জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা

জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা

জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব প্রবন্ধ রচনা

জনজীবনে দূরদর্শনের প্রভাব

সূচনা

দূরদর্শন বিজ্ঞানের জয়যাত্রার অন্যতম সাফল্যের দিচিহ্ন। দূরকে নিকট করার অদম্য আকাঙ্খা থেকে আবিষ্কৃত হয়েছিল টেলিগ্রাফ, টেলিফোন। ধীরে ধীরে মানুষের হাতে ধরা পড়ল যেদিন ইথার ও ইলকট্রনের গোপন রহস্য সেদিন বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় সংযোজিত হলো এক নতুন অধ্যায়। টেলিগ্রাফ, টেলিফোনের সাফল্যে দূর থেকে ভেসে আসা শব্দকে গ্রাহক যন্ত্রের সাহায্যে মানুষ ধরতে সক্ষম হয়েছিল, কিন্তু শুধু কণ্ঠস্বর নয় দূরবর্তী কোনো কিছুর প্রতিচ্ছবি ও সে প্রত্যক্ষ করতে চাইল।

আবিষ্কার

এই বিস্ময়কর আবিষ্কারটি করতে সক্ষম হয়েছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী ফর্ণ। তিনি ১৯২২ সালে বিনা তারে ইতালি থেকে ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যে কতকগুলো ছবি পাঠাতে পেরেছিলেন। ১৯২৪ সালে মার্কিন বিজ্ঞানী রেঞ্জার দক্ষতার সাথে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপার থেকে এপারে কতকগুলি ছবি পাঠিয়ে আরও কিছুটা ত্বরান্বিত করেন দূরদর্শন আবিষ্কারকে। বর্তমানের টেলিভিশন আবিষ্কার করেন ১৯২৭ সালে স্কটল্যান্ডের অধিবাসী জন বেয়ার্ড। এই আবিষ্কারের ফলে সুদূর বর্হিবিশ্বও ধরা পড়ল প্রত্যেক ব্যক্তির কাছে, সে ঘরে বসে দূরদর্শন বা টেলিভিশনের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখছে ও যে কোন ব্যক্তি, বস্তুর আচার-আচরণ-জীবজন্তুর ছবি ভেসে উঠছে টেলিভিশনের পর্দায়।

কলা-কৌশল

দূরদর্শনের আবিষ্কারের জন্য জন বেয়ার্ডের কাছে বিশ্ববাসী কৃতজ্ঞ। দূরদর্শন, বেতার-যন্ত্রও চলচ্চিত্রের সমসাময়িক কার্যকারিতার আশ্চর্য যোগফল। উচ্চশক্তি ট্রান্সমিটারের সাহায্যে পৃথিবীর কোন শব্দ মহাশূন্যের ঈথার- সমুদ্রে প্রেরিত হয়। সেই সঙ্গে এক উচ্চশক্তি সম্পন্ন ক্যামেরার সাহায্যে ঊধের্বর ঈথার-লোকে প্রেরিত হয় ক্রমান্বয়ে তড়িত-গতিতে-গৃহীত সংখ্যাতীত আলোকচিত্র। তারপর এক বিশেষ প্রকারে প্রস্তুত গ্রাহক-যন্ত্রের দর্পণে আলোকচিত্রগুলির ক্রমিক প্রতিফলন এবং তার সঙ্গে গৃহীত শব্দের হয় সম্প্রচারণ। ফলে কোন দূরবর্তী স্থানের চলমান ও নিশ্চল ব্যক্তি বা বস্তুর গৃহীত এবং প্রেরিত চিত্র ও শব্দ সম্ভার নিমেষের মধ্যে এই যন্ত্রে এসে পরিদৃশ্যমান ও সরব হয়ে ওঠে।

ব্যবহার পৃথিবীতে

স্বল্পকালের মধ্যেই দূরদর্শনের ব্যবহার পৃথিবীতে সকল উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মহাকাশ-অভিযানে তার ছিল একমাত্র সংযোগ-সূত্র। চন্দ্রালোক ও মঙ্গলগ্রহ বিজয়ে অত্যন্ত সাফল্যের ও নিষ্ঠার সাথে মর্ত্যবাসীদের দৃষ্টির সামনে দূরদর্শন প্রতিটি বিষয়ের চিত্র তুলে ধরেছে। শিক্ষা-বিস্তারে, জন-সংযোগ এবং আনন্দ-বিতরণে দূরদর্শনের ভূমিকা আজ খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছে।

স্বপ্ন ও সফলতা

মানুষের যুগ যুগান্তরের স্বপ্ন ও কল্যাণ আজ দূরদর্শনের মাধ্যমে মূর্ত হয়ে উঠছে চোখের সামনে। মহাভারতে উল্লেখ আছে যে সঞ্জয় ধৃতরাষ্ট্রকে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের বর্ণনা করে শুনিয়ে ছিলেন দূরে থেকেও। যতদিন দূরদর্শন আবিষ্কার হয়নি ব্যাপারটি অলৌকিক মনে হত। এখন আর তা কেউ ভাববে না বরঞ্চ বলবে, দূরদর্শন-বর্ণিত সেই দৃশ্যশক্তি বিজ্ঞান-সিদ্ধ মূর্ত প্রতীক। এখন পৃথিবীর অধিবাসীদের আমোদ-প্রমোদ ও অবসর-বিনোদনের মূল্যবান উপকরণরূপে ব্যবহৃত হচ্ছে দূরদর্শন।

উপসংহার

ভারতীয় দূরদর্শন রুচি-বিকৃতির রাহুগ্রাসে পরিণত হয়েছে, যৌনতা, হিংসা এবং অপরাধের কলাকৌশল বর্তমান বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রধান আকর্ষণীয় বেসাতী। যার ফলে দর্শক-চিত্তে ব্যাপক বিস্তার লাভ করছে যৌনতা, হিংসা, অপরাধ প্রবণতা প্রভৃতি। বহুক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান সেন্সার বোর্ড ফিল্মের গুণমান বিচার করে তাকে প্রদর্শনীয় ছাড়পত্র প্রদান করে। বর্তমান চলচ্চিত্রে নির্বিচারে প্রদর্শিত হচ্ছে পানশালা ও অপরাধ জগতের নানা ঘটনার কথা যা ছোটো-বড়ো সকলের মনে বিপরীত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। তার সাথে হাত মিলিয়েছে দায়িত্ববোধহীন বানিজ্যিক জগৎ। যার ফলে নক্কারজনক ভাবে অশ্লীল দৃশ্যাবলী দূরদর্শনের মাধ্যমে সহজে প্রবেশাধিকার লাভ করছে জনসাধারণের বৈঠকখানায়, শয়নকক্ষে। সবচেয়ে বেশি তার শিকার হচ্ছে তরুণ-তরুণী ও যুবসমাজ। দূরদর্শনের সুফল নির্ভর করছে তাকে কিভাবে ব্যবহার করা হবে তার ওপর। তাই এসব বিষয়ে দূরদর্শন কর্তৃপক্ষকে সতর্ক হতে হবে।

আরও পড়ুন – বৈদ্যুতিন গণমাধ্যম ও সংবাদপত্র প্রবন্ধ রচনা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment