পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে প্রবন্ধ রচনা

পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য - মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য – মানস মানচিত্র অবলম্বনে বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

"দাও ফিরে সে অরণ্য 
লহ এ নগর।"

-এ আবেদন কেবল কবির নয়, একবিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদপীঠে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানপ্রযুক্তিনির্ভর মানুষ আবার যেন ডাক দেয় গহন-অরণ্যের। কেন-না সচেতন মানুষের কাছে আজ অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা বারে বারে অনুরণিত হয়। ইঁটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় দারুণ মর্মব্যথায় মানবজীবন ধোঁয়াশায় আচ্ছন্ন ‘চাই মুক্তি, চাই আনন্দ, চাই স্বাস্থ্য, চাই আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু।’ পরিবেশ আর অরণ্য সমার্থক-এ কেবল পুঁথির শব্দমাত্র নয়, জীবনরক্ষায় তথা পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য সদর্থক ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই তো কণ্ঠে কণ্ঠে উচ্চারিত হয়-“একটি গাছ একটি প্রাণ।”

মানবসমাজ ও অরণ্য

পুরাতন প্রস্তুর যুগ-নতুন প্রস্তর যুগ অতিক্রান্ত হয়ে মানবসমাজ পৌঁছে গেল আধুনিক যুগের দ্বারপ্রান্তে। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় সবুজ শ্যামলে ভরা বনানী ক্রমশ বিলুপ্ত হতে লাগল। মানুষ হিংস্র ঘাতকের আসনে বসে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংসে মেতে উঠল। বনজসম্পদ তথা অরণ্যসম্পদ ক্রমে ক্রমে সংকটসীমায় পৌঁছে গেল। যে পরিবেশ থেকে আমরা পেয়েছি বাঁচার রসদ, পথ চলার পাথেয়, বুকভরা নিশ্বাস সেই পরিবেশ তথা অরণ্য আমাদের অতি প্রয়োজনীয়। কারণ প্রাকৃতিক ভারসাম্য (Ecological balance) রক্ষার জন্য অরণ্য অপরিহার্য। অরণ্যসম্পদ না-থাকলে ধু ধু মরুভূমির মতো দগ্ধ হত গোটা দেশ। মাথার ওপর সুনির্মল আকাশে কেবলই প্রশান্তির পরিবর্তে দেখা দিত মৃত্যুর হাতছানি।

বনভূমি সংরক্ষণ

আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর সভ্যতার এক অভিশাপ বনভূমি সংহার। অরণ্যসম্পদ সংরক্ষণ করতে না পারলে একদিন ধ্বংস হবে এই বসুন্ধরা, কেন-না বনভূমি প্রকৃতিকে রাখে ছায়াশীতল। ভূমিকে রক্ষা করে ভূমিক্ষয় থেকে, আর জীবজগৎকে প্রাণের সম্পদ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখে। বিশ্বকবি অনুভব করেছিলেন এ সত্য-বনভূমি বা অরণ্যসম্পদ রক্ষা না করলে তার পরিণাম ভয়াবহ হবে। সেকারণেই তিনি শান্তিনিকেতনে বনমহোৎসবের সূচনা করেছিলেন।

বৃক্ষরোপণ এক মহান ব্রত-সেই ব্রতে সকলকে হতে হবে শামিল। পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ অকাতরে বনভূমি ছেদন। পরিবেশ পরিসেবায় গাছপালার অনন্য ভূমিকা-সেকথা মাথায় রেখে বনসংহারের পরিবর্তে বৃক্ষরোপণ বাঞ্ছনীয়। বনভূমির অপ্রতুলতার কারণে মাঝে মাঝেই শোনা যায় হাতির দল পাহাড়ের বুক ছেড়ে দিয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করে। সুতরাং, যে পরিমাণ অরণ্যভূমি আমাদের প্রয়োজন তার অপ্রতুলতার কারণেই বন্য জীবজন্তু প্রাণের আশ্রয় ছেড়ে ছুটে চলে লোকালয়ের দিকে। তাই বৃক্ষরোপণ ও তার সংরক্ষণ একান্ত প্রয়োজন।

অরণ্যধ্বংসের বিরুদ্ধে অভিযান

পরিবেশ দূষণের ভয়ানক ফল ভোগ করতে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের মানুষকে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ আজ তীব্রতম পরিবেশ দূষণের শিকার। কোটি কোটি বিকলাঙ্গ শিশু আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এক ভয়ংকর প্রশ্নের মুখে-এ বিশ্ব কি শিশুর বাসযোগ্য নয়। নবজাতকের কাছে আমরা কী উত্তর দেব? আগামী দু-তিন দশকের মধ্যেই আমাদের কৃষিযোগ্য বিপুল জমি হবে বন্ধ্যা। পরিবেশকে রক্ষা করতে হলে ‘অরণ্যসপ্তাহ’ পালন অবশ্য কর্তব্য। সামাজিক বনসৃজন প্রকল্প ও বন সংরক্ষণ কর্মসূচি সার্বিকভাবে রূপায়িত করতে হবে। একটি গাছ নিধনের কারণে কমপক্ষে ছ’টি গাছ রোপণ করতে হবে। এলাকাভিত্তিক রাস্তার ধারে, পার্কে প্রভৃতি জায়গায় নতুন নতুন গাছ লাগাতে হবে ও রক্ষা করতে হবে। কেবলমাত্র স্লোগান বা দেওয়াল লিখনই নয়, বাস্তবায়িত করতে হবে নানা কর্মসূচি। কেন-না মানবের প্রাণ বাঁচবে গাছপালা বাঁচলে তবেই তাই আমাদের মনে রাখতে হবে-

"জীবনের জন্য অন্ন
অন্নের জন্য বৃষ্টি
বৃষ্টির জন্য বৃক্ষ
বৃক্ষ লাগান
প্রাণ বাঁচান।"

উপসংহার

এক সুগভীর আত্মিক চেতনার যোগ মানুষ ও অরণ্যের মধ্যে। তপোবনের আশ্রমিক পরিবেশ থেকে আধুনিক সভ্যতার কম্পিউটারচালিত দিন-দুনিয়ার সঙ্গেও অরণ্য ও মানবসমাজের মধ্যে নিবিড়তর যোগ। তবুও মানুষই ধ্বংসসাধনে প্রমত্ত হয়েছে বারে বারে। ‘একটি গাছ একটি প্রাণ’-এই সার্বিক চেতনার প্রসার ঘটাতে হবে অনুকূল পরিবেশ রচনার কারণে। কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজ্য সরকারের বনসুজনের নানা প্রকল্পের সঙ্গে আমাদেরও সমানভাবে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। কারণ পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের, পরিবেশ দূষণ রোধের দায়িত্ব আমাদের সকলের। তাই সমবেত শুভ চেতনার উজ্জীবনে ধ্বংসের প্রান্তরে দাঁড়িয়েও ‘আমরা করব জয় নিশ্চয়’।

আরও পড়ুন – আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment