে।
মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে কৌতূহল
গত ১৫০ বছর ধরে মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে পৃথিবীর বিজ্ঞানী, জ্যোতির্বিদ, দার্শনিক, লেখক ও শিল্পীদের কৌতূহলের অন্ত নেই। ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে ইতালির জ্যোতির্বিদ জিওভার্নি বলেছেন, মঙ্গলের বুকে কিছু খাল আছে। মার্কিন জ্যোতির্বিদ লাওয়েন বলেছিলেন, মঙ্গলের অতি বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাই শহরের জল পৌঁছাতে এই খালগুলি কেটেছেন। আমেরিকার মহাকাশবিজ্ঞানীগণ প্রথম মঙ্গলগ্রহের অভিযানে উৎসাহী হয়েছিলেন। ৭০ জন বিজ্ঞানী এই বিরাট কর্মকাণ্ডে ব্রতী হয়েছিলেন।
মঙ্গলগ্রহ অভিযান
আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় পাসাডেনা শহরে মহাকাশবিজ্ঞানীদের সদর দপ্তর নাসা অবস্থিত। এইখান থেকেই বিজ্ঞানীরা মঙ্গলগ্রহের দিকে পাঠালেন পাথফাইন্ডার নামক মহাকাশযান। নাসার বিজ্ঞানীগণ ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে পাথফাইন্ডারকে মঙ্গলগ্রহের মাটিতে অবতরণ করালেন। অবতরণের পর থেকে পাথফাইন্ডার মঙ্গলগ্রহের পাহাড়, মাটি, পাথর সম্পর্কে নানা ধরনের ছবি ও তথ্য পাঠিয়েছেন। নাসার বিজ্ঞানীগণ মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে বিশদভাবে সবকিছু জানাবার জন্য দিবারাত্রি কাজ করে চলেছে। এইজন্য তাঁদের বিশ্রামের অবকাশ নেই।
ভারতের মঙ্গল অভিযান
আমেরিকা, রাশিয়া প্রভৃতি উন্নত রাষ্ট্রে অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করা হলেও মঙ্গল অভিযানে ভারতের সাফল্য সবচেয়ে বেশি। ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৫ নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে পি. এস. এল. ভি. সি.-২৫ রকেটের সাহায্যে ভারতের মঙ্গলযান যাত্রা শুরু করে মহাকাশের দিকে। মাত্র দু-দিনের মধ্যেই ৭ নভেম্বর রকেট পৃথিবী ছাড়ানোর প্রথম ধাপ পেরিয়ে যায়। এইভাবে ১৩ ডিসেম্বর ষষ্ঠ ধাপ পেরিয়ে রকেট অনেকটাই সাফল্যের পথে এগিয়ে যায়, অবশেষে ১ ডিসেম্বর পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়লো মঙ্গলযানটি।
ইসরোর বিজ্ঞানীগণ গভীর উৎকণ্ঠার মধ্যে অপেক্ষা করছিলেন লক্ষ্যপূরণের আশা নিয়ে। ডিসেম্বরের ৪ তারিখে মঙ্গলযানটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলয় ছাড়িয়ে গেল, কিন্তু ১১ ডিসেম্বর যানটিতে কিছু ত্রুটি ধরা পড়ল। বিজ্ঞানীদের মাথায় হাত। শেষপর্যন্ত সব কি ব্যর্থ হবে?
না, অতি দ্রুততার সঙ্গে বিজ্ঞানীরা সেই ত্রুটি দূর করতে সক্ষম হলেন। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুন পুনরায় কিছু ত্রুটি ধরা পড়ল। এবারও বিজ্ঞানীরা দক্ষতার সঙ্গে যানটিকে ত্রুটিমুক্ত করলেন। এইভাবে ৩০০ দিনের অবিরাম যাত্রার পর ২২ সেপ্টেম্বর যানটি পৌঁছে গেল মঙ্গলের অভিকর্ষজ ক্ষেত্রের মধ্যে। তারপর ২৭ সেপ্টেম্বর যানটি সাফল্যের সঙ্গে মঙ্গলের কক্ষপথে স্থাপিত হল। বিশ্বমহাকাশে গবেষণার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত হয়ে গেল ভারতের নাম।
উপসংহার
মঙ্গলগ্রহ নিয়ে বিশ্ববিজ্ঞানীদের কৌতূহলের শেষ নেই। মঙ্গলগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, ভবিষ্যৎ-এ পৃথিবীর মতো সেখানেও প্রাণের প্রতিষ্ঠা সম্ভব কি না? অথবা তার ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা, তার সাফল্য লাভই হল মঙ্গল অভিযানের উদ্দেশ্য। ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর থেকে ভারতীয় ‘কৌতূহল’ তথ্য পাঠাতে শুরু করে। বর্তমানে মঙ্গলের ৫.৮ লক্ষ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ এলাকা জুড়ে অভিযান করছে কৌতূহল। ২.২ মি. ব্যাসবিশিষ্ট হাইগেইন অ্যান্টেনার মাধ্যমে মঙ্গলযানটি যাবতীয় তথ্য পাঠাচ্ছে পৃথিবীতে। ভারত-সহ অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, স্পেন প্রভৃতি দেশ এই মঙ্গলযান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। মঙ্গলযানটি পাঁচ প্রকার যন্ত্রের সাহায্যে নানা ধরনের তথ্য পৃথিবীতে পাঠাবে। মঙ্গলের মাটির গঠন ও ভূতাত্ত্বিক বিষয় নিয়েও গবেষণা চলবে। পৃথিবীতে ভারত সর্বাপেক্ষা কম খরচে মঙ্গল অভিযানের সাফল্য অর্জন করেছে।
আরও পড়ুন –
১। পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
২। পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা
৩। পরিবেশ বনাম উন্নয়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৪। বিশ্ব উষ্ণায়ন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৬। মানবজীবনে পরিবেশের প্রভাব – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৭। বিজ্ঞানচেতনার প্রসারের প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৮। বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১০। খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১১। দেশভ্রমণ – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১২। রক্তদান জীবনদান – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
১৩। বিজ্ঞাপন ও দৈনন্দিন জীবন – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা