বিদ্যুৎ ও আধুনিক সভ্যতা প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দে

বিদ্যুৎ ও আধুনিক সভ্যতা

বিদ্যুৎ ও আধুনিক সভ্যতা প্রবন্ধ রচনা

সূচনা

আদিম যুগে মানুষ বাস করত বনজঙ্গলে অন্ধকার গুহায়। কাঠের সাথে কাঠে বা পাথরের সাথে পাথরে ঘর্ষণ করে আগুন জ্বালাতে শিখল। এরপরে এল রেড়ির তেলের যুগ। এই তেলে প্রদীপ জ্বলত। কেরোসিন, ডিজেল, স্পিরিট প্রভৃতি আবিষ্কার সভ্যতার অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করল। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে পৃথিবীর রূপ গেল পালটে।

বিদ্যুৎ আবিষ্কার

ঘুড়ি ওড়াতে অনেকেই ভালোবাসে। ফ্রাঙ্কলিন ঘুড়ি উড়িয়েছিলেন বিশেষ এক উদ্দেশ্য নিয়ে। ফ্রাঙ্কলিন ভাবলেন, আকাশের বিদ্যুৎকে যদি ধরে আনা যেত তাহলে খুবই মজা হত। পৃথিবী থেকে অনেক দূরে আকাশ। বিদ্যুৎ ঢেউ খেলে আকাশের গায়ে। ঘুড়ি উড়লে আকাশের সবচেয়ে কাছে পৌঁছে যায়। বিদ্যুৎ চমকালে বৃষ্টি পড়ে। তাই বৃষ্টির সময় ঘুড়ি ওড়লে বিদ্যুৎ ঘুড়ির সূতোর গা বেয়ে হয়তো হাতের মুঠোয় পৌঁছে যেতে পারে। তাই সিল্কের কাপড় দিয়ে ঘুড়ি বানিয়ে তিনি ঘুড়ি আকাশে উড়িয়ে দিলেন যখন বৃষ্টি পড়া শুরু হল। ঘুড়ির সুতো যাতে হাত ফসকে না যায় তাই সূতোর শেষ প্রান্তে একটা লোহার চাবি বেঁধে রাখলেন। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাল। বৃষ্টি ভেজা ঘুড়ি ও সূতোর মাধ্যমে আকাশের বিদ্যুৎ এসে গেল লোহার চাবিতে। ফ্রাঙ্কলিন বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে স্বল্প সময়ের জন্য জ্ঞান হারালেন। জ্ঞান ফিরলে নতুন আবিষ্কারের আনন্দে তিনি আত্মহারা হলেন।

ইতালির বলোনা শহরে লুইজি গ্যালভানি নামে একজন অধ্যাপক বাস করতেন। তাঁর বউ লুসিয়া অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে ব্যাঙের সুপ খেতে দেবেন বলে ব্যাঙের চামড়া ছাড়িয়ে টেবিলের ওপর রেখে তিনি ঘরের বাইরে চলে গেলেন। টেবিলের ওপর অন্যান্য যন্ত্রপাতি ছিল। লুসিয়া ছুরি দিয়ে মরা ব্যাঙ কাটার সময় দেখলেন ব্যাঙের পা নড়ছে। গ্যালভিন একথা শুনে বিস্মিত হলেন। তিনি নুন জলে মরা ব্যাঙ ভিজিয়ে তামার তারে বেঁধে ঝুলিয়ে দিলেন। তলায় রাখলেন লোহার মোটা রড। সেই রড মরা ব্যাঙের দেহে স্পর্শ করালেই মরা ব্যাঙ ছিটকে যেত। কিন্তু তাঁর আবিষ্কার তখন তেমন গুরুত্ব পায়নি। তিনি নিজেও জানতেন না যে তাঁর আবিষ্কার ভবিষ্যতে পৃথিবীতে আনবে যুগান্তকারী বিদ্যুৎ-বিপ্লব বা পৃথিবীর রূপটাই বদলে দেবে। এইভাবে আবিষ্কার হল বিদ্যুৎ।

বর্তমান সভ্যতা বিদ্যুৎ নির্ভর

বিদ্যুৎ ছিল আকাশে। ধরা দিল মানুষের কাছে। বিজ্ঞানাচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বেতার আবিষ্কার করে প্রমাণ করলেন যে এই বিদ্যুতের এক অসীম মহাসমুদ্রে জড় জগৎ নিত্য ভাসমান। বিজ্ঞানের ইতিহাসে সূচিত হল এক স্বর্ণযুগ, মানব সভ্যতার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি-বাস্তবতার অবরুদ্ধ দ্বারগুলো গেল খুলে।

দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের অবদান

এখন বিদ্যুৎ মানব সভ্যতার অপরিহার্য জিয়ন-কাঠি। বিদ্যুৎ মানব-জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের নিপুন কারিগর। বিদ্যুৎ বাতি, টেলিফোন, মোবাইল, বৈদ্যুতিক পাখা, রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট প্রভৃতি বিদ্যুতের অবিস্মরণীয় অবদান। ঘরের কোনে বসে সমস্ত বিশ্বের চিত্র এবং সংবাদ ও পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে। এমন কি বিদ্যুৎ তরঙ্গ পাঠিয়ে বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা করছেন অন্য গ্রহে মানুষের মতো উন্নত প্রাণী আছে কিনা।

বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পরে বিজ্ঞান জগতের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে গেল। গবেষণার ফলে একটার পর একটা নতুন নতুন আবিষ্কার হতে থাকল। মানুষ চাঁদে পা রেখেছে। মঙ্গল গ্রহে মানুষের তৈরী মহাকাশ যান পৌঁছে গেছে। ভারত ও পিছিয়ে নেই। ১৯১৩ সালের ৫ই নভেম্বর ভারতের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে পাঠান হয়েছে মহাকাশযান মঙ্গলের উদ্দেশ্যে। বিদ্যুৎ নানা ধরনের রোগ নিরাময়ে ও ব্যবহৃত হয়। পাখা, এয়ারকন্ডিশন মেশিন, ওয়াশিং মেসিন প্রভৃতি মানুষের জীবনযাত্রাকে করেছে সুখময়। বিদ্যুৎ পৃথিবীকে রাতের অন্ধকার থেকে মুক্ত করে আলোকিত করেছে।

চিকিৎসা বিজ্ঞান ও বিদ্যুৎ

এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মি চিকিৎসা শাস্ত্রে এনেছে বিপ্লব। দেহাভ্যন্তরের সঠিক ছবি তুলতে সাহায্য করে। লেসার-রে আধুনিক শল্য- চিকিৎসার ক্ষেত্রে ঘটিয়েছে বিপ্লব।

উৎপাদন ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অবদান

কলকারখানা, ক্ষুদ্রায়তন ও বৃহদায়তন শিল্পের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের গুরুত্ব খুবই। বর্তমানের যান্ত্রিক সভ্যতা বিদ্যুৎ ছাড়া ভাবাই যায়না। কলকারাখানা চলছে বিদ্যুতের সাহায্যে। বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের সাহায্যে ভূ- অভ্যন্তর থেকে জল কৃষিক্ষেত্রে পৌঁছে দিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে অধিক উপাদানের সুফল উপহার দিয়ে খাদ্যের ঘাটতি মিটাতে সাহায্য করছে।

পরিবহণের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ

পরিবহন ও যানবাহনের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব বিদ্যুৎ আবিষ্কারের পরে। ট্রাম, বৈদ্যুতিক ট্রেন, বৈদ্যুতিক ব্যাটারী চালিত বাস প্রভৃতি দূরকে করেছে নিকট। দ্রুতগামী যানবাহনের মাধ্যমে দূরতম স্থানে আমরা স্বল্প সময়ে পৌঁছে যেতে পারি। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলে ভূ-অভ্যন্তর থেকে প্রাপ্ত জ্বালানি নিঃশেষ হওয়ার ভীতি অনেকটা কমে গেছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহ

আধুনিক বিজ্ঞান বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য খরস্রোতা নদীর জল স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে সন্ধান পেলেন অফুরন্ত জল-বিদ্যুতের। বিদ্যুতের চাহিদা মিটাতে তাই ডি.ভি.সি, দুর্গাপুর; ব্যান্ডেল, সাঁওতালদি, কোলাঘাট প্রভৃতির গ্যাস-টারবাইন ইউনিট, উত্তরবঙ্গে জলঢাকা প্রভৃতি পশ্চি মবঙ্গের বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎস।

উপসংহার

বিদ্যুৎ আমাদের উপকারী বন্ধু। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। অসাবধানতার কারণে অনেকে প্রতিবছর বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারায়। এককথায় বলতে গেতে বিদ্যুৎ আধুনিক মানব-সভ্যতা বিকাশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।

আরও পড়ুন – আধুনিক সভ্যতায় তথ্য-প্রযুক্তির ভূমিকা

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment