মঙ্গলের পথে ভারত প্রবন্ধ রচনা 800+ শব্দে

মঙ্গলের পথে ভারত প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে মঙ্গলের পথে ভারত প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

মঙ্গলের পথে ভারত প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের পথে ভারত প্রবন্ধ রচনা
মঙ্গলের পথে ভারত প্রবন্ধ রচনা

মঙ্গলের পথে ভারত প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

সৃষ্টির প্রথম লগ্ন থেকে মানুষের কৌতুহল লাল গ্রহ মঙ্গল সম্পর্কে। যুগ যুগ ধরে কল্পনায় ভর দিয়ে মহাকাব্য বেদ পুরাণ এমন কি জ্যোতির্বিদরাও মঙ্গলকে দেবতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শুধু যে বৈদিক যুগে তা নয় সুমেরীয় যুগেও মঙ্গল আকাশ পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। ব্যাবিলনের মানুষ মঙ্গলের নাম রেখেছিলেন নেগাল। নেরগাল ছিলেন বীর। গ্রীসদের কাছে মঙ্গল আরেস নামে পরিচিত, যুদ্ধ ও সর্বনাশের সূচক। হোমারের বর্ণনায় আরেস খুনি। রোমানরা এই লাল গ্রহটির নাম রাখেন মার্স, যা যুদ্ধ দেবতা হিসাবে পরিচিত।

মধ্যযুগ পর্যন্ত মঙ্গলের গতিবিধি দেখে জ্যোতিষিরা ভবিষ্যৎ গণনা করে বলতেন-মঙ্গল নির্দিষ্ট পথে চললে যুদ্ধ জয় হবে, আর অদ্ভুতভাবে চললে হবে পরাজয়। ১৬০০ সালে দূরবীন আবিষ্কার হয়। ১৬০৯ সালে কেপলার বললেন বৃত্তাকারে নয়, উপবৃত্তাকারে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে গ্রহ। তার আগে কোপারনিকাস বলেছিলেন-সব গ্রহ বৃত্তাকারে ঘুরছে। ১৮৭০-এর দশকে ইতালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী জিয়োভানি শিয়াপারেনি দূরবীনের সাহায্যে দেখলেন মঙ্গলগ্রহের গায়ে গর্ত বা খাদ।

মঙ্গলগ্রহে অভিযান

রাশিয়া পাঁচবার মহাকাশ অভিযানের ব্যবস্থা করেও সফল হলেন না। ১৯৬৪ সাল থেকে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা নাসা উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে আসেন। ১৯৭১ সালে নাসা প্রেরিত মেরিনার ৯ মঙ্গল সম্বন্ধে ৭৩০০-এর বেশি ছবি তুলে মঙ্গল সম্বন্ধে নতুন তথ্যের সন্ধান দিল। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে নাসার পাঠানো ভাইকিং মঙ্গল গ্রহে প্রাণের কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি। ১৯৯৯ সালে নাসা মার্স পাথফাইন্ডার নামে ল্যান্ডার পাঠায়। প্রায় ৬৮ কোটি কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পাথফাইন্ডার যখন মঙ্গলের আবহাওয়ায় প্রবেশ করল তখন তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ছাব্বিশ হাজার চারশত ষাট কিলোমিটার। আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে অভিযান চালিয়ে সফল হয়েছে।

২০০১ সালে নাসা প্রেরিত মার্স ও ভাইকিং মঙ্গলে অবতরণ করে বরফে হাইড্রোজেনের সন্ধান পায়। নাসা ২০০০ সালের ১০ই জুন ও ৭ জুলাই পাঠায় স্পিরিট ও অপারচুনিটি। মঙ্গলের মাটি স্পর্শ করে ২০০৪ সালের ৩রা জানুয়ারি স্পিরিট ও তার তিন সপ্তাহ পরে অপারচুনিটি। অপারচুনিটি ২০০৪ সালের ২৪শে জানুয়ারি মঙ্গলের বিশাল গহ্বরে নেমে জেরোমাইট নামে খনিজ পদার্থের সন্ধান পেয়েছে যা আগ্নেয়গিরির লাভা বা উষ্মপ্রস্রবণের জলে থাকে। এইভাবে নানা অজানা তথ্যের সন্ধান বিজ্ঞানীরা পান।

মঙ্গলে কিউরিওসিটি

মঙ্গলে নেমেছে নাসা প্রেরিত যন্ত্রচালিত মহাকাশযান কিউরিওসিটি যা আকাশে পাড়ি দিয়েছিল ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে। প্রায় ৬৮ কোটি কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে মঙ্গলে নামে ২০১১ সালের ৬ আগষ্ট দক্ষিণ গোলার্ধে গেলক্রেটার নামক গহ্বরে। এই গহ্বর বা খাদের গা বেয়ে খাড়া উঠে গেছে ৪-৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১৫৪ কিলোমিটার ব্যাসের প্রকান্ড পর্বত। সৌরজগতের লাল গ্রহ নিয়ে বৈজ্ঞানিক মহলের উত্তেজনা তুঙ্গে, কিউরিওসিটির লক্ষ্য মঙ্গলের আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ। ছোটো গাড়ির মতো দেখতে ২৫০ কোটি ডলারের মহাকাশ যানটি রোবট চালিত। পাসাদেনা জেট প্রেপালশন ল্যাবরেটরির অ্যালেন চেন জানালেন, ‘টাচডাউন- কনফার্মড’।

কিউরিসিটিকে মঙ্গলে পাঠানোর উদ্দেশ্য

কিউরিওসিটির সরকারি নাম মঙ্গল বিজ্ঞান গবেষণাগার। ছোটোখাটো স্পোর্টস কারের মতো দেখতে এই মহাকাশযানটির ওজন ১ টন। চালিত হয় পরমাণু শক্তিতে। তাতে আছে বিশেষ ধরনের ক্যামেরা ও আবহাওয়া গবেষণার যন্ত্রপাতি, রোবট-হাতে শক্তিশালী ড্রিল, লেসাররশ্মি দিয়ে দূরের পাথর ফাটানোর ব্যবস্থা। কিউরিওসিটির উদ্দেশ্য মঙ্গলে প্রাণের উপাদান, যেমন কার্বন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও অক্সিজেন প্রভৃতি আছে কিনা তার অনুসন্ধান করা। আগামী দু’বছর ধরে আটানব্বই মাইল ‘গ্রেল গহ্বর’ চষে বেড়াবে ছয় চাকার ‘কিউরিওসিটি’ রোভার।

কিউরিওসিটির কাজ কিউরিওসিটির মূল উদ্দেশ্য, (১) মঙ্গলে কখনও প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কিনা তা দেখা, (২) মঙ্গল গ্রহের আবহাওয়া বিশ্লেষণ, (৩) ভূত্বকের পুঙ্খানুপুঙ্খ অনুসন্ধান, (৪) মঙ্গলের মাটিতে মানুষের পা রাখার পরিকল্পনার প্রস্তুতির পর্যবেক্ষণ করা পরবর্তী অভিযানের জন্য। এইসব উদ্দেশ্যকে সফল করতে হলে কিউরিওসিটিকে লক্ষ্যপূরণ করতে হবে মঙ্গলপৃষ্ঠের ভূ-তাত্ত্বিক উপকরণগুলির গঠন বিশ্লেষণ, প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক ব্লক অনুসন্ধান, মঙ্গলের মাটি ও পাথরের রূপান্তরের পদ্ধতি অনুসন্ধান, মঙ্গলের আবহাওয়া পরিবর্তনের পদ্ধতি বিশ্লেষণ, জল ও কার্বন-ডাইঅক্সাইড চক্রের বর্তমান অবস্থা নিরূপণ ও মঙ্গলপৃষ্ঠের বিভিন্ন ধরণের বিকীরণের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ।

মঙ্গলের পথে ভারত

২০১৩ সালের ৫ই নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে সফলতার সাথে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ৪৬০ কোটি টাকা খরচে নির্মিত ভারতের মহাকাশ যান। আমেরিকার নাসা প্রেরিত মাভেন (MAVEN) ২২শে সেপ্টেম্বর মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছায় যার নির্মাণ খরচ ৪৮০০ কোটি টাকা। ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইশরোর বিজ্ঞানীরা উল্লসিত এজন্য যে ডিসেম্বরের রাত ১২টা ৪৯ মিনিটে মহাকাশযানের ইঞ্জিন চালু করে ২৩ মিনিটের মধ্যে মঙ্গলের যাত্রাপথে ‘ট্রান্স মার্সিয়াল অরবিট’, স্থাপন করে পৃথিবীর মহাকর্ষ বল কাটিয়ে সেকেন্ডে ১২ কিলোমিটারের কাছাকাছি বেগে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে ছুটে চলেছে সাফল্যের সাথে। এরপর প্রায় ৩০০ দিনের যাত্রাপথ শেষে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল ৭টা ১২ মিনিটে মঙ্গলের কক্ষপথে সফলতার সাথে পৌঁছায়।

আমেদাবাদের কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’র অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক উপেন্দ্রযোগী বলেছেন, পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে বেরোনোটা খুবই কঠিন ছিল। এর আগে চিন চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এই কাজে ইসরো সফল হওয়ায় প্রযুক্তিগত দিক থেকেও কৃতিত্ব অর্জন করেছেন বিজ্ঞানীরা। চিন বা জাপানের অভিযানের অনেকটাই নির্ভর করেছিল উন্নত দেশগুলির প্রযুক্তির ওপর। মহাকাশে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ কিছু ক্ষেত্রে নাসার সাহায্য নিলেও মহাকাশযান ও তার যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে ইসরো নিজেরাই এবং অনেকটাই কম খরচে।

মঙ্গলের যাত্রাপথে সৌরঝড় বা তড়িতাহত স্রোতের সামনে পড়া প্রভৃতি বাধা আসতে পারত। তবে মঙ্গলযানের গায়ে তেজস্ক্রিয়তা সহ্য করার মতো চাদর চাপান হয়। পৃথিবীকে ঘিরে রয়েছে ‘ভ্যান আলেন রেডিয়েশন বেল্ট’ নামে একটি তেজস্ক্রিয় কণার ফিতে। মঙ্গলযান তা ভালোভাবেই অতিক্রম করেছে। মহাকাশ গবেষণায় এবার ভারতকে পাশে পেতে চাইছে সব দেশ। লাল গ্রহের উদ্দেশ্যে ভারতীয় মঙ্গলযান ‘মার্স অরবিটার’-এর অভিযানের সফল সূচনা মহাকাশচর্চার ক্ষেত্রে এক নতুন মাইলস্টোন সৃষ্টি করেছে।

উপসংহার

পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপে মানুষের স্থান অকুলানের কথা সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। আমরা আশাবাদী। হয়তো একদিন লালগ্রহ মঙ্গলের বরফের বিভাজন ঘটিয়ে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন তৈরি করে মানুষ সেখানে উপনিবেশ গড়ে তুলবে। প্রথম প্রচেষ্টায় ভারতের এই সাফল্য ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করল।

আরও পড়ুন – বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment