ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে মোক্ষলাভের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে মোক্ষলাভের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে মোক্ষলাভের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো
ভারতীয় নীতিশাস্ত্রে মোক্ষলাভের উপায়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো

মোক্ষলাভের উপায়

আমাদের জীবনের চরম উদ্দেশ্যকেই (Highest end) বলা হয় পুরুষার্থ। পুরুষার্থ সাধন করা আমাদের একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র ধর্ম। যে-কোনো একটি কর্মের দ্বারা পুরুষার্থ সাধন করা সম্ভব নয়। পুরুষার্থ সাধনের জন্য ক্ষুদ্র থেকে উচ্চ, উচ্চ থেকে উচ্চতর বহু উদ্দেশ্য অনিবার্যরূপে সাধন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল- আমাদের জীবনের পরম উদ্দেশ্য কী? মানবজীবনের পরম উদ্দেশ্য হল মোক্ষলাভ।

ভারতীয় নীতিবিদ্যায় মোক্ষলাভের জন্য প্রধানত তিনটি উপায় পরিলক্ষিত হয়। যথা- জ্ঞানমার্গ, কর্মমার্গ এবং ভক্তিমার্গ।

জ্ঞানমার্গ

ভারতীয় নীতিবিদ্যায় জ্ঞানবাদীরা মনে করেন জ্ঞানমার্গই মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ উপায়। প্রকৃত জ্ঞানলাভেই জীব মোক্ষলাভ করে। তারা বলেন জ্ঞানেই মুক্তি (জ্ঞানাৎ মুক্তিঃ), কর্মে নয়। কারণ কর্ম জীবের বন্ধন সৃষ্টি করে। যাগযজ্ঞাদি কর্ম ফলপ্রদ, কিন্তু মোক্ষপ্রদ নয়। কর্মের ফলে জীব দেহ ধারণ করে। আবার দেহ ধারণ করলেই জীবকে কর্ম করতে হয়। জ্ঞানবাদীদের মতে, আত্মজ্ঞান ভিন্ন জন্ম-কর্মচক্র বা কর্মবন্ধন থেকে মুক্তিলাভ সম্ভব না। ষড়দর্শনের মধ্যে মীমাংসা ব্যতীত সকলে জ্ঞানবাদী। ন্যায়-বৈশেষিকগণ পদার্থের তত্ত্বজ্ঞানের দ্বারা মোক্ষলাভের কথা বলেন। সাংখ্য, যোগ প্রকৃতি ও পুরুষের ভেদজ্ঞানের দ্বারা মোক্ষলাভের কথা বলেন। অদ্বৈতবাদীরা আত্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানের দ্বারা জীবের মোক্ষলাভের কথা বলেন।

কর্মমার্গ

মীমাংসকগণ কর্মমার্গের সমর্থক। কুমারিলের মতে, পুনর্জন্মই দুঃখ-কষ্টের কারণ এবং পুনর্জন্ম রোধই মোক্ষ। কর্মবাদীদের মতে নিষ্কাম কর্মই মোক্ষলাভের উপায়। রাগ, দ্বেষ ও মোহমুক্ত কর্মই নিষ্কাম কর্ম। গীতায় বলা হয়েছে যে, জীব অনাসক্তভাবে কর্মফলে উদাসীন থেকে এবং ঈশ্বরে সর্বকর্মফল সমর্পণ করে যদি কর্ম করে, তবে সেই কর্ম জীবের বন্ধন সৃষ্টি করে না। ফলে মোক্ষলাভ হয়।

ভক্তিমার্গ

ভক্তিবাদীরা মনে করেন ব্যক্ত ঈশ্বরের উপাসনাই ভক্তিমার্গের প্রাণ। তাদের মতে ঈশ্বরপ্রাপ্তিই মোক্ষ। রামানুজের মতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তিই জীবের মোক্ষলাভের একমাত্র উপায়। ঈশ্বরের নিকট সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করে ঈশ্বরের উপাসনা করাই হল ভক্তি। ভক্তি যখন গাঢ় হয় তখন জীবের ঈশ্বর সাক্ষাৎকার ঘটে। তার ফলে জীব মোক্ষলাভ করে।

জৈন ও বৌদ্ধ দর্শনে মোক্ষলাভের জন্য জ্ঞান ও কর্মের সমন্বয় লক্ষ করা যায়। জৈন দর্শনে ত্রিরত্ন ও বৌদ্ধ দর্শনে অষ্টাঙ্গিক মার্গ মোক্ষলাভের উপায়। তবে শ্রীমদ্ভগবদ্গীতায় জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তির সমন্বয় লক্ষ করা যায়।

আরও পড়ুন – যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ

পদ, বাক্য, বচন, পদের ব্যাপ্যতা, সত্যতা ও বৈধতা প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment