বাংলা গীতিকাব্যের ধারায় কবি দেবেন্দ্রনাথ সেনের কাব্যপ্রতিভা বিচার করো
কাব্যরচনার প্রেক্ষাপট
দেবেন্দ্রনাথ সেনের আবির্ভাব ১৮৫৮ সালে। বাংলা গীতিকাব্যের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় স্থান অধিকার করে আছেন দেবেন্দ্রনাথ সেন। ইনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক ও বন্ধুস্থানীয়। বাংলা গীতিকাব্যের ক্ষেত্রে তিনি বেশ অভিজ্ঞ ছিলেন। সে যুগের পত্রপত্রিকায় তাঁর অজস্র গীতিকবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। কাব্যরচনার প্রথমদিকে ভাষাভঙ্গিমা ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে কিছুটা মধুসূদনের দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়েছিলেন তিনি।
কাব্যগ্রন্থসমূহ
তাঁর রচিত কাব্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- ‘ঊর্মিলাকাব্য’ (১৮৮১) ‘অপূর্ব বীরাঙ্গনা’ (১৯১২) ‘অপূর্ব ব্রজাঙ্গনা’ (১৯১৩) ‘নির্ঝরিণী’ (১৮৮১) ‘অশোকগুচ্ছ’ (১৯০০) ‘অপূর্ব নৈবেদ্য’ (১৯১২) ‘গোলাপগুচ্ছ’ (১৯১২) প্রভৃতি। এই কাব্যগুলি রবীন্দ্রনাথের যুগেও পাঠককে অভিভূত করেছিল।
কাব্যবৈশিষ্ট্য
দেবেন্দ্রনাথের কবিসত্তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, জগৎ ও জীবনের প্রতি তাঁর প্রসন্ন তন্ময় দৃষ্টি, প্রকৃতি-প্রেম-নারী-সৌন্দর্য প্রভৃতি রোমান্টিক উপাদান, তাঁর কল্পনা বা কল্পনার জগৎকে উদ্দীপ্ত করে তুলত এবং একই সঙ্গে প্রত্যহের সংসার ও জীবনও তাঁকে আকর্ষণ করত। তাঁর কল্পনা বিহারীলালের মতো এক অতীন্দ্রিয় ভাবরসে সমাহিত হতে চায়নি। নারী তাঁর কাছে শুধু বিশুদ্ধ সৌন্দর্যের নিরাবয়ব মূর্তি নয়, বরং জননী ও জায়ার মধ্যেই তিনি জীবনের রোমান্স খুঁজেছেন অবিরত। রোমান্টিক গীতিকবিদের অনুকরণে তিনি কৃত্রিম ব্যর্থতার বিষণ্ণ পরিমণ্ডল সৃষ্টি করে, তার মধ্যে নিজেকে সঁপে দেননি। গার্হস্থ্য জীবনের প্রতি কবির যে ভীষণরকম টান বা মুগ্ধতা ছিল, তার প্রমাণ হল তাঁর শিশু বিষয়ক কবিতা। মূল্যায়ন শিশু বিষয়ক কবিতাগুলিতে শিশুর সরল হাস্যমুখর ছবিটি অধিকতর প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া দেবেন্দ্রনাথের সনেটগুলি এখনও প্রশংসার দাবি রাখে। রচনার পরিমিত গঠন এবং আবেগের সংযম তাঁর সনেটগুলিকে একটা বিশিষ্ট স্থান দিয়েছে। রোমান্টিক ভাবস্বর্গ, আবেগের বন্যাপ্রবাহ, অপ্রাপ্তির হাহাকার, প্রেমের প্রতি তীব্র আসক্তি-এইসমস্ত চিরাচরিত রোমান্টিক প্রকরণের বন্ধন কাটিয়ে দেবেন্দ্রনাথ সেন যেন সহজ জীবনের পরিচিত সুর গেয়েছেন আর তাই তিনি আমাদের কালের এক জনপ্রিয় করি আমাদের কবি।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর