ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থায় সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির অসুবিধাগুলি উদাহরণ-সহ আলোচনা করো
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি বা FPTP-র অসুবিধাগুলি হল-
[1] সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভাজন
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির নির্বাচন ব্যবস্থায় রাজনৈতিক দলগুলি সাধারণ ভোটারদের চেয়ে তাদের ‘ভোট ব্যাংক’ গড়ে তোলার দিকে বেশি নজর দেয়। কারণ কোনো রাজনৈতিক দল নিজেদের অনুগত ভোটারদের নিয়ে ‘ভোট ব্যাংক’ গড়ে তুলতে পারলে তার ভোটে জেতার রাস্তা অনেক সহজ হয়ে যায়। এর ফলে সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভাজন ও তোষণের রাজনীতির উদ্ভব ঘটে। এধরনের প্রবণতা সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়।
[2] প্রতিনিধিত্বের অসম ব্যবস্থা
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি বা FPTP-র সবচেয়ে বড়ো অসুবিধা হল, এই পদ্ধতির নির্বাচনের মাধ্যমে সবচেয়ে কম সংখ্যক ভোটারের সমর্থন নিয়ে একজন প্রার্থী জিতে যেতে পারেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে বহুদলীয় ব্যবস্থায় একটি নির্বাচন কেন্দ্রে ভোট ভাগাভাগির সুযোগে একজন প্রার্থীর মোট ভোটের চেয়ে অনেক কম ভোট পেয়ে জিতে যাওয়াটা একমাত্র সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি বা FPTP-তেই সম্ভব। সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা অন্যকোনো ব্যবস্থায় এমনটা ভাবাও যায় না। এই কারণে FPTP পদ্ধতিকে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠের অত্যাচার’ (‘Tyranny of the majority’) বলে অভিহিত করা হয়েছে।
[3] বিপক্ষ ভোটের অবহেলা
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির নির্বাচনে যারা কম ভোট পেয়েছেন, তাদের ভোটের কোনো দাম থাকে না। এরকম দৃষ্টান্ত অনেক আছে যেখানে বিজয়ী প্রার্থী যতসংখ্যক ভোট পেয়েছেন তার চেয়ে তাঁর বিপক্ষে দাঁড়ানো প্রার্থীদের মোট ভোটসংখ্যা বহুগুণ বেশি। বিপক্ষের ভোট ভাগাভাগির কারণে তাঁরা জিততে পারেননি। কিন্তু এটা তো বাস্তব সত্য যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কেন্দ্রের বেশিরভাগ ভোটার বিজয়ী প্রার্থীকে ভোট দেননি। এখন এই বিপক্ষে ভোটগুলি যারা দিয়েছেন তাদের সমর্থনের বা তাদের দেওয়া ভোটের কোনো মূল্য রইল না। বিপক্ষের ভোটগুলি নষ্ট হল। এটি সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির একটি অন্যতম ত্রুটি।
[4] ছোটো দলগুলির পক্ষে অনুপযুক্ত
অনেকে মনে করেন, ছোটো দলগুলির পক্ষে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি উপযুক্ত নয়। তার কারণ হল এধরনের ব্যবস্থায় ছোটো দলগুলি কোনোভাবেই বড়ো দলগুলির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সরকার গড়ার দৌড়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন জিততে পারে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বড়ো দলের সঙ্গে জোট বাঁধা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। এভাবে দরকষাকষির রাজনীতিতে তারা টিকে থাকার চেষ্টা করে।
[5] দলীয় নিয়ন্ত্রণ
সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি বা FPTP-তে অনেক ক্ষেত্রে ভোটারদের পছন্দের কোনো দাম দেওয়া হয় না। অনেক সময় নির্বাচন কেন্দ্রের এলাকার বাইরের কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তিকে যখন কোনো দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড় করিয়ে দেয়, তখন সেই দলের ভোটারদের কাছে দ্বিতীয় কোনো পছন্দের সুযোগ থাকে না।
সবশেষে বলা যায়, এমন কিছু দেশ রয়েছে যারা একসময় তাদের নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতি গ্রহণ করেছিল, পরে তা বর্জন করেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি। আমাদের দেশে ‘ইন্ডিয়ান ল কমিশন’ তাদের 170তম রিপোর্টে (1999 খ্রিস্টাব্দে) এবং 277-তম রিপোর্টে (2015 খ্রিস্টাব্দে) কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতির সঙ্গে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের একটা মিশ্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে।
আরও পড়ুন – ভারতে সহজ সংখ্যাগরিষ্ঠ পদ্ধতিটি উদাহরণ-সহ আলোচনা করো