আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গীতিকবিতার উদ্ভব ও বিকাশের ধারা সম্বন্ধে আলোচনা করো

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গীতিকবিতার উদ্ভব ও বিকাশের ধারা সম্বন্ধে আলোচনা করো

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গীতিকবিতার উদ্ভব ও বিকাশের ধারা সম্বন্ধে আলোচনা করো
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে গীতিকবিতার উদ্ভব ও বিকাশের ধারা সম্বন্ধে আলোচনা করো

গীতিকবিতার উদ্ভব

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ধারায় গীতিকবিতার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটেছে উনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে। ষোড়শ-সপ্তদশ শতকে সংঘটিত ইংল্যান্ডের রেনেসাঁ বা নবজাগরণের মূল ভাবনায় ছিল মানবতাবাদ। এই ভাবনাই প্রভাবিত করেছিল আধুনিক বাংলা গীতিকাব্যের – ধারাকে। প্রাচীন যুগের চর্যাপদ, মধ্যযুগের বৈয়ব পদাবলি, শাক্তপদাবলিতে গীতিকবিতার বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা গেলেও গীতিকাব্যের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য অর্থাৎ কবির ব্যক্তি-অনুভূতির সাবলীল প্রকাশ এই কাব্যধারায় সুস্পষ্টরূপে লক্ষ করা যায় না। এ ছাড়াও, মধ্যযুগের অধিকাংশ কাব্যই ছিল কাহিনিকাব্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে নবজাগরণের মানবমুখী চিন্তাধারার প্রভাব, কবির ব্যক্তিচেতনার সুস্পষ্ট প্রকাশ ঘটাল-সৃষ্টি হল আধুনিক গীতিকাব্য।

কবি ও কাব্যবিকাশের ধারা

বাংলা কাব্যে ‘চতুর্দশপদী কবিতায়’ প্রথম শোনা গেল বাংলা গীতিকাব্যের সুর। হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, নবীনচন্দ্র সেন, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত প্রমুখ কবিদের কবিতায় গীতিকবিতার মাধুর্য উদ্ভাসিত হল।

কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীর ‘সারদামঙ্গল’, ‘নিসর্গ সন্দর্শন’, ‘সঙ্গীত শতক’, ‘বঙ্গসুন্দরী’ কাব্যগুলি বাংলা গীতিকাব্যধারার ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করল। বিহারীলাল পরবর্তী কবি সুরেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘মহিলা কাব্য’, ‘সবিতা সুদর্শন’, ‘ফুল্লরা’, দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘স্বপ্নপ্রয়াণ’; দেবেন্দ্রনাথ সেনের ‘অশোকগুচ্ছ’; অক্ষয়কুমার বড়ালের ‘এষা’, ‘কনকাঞ্জলি’ কাব্যগুলিও উল্লেখযোগ্য।

বাংলা গীতিকবিতার জগতে রবীন্দ্রনাথের গীতিকাব্যগুলি শুধুমাত্র ভাব এবং রূপ দ্বারা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে বাংলা কাব্যের পরিচিতি এনে দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথের গীতিকাব্যগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-‘প্রভাত সঙ্গীত’, ‘মানসী ‘গীতাঞ্জলি’, ‘গীতিমাল্য’, ‘গীতালি’, ‘নৈবেদ্য’, ‘কল্পনা’, ‘বলাকা’, ‘মহুয়া’ ইত্যাদি। রবীন্দ্র পরবর্তী ধারার কবি কাজী নজরুল ইসলামের কাব্যে ছিল বিদ্রোহের ঝংকার ও গীতিকাব্যের মূর্ছনা। তাঁর ‘ভাঙার গান’, ‘চক্রবাক’, ‘সন্ধ্যা’ প্রভৃতি কাব্যগুলি গীতিকাব্যের ধারাকে সমৃদ্ধ করেছে।

এ ছাড়াও, উনিশ শতকের গীতিকবিতার ধারায় উল্লেখযোগ্য কয়েকজন মহিলা গীতিকবি ও তাঁদের কাব্যগ্রন্থগুলি হল-গিরিন্দ্রমোহিনী দাসীর ‘অশ্রুকণা’; কামিনী রায়ের ‘পৌরাণিকী’, ‘আলো ও ছায়া’; মানকুমারী বসুর ‘প্রিয়সঙ্গ’; স্বর্ণকুমারী দেবীর ‘গাথা’, ‘কবিতা ও গান’ ইত্যাদি।

মূল্যায়ন: বাংলা গীতিকবিতার ইতিহাসে মধুসূদনের ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ থেকে যে ধারার সূত্রপাত হয়েছিল, তা পূর্ণতা পায় বিহারীলাল চক্রবর্তী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল-সহ অসংখ্য কবিদের বাংলা গীতিকবিতায়। কাব্যসৃষ্টির মধ্য দিয়ে বাংলা গীতিকবিতার উদ্ভব ও বিকাশের ধারাটি কোনো একটি রচনাতে সীমাবদ্ধ নয়, সমসাময়িক নানা শিল্পীর রচনাবৈশিষ্ট্য অনুসারে তা ক্রমপরিণতি লাভ করেছে।

আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment