আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দের

আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা – আজকের পর্বে আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা আলোচনা করা হল।

আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব

আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব
আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা

আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার মানবজীবনে এনেছে যুগান্তকারী বিপ্লব। আগে সংবাদমাধ্যম ছিল খবরের কাগজ। বেতার ও দূরদর্শন আবিষ্কারের পরে সংবাদ মাধ্যমের নতুন যুগের সূচনা হল। এরপরে এল অত্যাধুনিক গণমাধ্যম ইন্টরনেট, কম্পিউটার আবিষ্কারের পরে। সারা পৃথিবীতে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে গিয়ে ইন্টরনেট সৃষ্টি করেছে বিস্ময়কর যোগসূত্র। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে থেকে তথ্য, বিনোদন, জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় মুহূর্তের মধ্যে জানা সম্ভব হচ্ছে। ইন্টারনেট হল এক বিস্ময়কর দান বিজ্ঞানের, ঠিক যেন আলাদিনের প্রদীপের মতো। যে কোন বিষয়ে জানতে হলে কম্পিউটারের মাধ্যমে চোখের সামনে তা কম্পিউটারের পর্দায় ভেসে উঠবে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে থেকেও। আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম।

ইন্টারনেট বলতে কি বুঝায়

ইন্টারনেট হল একধরনের উন্নত প্রযুক্তি যা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্যের আদানপ্রদানে সাহায্য করে। এই নেটওয়ার্ক ঠিক মাকড়সার জালের মতো সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে বলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েভ (world wide wave) সংক্ষেপে www বলা হয়। ইন্টারনেটের ঠিকানার পরিভাষার নাম ওয়েভ অ্যাড্রেস। কম্পিউটারে ঠিকানা লিখলে যে সাইট খুলে যায় পরিভাষায় তাকে বলা হয় ওয়েবসাইট।

আবিষ্কার

অধ্যাপক লিকলাইডার ছিলেন ম্যাসাচুসেট ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক। ১৯৬২ সালে তিনি ‘গ্যালাকটিক’ নেটওয়ার্কের কথা ভাবেন। তারপর এই বিষয়ে দশ বছর রিসার্চ করেন তিনি। ১৯৭২ সালে তাঁর আবিষ্কার ইন্টারনেটের প্রথম সূচনা হয় আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে। সাধারণ মানুষের মধ্যে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটতে আরও প্রায় আট বছর সময় লাগে। অধ্যাপক জে. সি. আর লিকলাইডার ম্যাসাচুসেট ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির থেকে ইস্তফা দিয়ে মার্কিন সামরিকবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ সংস্থা অপেরায় যোগ দেন কম্পিউটার প্রোগ্রামের প্রধান পদে, ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় খবর ইন্টারনেটের মাধ্যমে সম্প্রচার হলে তা খুব জনপ্রিয় হয় এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু হয় ইন্টারনেটের ব্যবহার।

ইন্টারনেটের প্রয়োগ

পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের কম্পিউটারে তথ্য, ছবি প্রভৃতি পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হিসাবে কাজ করে স্যাটেলাইট। হাইপার টেক্সট ট্রান্সফার প্রোটোকলের (H.T.T.P) কাজ হল স্যাটেলাইট মাধ্যমে তথ্য বিনিমময় করা। তথ্য কম্পিউটার সফটওয়ারে কম্পোজ করা হয় প্রথমে। এই সফ্টওয়ারের নাম ওয়েব ব্রাউজার। এর পরে কম্পিউটার পর্দায় টাইপ করতে হয় যে ঠিকানায় তথ্য পাঠানো হবে। ওয়েবসাইটে প্রত্যেকের নিজের ঠিকানা বা আই পি অ্যাড্রেস আছে। যে ঠিকানায় তথ্য প্রেরণ করা হয় তা প্রথমে পৌঁছায় মোডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগকারী মাস্টার কম্পিউটারের কাছে। সেখান থেকে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে যেখানে তথ্য পাঠানো হচ্ছে সেখানের সার্ভারের কাছে পৌঁছে যাবে এবং সার্ভার তার আই পি অ্যাড্রেস যাচাই করে সঠিক স্থানে পৌঁছে দেয়। এইভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে একস্থান থেকে অন্য যে কোন স্থানে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান হয়।

ইন্টারনেট বিস্ময়কর তথ্যপ্রযুক্তি

ইন্টারনেট এখন আধুনিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রযুক্তি। ইন্টারনেটের সাহায্যে চিঠিপত্রের আদান-প্রদান করা হয় ই-মেলের মাধ্যমে। ই-মেল দ্রুত যে কোন চিঠি পাঠাতে পারে এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে এই কাজটি সম্পাদিত হয়। ইন্টারনেটে বিভিন্ন বিষয়ের পৃথক সাইট আছে। ইন্টারনেটের থেকে যে কোন তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। প্রত্যেক সংবাদপত্রের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে এবং আমরা সহজে সেই খবর পেতে পারি। ই-মেলের সাহায্যে বায়োডাটা রেখে চাকুরি প্রাপ্তি সহজ হয়। ই-কর্মাস প্রোগ্রামের মাধ্যমে ঘরে বসে মাল কেনা-বেচা সম্ভব হয় বিশ্বের বাজারে। এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোন প্রিয় অনুষ্ঠান, পত্রমিতালি প্রভৃতিরও ব্যবস্থা আছে। ই-বুক-এর সাহায্যে পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে থেকে বইয়ের বিষয়ে বিশদ জানা যায়।

উপসংহার

সারা পৃথিবীতে ইন্টারনেটের বহুল প্রচলন হয়েছে। তবে আমাদের দেশে এই প্রযুক্তির ব্যবহার সেই তুলনায় কম। কারণ, এখানের মোট জনসংখ্যার বিশাল অংশ দারিদ্রসীমার নীচে থাকায় ব্যয়বহুল এই তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ নিতে পারছে না। এখন যোগাযোগের আধুনিক মাধ্যম হল টেলিফোন, মোবাইল, কম্পিউটার, মোডেম প্রভৃতি। টেলিফোন ও মোবাইলের ব্যবহার আশানুরূপ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া টেলিভিশনেরও ব্যবহার সন্তোষজনক। ইন্টারনেট-অপরাধ বেড়ে যাচ্ছে দেখে বিজ্ঞানমহল চিন্তায় পড়ে যাচ্ছেন। ইন্টারনেট ক্রাইম বা অপরাধীরা নানা গোপন তথ্য জেনে নিয়ে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। তবে একটি তথ্য থেকে জানা গেছে যে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

২০১৩ সালে জানুয়ারিতে যেখানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইল অনুসন্ধানকারীর সংখ্যা ছিল ৬৩ লক্ষ, সেখানে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সেই সংখ্যা হল দু’কোটি সাত লক্ষ। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ভোগ্যপণ্য কেনার জন্য অনলাইনে খোঁজখবর নেওয়ার হারও বেড়েছে ১১৩ শতাংশ। রেলের টিকিট অনলাইনে ২০১৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত কেটেছিল সাতচল্লিশ লক্ষ। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে তা ছিল এক কোটি ৩১ লক্ষ অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ১৮০ শতাংশ। ২০১৩ সালে বিবাহ সংক্রান্ত সাইটে আট লক্ষ মানুষ প্রেফাইল আপলোড করেছিল, ২০১৪ সালে জানুয়ারি পর্যন্ত তা বেড়ে হয়েছে কুড়ি লক্ষ। চাকুরি খোঁজার সংখ্যা ২০১৩ সালে জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ কোটি। তবে একাধিকবার একাধিক ওয়েব সাইটে খোঁজ খবর নেওয়ার জন্য এই পরিসংখ্যানের পরিমান বেশি। এই পরিসংখ্যান আমাদের দেশের।

আরও পড়ুন – ফ্রাঙ্কেনা-র দৃষ্টিতে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ ব্যাখ্যা করো

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

2 thoughts on “আধুনিক জীবনে ইন্টারনেটের গুরুত্ব প্রবন্ধ রচনা 600+ শব্দের”

Leave a Comment