নায়ক ও তার দুই সঙ্গীর গোরুর গাড়িতে করে যাওয়ার অভিনব অভিজ্ঞতার বর্ণনা দাও।
গোরুর গাড়ির আবির্ভাৰ
প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত ‘তেলেনাপোতা আবিষ্কার’ গল্পে তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য মহানগরী থেকে ভিড়ে ঠাসা বাসে ঘণ্টা দুয়েক যাত্রার পর রাস্তার মাঝখানে নেমে পড়তে হয়। বড়ো রাস্তা থেকে নেমে এক ভিজে জলার কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা শুরু হয়। ক্রমে অন্ধকার ও মশাদের ঐকতান তীক্ষ্ণ হয়। যাত্রীরা বড়ো রাস্তায় উঠে ফিরতি বাস খুঁজবেন কি না এমন ভাবনার উঁকিঝুঁকির মধ্যেই কাদাজলের নালা যেখানে জঙ্গলে হারিয়েছে সেখান থেকে ভেসে আসে শ্রুতিবিস্ময়কর অপরূপ এক আওয়াজ। যেন তা বোবা জঙ্গলের অমানুষিক কান্না। শব্দের ইঙ্গিতে অপেক্ষমানরা চঞ্চল হন এবং আবছা অন্ধকারে প্রথমে ক্ষীণ আলো ও পরে গোরুর গাড়ির দেখা মেলে।
“যেমন গাড়িটি তেমনই গোরুগুলি। মনে হবে পাতালের কোন বামনের দেশ থেকে গোরুর গাড়ির এই ক্ষুদ্র সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি বেরিয়ে এসেছে।”
যাত্রাবর্ণনা
গোরুর গাড়িতে উঠে ছইয়ের ভিতর প্রবেশ করে তিন জোড়া হাত-পা, তিনটি মাথা নিয়ে স্বল্পতম স্থানে সর্বাধিক বস্তু স্থাপনের সমস্যার মীমাংসা করতে হয়। গোরুর গাড়ি একই পথে জঙ্গলে ফেরে। মনে হয় ঘন অন্ধকার জঙ্গল যেন সংকীর্ণ সুড়ঙ্গের পথে একটু একটু করে উন্মোচিত হচ্ছে। অন্ধকারের দেয়াল যেন অভেদ্য তবু অবিচল গতিতে গাড়িটি এগিয়েই যায়। হাত-পা-মাথা যথোচিত সংস্থান বিপর্যস্ত হবে ভেবে কিছুক্ষণ অস্বস্তি, বন্ধুদের সঙ্গে অনিচ্ছাকৃত সংঘর্ষ তারপর ক্রমে চেতনার শেষ অন্তরীপটিও নিমজ্জিত হয়। চেতনার সেই আচ্ছন্নতা ভাঙে ক্যানেস্তারার বিকট শব্দে। গাড়োয়ান জানায় বাঘ তাড়াতেই সে এমন আওয়াজ করছে। এরই মধ্যে গোরুর গাড়ি বিশাল মাঠ পার হয়। কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের আলোয় দু-পাশে মৌনপ্রহরীর মতো প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষকে মহাকালের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। দু-তিন বার মোড় ঘুরে গাড়ি থামে। নানা স্থান থেকে হাত-পাগুলো কুড়িয়ে কাঠের পুতুলের মতো আড়ষ্টভাবে যাত্রীরাও একে একে নামেন।
আরও পড়ুন – আগুন নাটকের বড়ো প্রশ্ন উত্তর