জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা 500+ শব্দে

জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা

জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা
জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা

জীবনে ও শিক্ষায় বিজ্ঞান চেতনার প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা

মানবসভ্যতা প্রায় দশ হাজার বছরের, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা মাত্র চারশ বছরের। মানুষের কৌতূহলী মনের তৃষ্ণা মেটাতে এগিয়ে এসেছে বিজ্ঞান। বিশ্বের অজানা রহস্যের দ্বার উৎঘাটন করছে বিজ্ঞান, তার হাতে রয়েছে দ্বারোদ্‌ঘাটনের চাবিকাঠি যা বিজ্ঞানের যাত্রার আসল কথা। মানুষ যখন অজানাকে জানতে চায়, বিশ্ব-প্রকৃতির বিস্ময় তার কাছে প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দেয় তখন তার উত্তর খুঁজে দেয় বিজ্ঞান, এই প্রশ্নাতুরতা থেকে জন্ম নিয়েছে বিজ্ঞান-চেতনার। বিজ্ঞান-চেতনার আর এক নাম বিজ্ঞান-মনস্কতা।

বিজ্ঞান-মনস্কতা ও বিজ্ঞান-বিমুখতা

বিজ্ঞান-মনস্কতার পথ খুবই বন্ধুর, কণ্টকাকীর্ণ, দুর্গম, বাধা-প্রতিবন্ধকতাময়। যাঁরা এই পথের যাত্রী তাঁরা নানা বাধা-বিপদ উত্তীর্ণ করে অবশেষে পরেছেন জয়ের টিকা তাঁদের কপালে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, ‘এই বিরাট বস্তু-বিশ্ব আমাদের নানা রকমে বাধা দেয়, কুঁড়েমি করে বা মূর্খতা করে যে তাকে এড়াতে গেছে, বাধাকে সে ফাঁকি দিতে পারেনি, নিজেকে ফাঁকি দিয়েছে; অপরপক্ষে বস্তুর নিয়ম যে শিখেছে, শুধু যে বস্তুর বাধা তার কেটেছ, তা নয়, বস্তু স্বয়ং তার সহায় হয়েছে, বস্তু-বিশ্বের দুর্গম পথে ছুটে চলার বিদ্যা তার হাতে, সকল জায়গায় সকলের আগে গিয়ে পৌঁছতে পারে বলে বিশ্ব-ভোজের প্রথম ভাগটা পড়ে তার পাতে। আর, পথ হাঁটতে হাঁটতে যাদের বেলা চলে যায় তারা গিয়ে দেখে যে তাদের ভাগ্যে হয় অতি সামান্যই বাকি, নয় সমস্তই ফাঁকি।’

অন্ধকার থেকে আলোর উত্তরণের মাধ্যম বিজ্ঞান

যারা বিজ্ঞান থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের মুখ, যারা অন্ধ-কুসংস্কারে নিজেদের আবদ্ধ রেখেছে, তারা জ্ঞানাকাশের একখণ্ড মেঘ দেখে সমগ্র আকাশকে জানার আনন্দে মেতেছে, কুসংস্কারের হাতে সঁপে দিয়েছে নিজেকে, আধুনিক জগতে বাস করেও আদিম অন্ধকারময় কুসংস্কারের কুপমন্ডুকে নিজেদের নিক্ষেপ করেছে। বিজ্ঞান প্রদত্ত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সমৃদ্ধি থেকে গেছে তাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বিজ্ঞান-চেতনাহীন জীবন অচিরে হারিয়ে ফেলে নিজের সুখ-সমৃদ্ধির পথ বালুকাময় মরুর প্রান্তরে। সভ্যতার আলোকহীন জীবনের সাথে তুলনা করা যায় বিবেকহীন পশুর জীবনের সাথে। বিজ্ঞান-চেতনা যুগযুগ ধরে সঞ্চিত অজ্ঞানতা-কুসংস্কারের সৌধকে ভেঙে চুরমার করে আলোকিত জগতে উত্তীর্ণ করেছে সভ্যতাকে।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় মানুষ পা রেখেছে চাঁদে, মানুষের প্রস্তুত মহাকাশ যান পৌছে গেছে মঙ্গল গ্রহে, রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত করে বাড়িয়ে দিয়েছে মানুষের আয়ু, অসম্ভবকে করেছে সম্ভব। মানবজীবনে বিজ্ঞানের অবদান প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানবের অগ্নি আবিষ্কারের যুগ থেকে আধুনিক যুগ পর্যন্ত মানুষের অতন্দ্র সাধনা বিজ্ঞানকে করেছে সমৃদ্ধ, সভ্যতাকে করেছে গতিশীল, সে বশীভূত করেছে বাষ্পীয় শক্তিকে, করায়ত্ত করেছে বিদ্যুৎ-পারমাণবিক শক্তিকে। ডাঙায় ছুটছে যন্ত্রযান, রেল, বাস, জলের ঢেউ জাপটে ধরে জাহাজ ছুটছে, আকাশ দখল করেছে বিমান-পোত, মহাশূন্যে পাড়ি দিয়েছে রকেট-স্ফুটনিক-মহাকাশ যান। বিজ্ঞান অসাধ্যকে জয় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বর্তমান সভ্যতা বহু শতাব্দীর স্বপ্ন ও সাধনার সুফল।

মানুষ যুগ-যুগান্তের স্বপ্ন-সাধনার অনবদ্য ফসল দিয়ে গড়ে তুলেছে সভ্যতার বিশাল মনুমেন্ট, জীবনের বসন্তকে উপেক্ষা করে, নিজের প্রাণশক্তি তিল তিল করে দান করে রচনা করেছে সভ্যতার তিলোত্তমা-মূর্তি। বিজ্ঞান সভ্যতাকে নিবেদন করেছে এগিয়ে চলার গতি, মানুষের হাতকে প্রসারিত করেছে মহাকাশে, মস্তিষ্ককে করেছে নতুন নতুন উদ্ভাবনের আনন্দে ভরপুর, জীবনকে করেছে আনন্দমুখর।

অন্ধ-কুসংস্কার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ

বিজ্ঞানের আসল উদ্দেশ্য কার্য ও কারণের মধ্যে যুক্তির শৃঙ্খলা স্থাপন। ঘটনার পারস্পরিক বিরোধই সৃষ্টি করে রহস্যের জাল, আচ্ছন্ন করে মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধিকে। সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ, গভীর পর্যবেক্ষণ ও কার্য-কারণের মধ্যে যুক্তির শৃঙ্খলা স্থাপনের দ্বারা রহস্যের মায়াময় কুহেলিকা ভেদ করে উদঘাটিত হয় আসল সত্যের দ্বার। বিজ্ঞান পরিচালিত হয় যুক্তিবাদের দ্বারা। ব্যক্তি জীবনে, সমাজ জীবনে, শিক্ষা-দীক্ষায় বিজ্ঞানের সাহচর্য ছাড়া জীবন সুখময় হয় না।

উপসংহার

বিজ্ঞানহীন, যুক্তিবাদের সাহচর্যহীন জীবন হল অজ্ঞতার জীবন, মূঢ়তার জীবন, অন্ধকারময় সভ্যতার আলোকহীন জীবন। অজ্ঞানতা, অন্ধ-কুসংস্কার, অশিক্ষা মানুষকে করে অজ্ঞানতার তিমিরে আবদ্ধ। যে জাতি বিজ্ঞানে যত অগ্রসর সেই জাতি তত উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে গেছে। তাই বিজ্ঞান হল নব-সভ্যতার অগ্রগতির আলোবর্তিকা।

আরও পড়ুন – আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment