বাংলা কাব্য-কবিতার ধারায় কবি সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের কৃতিত্ব বিচার করো
কবির কাব্যগ্রন্থসমূহ
সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের আবির্ভাব ১৮৩৮ সালে। ইনিও কিছুটা পরিমাণে বিহারীলাল বৃত্তেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তাঁর দুটি আখ্যানকাব্য ‘সবিতা সুদর্শন’ (১৮৭০) ও ‘ফুল্লরা’ (১৮৭০) মূলত বিয়োগান্ত বিষয় নিয়ে রচিত। তবে কবির রচনাভঙ্গি অত্যন্ত পরিমিত, সংযত ও ভাবনিষ্ঠ এবং তাঁর কাব্যে রোমান্টিক উচ্ছ্বাস কম। তাঁর ‘মহিলা’ শীর্ষক কাব্যে একজন গীতিকবির যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। যদিও এই কাব্যটি কবির মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।
কাব্যবৈশিষ্ট্য
প্রথমা পত্নীর মৃত্যুর পর কবি সুরেন্দ্রনাথ কিছুকাল দিগ্ভ্রান্তের মতো এলোমেলো জীবন যাপন করেন। বেশ কিছুদিন পরে আবার সুস্থ জীবনে ফিরে আসেন। বিহারীলালের ‘বঙ্গসুন্দরী’ তাঁকে সেসময় ভীষণভাবে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করেছিল। জননী ও জায়ার স্নিগ্ধ প্রভাবের ফলে মানবসংসার ও পুরুষের বুক্ষ-কঠোর জীবন শ্রীময় হয়। অপরদিকে, পুরুষও নারীর মধ্যে একটি উন্নততর নৈতিক আদর্শ দেখে তাঁর সার্বিক সত্তার উন্নয়নে যত্নবান হয়।
আবেগে রোমান্টিক হলেও, প্রত্যয় বা বিশ্বাসের দিক থেকে সুরেন্দ্রনাথ ছিলেন ক্লাসিক। আসলে জীবন ও জগতের প্রতি একপ্রকার আস্তিক্যবাদী যৌক্তিক মনোভাবই হল ক্লাসিকভাবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। আর এই ক্লাসিক মনোভাবের কারণেই তাঁর বাক্সীতি কিন্তু বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছে এবং তাঁর কাব্য প্রকরণে একই সঙ্গে রোমান্টিক চিত্রকল্প ও ভাবাবেগ ফুটে উঠেছে। বিহারীলালের দ্বারা প্রভাবিত হয়েও তাঁর পন্থা ছিল ভিন্ন। তবে বিহারীলালের রোমান্টিক স্বপ্নাভিসার এবং আত্মমগ্নতাই হল সুরেন্দ্রনাথের কবিকর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
মূল্যায়ন
উনবিংশ শতাব্দীর গীতিকবিতার পটভূমিকায় সুরেন্দ্রনাথের কৃতিত্ব সকলেই উপলব্ধি করবেন। অন্যান্য কবিরা যখন রোমান্টিক ভাবাবেগের উচ্ছ্বাসে ভেসে চলেছিলেন তখন সুরেন্দ্রনাথ কিন্তু উচ্ছ্বাসকে অবদমিত করে, বরং আবেগ ও মননকে সমান মূল্য দিয়ে এক ব্যতিক্রমী প্রতিভার পরিচয় দিয়েছিলেন এবং এখানেই তাঁর স্বকীয়তা ও কৃতিত্ব।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর