গীতিকাব্যে অক্ষয়কুমার বড়ালের কৃতিত্ব আলোচনা করো
কাব্যরচনার প্রেক্ষাপট
অক্ষয়কুমার বড়ালের আবির্ভাব ১৮৬০ সালে। তাঁর কাব্যজীবন বেশ দীর্ঘ। বিহারীলালকে গুরু হিসেবে বরণ করে নিয়েই গীতিকাব্যের আসরে তিনি অবতীর্ণ হন। রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ কাব্যের যুগেও তিনি বেশ কিছু পুরাতন ভাব-ভাবনার গীতিকবিতা রচনা করেন। তাঁর কবিজীবন ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে বিশেষ কোনো সংযোগ ছিল না। কাব্যরচনার ক্ষেত্রে তাঁর একটি স্বকীয়তা বা নিজস্বতা ছিল। কাব্যের মহাকাশে কল্পনা-কে তিনি উদ্দামভাবে উড়ে বেড়াতে দিয়েছিলেন। অবশ্য বাস্তব জীবনের ক্ষয়ক্ষতিও তাঁর কাব্যজীবনকে মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রণ করেছিল।
কাব্যসমূহ
প্রকৃতি, সৌন্দর্য ও প্রেম-এই ত্রিতন্ত্রীতে তাঁর কাব্যের বীণা সুরময় হয়ে উঠেছিল। আর এদিক থেকে তিনি ছিলেন বিহারীলালের সুযোগ্য শিষ্য। নিসর্গের বিষণ্ণ মাধুরী, বর্ষার ধারাস্নাত, অলস অপরাহ্ন ইত্যাদির বর্ণনায় তিনি রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করেছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রেম সম্পর্কিত কবিতাগুলি হল ‘প্রদীপ’ (১৮৮৪), ‘কনকাঞ্জলি’ (১৮৭৫) ‘ভুল’ (১৮৮৭)।
অক্ষয়কুমারের সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থটি হল ‘এষা’ (১৯১২)। বাংলা সাহিত্যের একখানি অনবদ্য পরিণত মনের শোককাব্য এটি। এই কাব্যেই তাঁর সিদ্ধিপূর্ণতা ও সীমাবদ্ধতা। পত্নীর মৃত্যুতে শোকাহত কবি, সহসা জীবন ও মৃত্যুর যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করেন। এতদিন প্রেম ও প্রকৃতির যে পটভূমিকা তিনি সৃষ্টি করেছিলেন, তার অনেকটাই ভাবাবেগজাত। কিন্তু জীবনের বিয়োগান্ত পরিসমাপ্তি, বিশ্বরঙ্গপটের সামনে তাঁকে নির্বাক বিস্ময়ে দাঁড় করিয়ে দিল। ‘এষা’ কাব্যে তিনি মৃত্যু, অশৌচ, শোক এবং সান্ত্বনা-এই চার পর্বে স্ত্রীর মৃত্যুব্যথাকে অবিস্মরণীয় করে রেখেছেন।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর