আখ্যানকাব্য কাকে বলে? এই কাব্যের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো
সংজ্ঞা: ‘আখ্যান’ শব্দের অর্থ কাহিনি। পৌরাণিক, ঐতিহাসিক, সমসাময়িক লৌকিক কাহিনি বা কল্পিত কোনো কাহিনিকে কেন্দ্র করে বর্ণনাত্মক রীতিতে যে আদি-মধ্য-অন্ত্যযুক্ত কাহিনিমূলক কাব্য রচিত হয় যা মহাকাব্যোচিত রূপ-রীতির গুণগত বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না-সেইসব বর্ণনাত্মক কাহিনিমূলক কাব্যগুলিকে সাধারণভাবে আখ্যানকাব্য (Narrative Poems) বলা হয়।
উদাহরণ: বাংলা সাহিত্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য আখ্যানকাব্য হল- রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মিনী উপাখ্যান’ (১৮৫৮), মধুসূদন দত্তের ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ (১৮৬০) হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বীরবাহু’ (১৮৬৪), নবীনচন্দ্র সেনের ‘পলাশীর যুদ্ধ’ (১৮৭৫)।
বৈশিষ্ট্য:
• ঐতিহাসিক, পৌরাণিক ও সমকালীন সমাজ থেকে আখ্যানকাব্যের কাহিনি সংগ্রহ করা হয়।
• আখ্যানকাব্যে ঘটনা বা কাহিনি থাকে মুখ্য। চরিত্রগুলির মনোবিশ্লেষণ এখানে গৌণ।
• এই কাব্যের মুখ্য রস হল-বীররস ও করুণরস।
• একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার কথাই এই কাব্যের প্রধান উপজীব্য। তবে ব্যক্তিগত মানসধর্মও প্রচ্ছন্নভাবে সংযুক্ত থাকে।
• বর্ণনাধর্মিতা এই কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
• আখ্যানকাব্যের কাহিনির মধ্যে একমুখী প্রবাহ লক্ষ করা যায়।
• আদি-মধ্য-অন্ত্যযুক্ত কাহিনি এ কাব্যে বর্ণিত হয় এবং সেই কাহিনির মধ্যে ধারাবাহিকতা থাকে।
• আখ্যানকাব্যের ভাষা হয় সহজসরল।
• এই কাব্যে ছন্দ ও অলংকারের ব্যবহার স্বল্প পরিমাণে থাকে।
• দেশজয়, প্রেম, রোমান্স, ঐতিহাসিক ঘটনা, বীরের কার্যকলাপ ও ধর্মানুভূতি ইত্যাদি বিষয়ে আখ্যানকাব্যগুলি রচিত হয়।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর