যুক্তিবিজ্ঞানের প্রকৃতি – অবরোহ এবং আরোহ প্রশ্ন ও উত্তর (Marks 3) | XI 2nd Semester Philosophy WBCHSE
যুক্তিবিজ্ঞান বা তর্কবিজ্ঞান কাকে বলে? যুক্তিবিজ্ঞানকে আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান বলা হয় কেন?
যুক্তিবিজ্ঞান: যে শাস্ত্র অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও বিধি সম্পর্কে আলোচনা করে, তাকে যুক্তিবিজ্ঞান বলে।
যুক্তিবিজ্ঞান হল আদর্শনিষ্ঠ বিজ্ঞান: মানুষের জীবনের তিনটি পরম আদর্শ হল সত্য, শিব ও সুন্দর। এই তিনটিকে কেন্দ্র করে দর্শনের তিনটি শাখা গড়ে উঠেছে। দর্শনের অন্যতম শাখা যুক্তিবিদ্যায় চিন্তার আদর্শ অর্থাৎ সত্যতা, নীতিবিদ্যায় আচরণের আদর্শ যা শিব বা কল্যাণ এবং সৌন্দর্যবিদ্যায় বা নন্দনতত্ত্বে অনুভূতি বা রুচিবোধের আদর্শ সৌন্দর্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। এদের মধ্যে যুক্তিবিদ্যা সত্যতার আদর্শের মানদণ্ডের ভিত্তিতে তার বিষয়বস্তুর মূল্য নির্ধারণ করে এবং যুক্তিটি বৈধ না অবৈধ তা বিচার করে। তাই যুক্তিবিদ্যাকে আদর্শনিষ্ট বিজ্ঞান বলা হয়।
তর্কবিজ্ঞানের বা যুক্তিবিজ্ঞানের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী? যুক্তিবিদ কোপি যুক্তিবিজ্ঞানের কী সংজ্ঞা দিয়েছেন? যুক্তিবিজ্ঞান কী নিয়ে আলোচনা করে?
তর্কবিজ্ঞানের বুৎপত্তিগত অর্থ: তর্কবিজ্ঞানের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ‘Logic’। Logic কথাটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Logike’ থেকে। এই Logike শব্দটি আবার ল্যাটিন শব্দ ‘Logos’ -এর বিশেষণ। ‘Logos’ কথার অর্থ হল ‘চিন্তা’ বা ‘ভাষা’। প্রকৃতপক্ষে ভাষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের চিন্তাকে প্রকাশ করি। তাই Logic কথাটির অর্থ হল ভাষায় প্রকাশিত চিন্তাসম্বন্ধীয় বিজ্ঞান।
কোপির মতে যুক্তিবিজ্ঞান: আধুনিক যুক্তিবিজ্ঞানী আই এম কোপি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Introduction to Logic-এ যুক্তিবিদ্যার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- তর্কবিদ্যা হল সেই শাস্ত্র যা বৈধ বা যথার্থ (শুদ্ধ) যুক্তি থেকে অবৈধ বা অযথার্থ (অশুদ্ধ) যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি বা নিয়ম নিয়ে আলোচনা করে।
যুক্তিবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়: যুক্তিবিজ্ঞান প্রধানত এমন কতকগুলি সূত্র বা বিধি নিয়ে আলোচনা করে, যেগুলির দ্বারা বৈধ যুক্তিকে অবৈধ যুক্তি থেকে পৃথক করা যায়।
যুক্তিবিদ্যার জনক কাকে বলা হয় এবং কেন? যুক্তিবিজ্ঞানের নব্যযুগের সূচনার ধারক কাকে বলা হয় এবং কেন?
যুক্তিবিদ্যার জনক: গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টট্ল খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে যুক্তিবিজ্ঞান নামক দর্শনের একটি নতুন শাখার প্রবর্তন করেন। তাই অ্যারিস্টটলকে যুক্তিবিজ্ঞানের জনক (Father of Logic) বলা হয়।
যুক্তিবিজ্ঞানের নব্যযুগের সূচনার ধারক: আইরিশ যুক্তিবিদ জর্জ বুলকে যুক্তিবিজ্ঞানের নব্যযুগের সূচনার ধারক বলা হয়। কারণ তিনি মনে করেছিলেন অ্যারিস্টটলীয় যুক্তিবিজ্ঞানে কিছু অসংগতি আছে। সেই সমস্যার সমাধানের জন্য তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীতে নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল অস্তিত্বমূলক তাৎপর্য।
যুক্তিবিদ্যার বিষয়বস্তু বা আলোচ্য বিষয় কী? যুক্তিবিদ্যায় ‘চিন্তা শব্দটি কয়টি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা আলোচনা করো।
যুক্তিবিদ্যার বিষয়বস্তু: যুক্তিবিজ্ঞানের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল যুক্তি প্রয়োগ বা অনুমান (চিন্তা) করা। এ ছাড়াও যুক্তির প্রকাশ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় যেমন- বাক্য, বচন, বচনের আকার, পদ, চিন্তার প্রধান সূত্রগুলি ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় যথা যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করা হল যুক্তিবিজ্ঞানের প্রধান লক্ষ্য।
চিন্তা শব্দটির দুটি অর্থ: যুক্তিবিদ্যায় ‘চিন্তা’ শব্দটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যাপক অর্থে ‘চিন্তা’ বলতে বোঝায় অতীতের স্মৃতি, ভবিষ্যতের কল্পনা, সংবেদন, প্রত্যক্ষ, ধারণা ইত্যাদি আর সংকীর্ণ অর্থে ‘চিন্তা’ বলতে বোঝায় বিচার করা, তর্ক করা ইত্যাদি। যুক্তিবিজ্ঞানে ‘চিন্তা’ শব্দটি সংকীর্ণ অর্থেই গৃহীত হয়েছে।
যুক্তিবিজ্ঞানের কাজ ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো।
যুক্তিবিজ্ঞানের কাজ: যুক্তিবিদ্যার কাজগুলি হল নিম্নরূপ চিন্তার এই সকল মূলনীতিগুলিকে একত্রিত বা সুসংঘবদ্ধ করা এবং এর যথাযথ মূল্যায়ন করা। অবৈধ যুক্তি থেকে বৈধ যুক্তিকে পৃথক করার পদ্ধতি ও তার নিয়মগুলি নিয়ে আলোচনা করা।
যুক্তিবিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা: যুক্তিবিজ্ঞানীরা যুক্তিবিদ্যা পাঠের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলেছেন-
- যুক্তিবিজ্ঞান পাঠের ক্ষেত্রে আমরা যুক্তির বৈধতা নির্ণয় করি। আর ওই যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে নিজের বা অপর ব্যক্তির যুক্তি উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যদি কোনো অসংগতি দেখা দেয় তাহলে যথাযথ নীতিটি অনুসরণ করে চলতে পারি।
- যুক্তিবিজ্ঞানকে শুধুমাত্র তত্ত্বের দিক থেকে উপলব্ধি করা হয় তা নয়, এর একটি ব্যাবহারিক দিকও আছে। যেমন- যুক্তিবিজ্ঞান আমাদের শুধু বৈধ যুক্তির নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অবহিত করে না, এই নিয়মগুলিকে অনুশীলন করে তার প্রয়োগের শিক্ষাও দেয়। যাতে আমরা এই নিয়মগুলিকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োগ করতে পারি।
- আমরা অনুমানের ক্ষেত্রে সাধারণত যেসব দোষ করে থাকি, প্রচলিত যুক্তিবিজ্ঞানে সেইসব দোষের সঙ্গে আমাদের পরিচিতি ঘটে। ফলে সেইসকল দোষ থেকে আমরা অনেকাংশে মুক্ত হতে পারি।
অনুমান ও যুক্তি কাকে বলে? উদাহরণ-সহ আলোচনা করো।
অনুমান: অনুমান হল একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যার সাহায্যে এক বা একাধিক জ্ঞাত সত্যের ভিত্তিতে অজ্ঞাত সত্যকে জানা যায়।
যেমন- সকালে ঘুম থেকে উঠে বাইরে এসে দেখলাম মাটি ভিজে গেছে। তখন মনে মনে ভাবলাম নিশ্চয়ই গতকাল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল- এইরূপ মানসিক প্রক্রিয়াই হল অনুমান আর এই অনুমানের ব্যাবহারিক রূপই হল যুক্তি। অতএব, যুক্তির প্রাথমিক স্তরই হল অনুমান।
যুক্তি: সাধারণত ভাষায় প্রকাশিত অনুমানকে যুক্তি বলা হয়। কিন্তু যুক্তিবিজ্ঞানী কোপির মতে, যুক্তি হল এমন বচন সমষ্টি, যার অন্তর্ভুক্ত একটি বচনের সত্যতা অন্য একটি বচনের বা একাধিক বচনের সত্যতার উপর নির্ভর করে বলে দাবি করা হয়।
যুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
যুক্তির বৈশিষ্ট্য: যুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
- যুক্তি একাধিক বচন দ্বারা গঠিত হয়।
- যুক্তি হল বাক্যসমষ্টি কিন্তু যে-কোনো বাক্যসমষ্টি যুক্তি নয়।
- যুক্তির দুটি অংশ থাকে, যথা- যুক্তিবাক্য বা হেতুবাক্য এবং সিদ্ধান্ত।
- যুক্তি যে-সমস্ত বচন দ্বারা গঠিত হবে সেগুলি পরস্পরের বিরোধী হবে না।
- যে বচনগুলির দ্বারা যুক্তি গঠিত হয় তাদের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের সম্পর্ক থাকে।
- যুক্তি সর্বদা বৈধ বা অবৈধ হয়, সত্য বা মিথ্যা হয় না।
- যুক্তি গঠনের উদ্দেশ্য হল জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্য নির্ধারণ করা।
- প্রতিটি যুক্তির সিদ্ধান্তের সত্যতা তার আশ্রয়বাক্যের সত্যতার সমর্থনের উপর নির্ভরশীল।
অনুমান ও যুক্তির পার্থক্য লেখো। অনুমান ও যুক্তি কি সমার্থক? আলোচনা করো।
অনুমান ও যুক্তির পার্থক্য: অনুমান বলতে বোঝায় একপ্রকার মানসিক ক্রিয়াকে, যার দ্বারা জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হওয়া সম্ভব। অপরপক্ষে, যুক্তি হল ভাষায় প্রকাশিত অনুমান। যুক্তি এমন বচন সমষ্টি যেখানে একটি বচনের সত্যতা এক বা একাধিক বচনের সত্যতার উপর নির্ভর করে। যে বচনটির সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে বলা হয় সিদ্ধান্ত। আর যেসব বচনের সত্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে বলা হয় হেতুবাক্য।
সুতরাং বলা যায় অনুমান ও যুক্তির মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। অনুমান হল যৌক্তিক চিন্তন ও যুক্তি হল এই চিন্তনের প্রকাশিত রূপ। অনুমান হল একটি মানসিক প্রক্রিয়া, যুক্তি হল এই মানসিক প্রক্রিয়ার প্রকাশ।
অনুমান ও যুক্তি সমার্থক নয়: ‘যুক্তি’ কথাটি দুটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যথা- সংকীর্ণ অর্থ ও ব্যাপক অর্থ। সংকীর্ণ অর্থে অনুমান যখন ভাষায় প্রকাশিত হয় তখন তাকে বলে যুক্তি। কিন্তু ব্যাপক অর্থে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য যেসব যুক্তি বা যুক্তিবাক্যের সাহায্য নেওয়া হয় সেগুলিকেই হেতুবাক্য বলা হয়। অর্থাৎ ব্যাপক অর্থে যুক্তি ও অনুমান সমার্থক নয়।
অবরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
অবরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্য : অবরোহ যুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল-
গঠন: অবরোহ যুক্তি এক বা একাধিক হেতুবাক্য দ্বারা গঠিত হয়। তাই অবরোহ যুক্তি মাধ্যম ও অমাধ্যম দুই প্রকারের হয়।
সিদ্ধান্তের নিঃসরণ : অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়। অর্থাৎ হেতুবাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্ত মিথ্যা হতে পারে না। এই জাতীয় যুক্তিতে সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্যের দ্বারা প্রমাণিত হয়। তাই এরূপ হতে পারে না যে হেতুবাক্য সত্য, কিন্তু সিদ্ধান্ত মিথ্যা।
হেতুবাক্যের ব্যাপকতা: অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত কখনোই হেতুবাক্যকে অতিক্রম করে যেতে পারে না। অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্য থেকে কম ব্যাপক বা সমব্যাপক হবে, কিন্তু কখনোই বেশি ব্যাপক হবে না।
অবশ্য অবরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাপকতার দিক থেকে হেতুবাক্যের সমান ব্যাপক হতে পারে।
আকারগত সভ্যতা: এই যুক্তিতে কেবল আকারগত সত্যতার দিকে লক্ষ রাখা হয়। তাই অবরোহ যুক্তিবিজ্ঞান আকারনিষ্ঠ শাস্ত্র নামে পরিচিত। এই যুক্তির বস্তুগত সত্যতা থাকতেও পারে আবার নাও থাকতে পারে। হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের সত্যতা বৈধ অবরোহ যুক্তির হেতুবাক্য সত্য হলে সিদ্ধান্ত অবশ্যই সত্য হবে। এমন কোনো বৈধ অবরোহ যুক্তি পাওয়া যাবে না যার হেতুবাক্য সত্য, কিন্তু সিদ্ধান্ত মিথ্যা।
প্রসন্তি সম্বন্ধ: অবরোহ যুক্তিতে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ লক্ষ করা যায়। প্রসক্তি সম্বন্ধ হল সেই সম্বন্ধ যেখানে একটি বচন (সিদ্ধান্তবাক্য) অন্য এক বা একের বেশি বচনের (হেতুবাক্য) মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে নিহিত থাকে। হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে এমন সম্পর্ক থাকার ফলে সিদ্ধান্তটি হেতুবাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয়।
আবোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
আরোহ যুক্তির বৈশিষ্ট্য: আরোহ যুক্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ-
গঠন: আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্তটি সর্বদা একাধিক হেতুবাক্য বা আশ্রয়বাক্য থেকে গৃহীত হয়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতাপ্রসূত জ্ঞানের সাহায্যে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়।
ব্যাপকতা: আরোহ যুক্তির সিদ্ধান্ত সর্বদাই আশ্রয়বাক্যের তুলনায় অধিক ব্যাপক হয়। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত হেতুবাক্যকে অতিক্রম করে যায়। প্রসন্তি সম্বন্ধ: আরোহ যুক্তিতে আশ্রয়বাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে প্রসক্তি সম্বন্ধ নেই। সেইজন্য আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না।
সামান্যীকরণ: আরোহ অনুমানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য হল সামান্যীকরণ। কার্যকারণ নিয়ম ও প্রকৃতির একরূপতা নীতির উপর ভিত্তি করে, বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে এই অনুমানে সামান্য সংশ্লেষক বচনকে সিদ্ধান্তরূপে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতা: আরোহ অনুমানে আশ্রয়বাক্য সত্য হলেও সিদ্ধান্ত কখনোই সুনিশ্চিত হয় না, সম্ভাবনামূলক হয়।
বস্তুগত সভ্যতা: আরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে আকারগত সত্যতার দিকে লক্ষ রাখা হয় না। এই যুক্তির উদ্দেশ্য হল বস্তুগত সত্যতা আবিষ্কারে সহায়তা করা। অর্থাৎ আরোহ যুক্তির ক্ষেত্রে কেবলমাত্র যুক্তিটির নিয়ম স্বীকার করা হয়েছে কিনা দেখা হয় না, যুক্তিটিতে কী বলা হয়েছে তার সঙ্গে বাস্তবের সংগতি আছে কিনা তাও দেখা হয়।।
অবরোহ ও আবোহ যুক্তির সাদৃশ্য বা মিলগুলি উল্লেখ করো।
অবরোহ যুক্তি ও আরোহ যুক্তির সাদৃশ্য: যে অনুমানে এক বা একাধিক হেতুবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্ত হেতুবাক্যের তুলনায় বেশি ব্যাপক হয় না, তাকে বলে অবরোহ যুক্তি।
অপরপক্ষে, যে অনুমানে একাধিক হেতুবাক্য থেকে সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয় কিন্তু অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় না বরং সিদ্ধান্ত হেতুবাক্যের তুলনায় বেশি ব্যাপক হয়, তাকে বলে আরোহ যুক্তি।
উক্ত আলোচনার ভিত্তিতে অবরোহ ও আরোহ যুক্তির কয়েকটি সাদৃশ্য বা মিল লক্ষ করা যায়-
হেতুবাক্যের সাক্ষ্য প্রমাণ: অবরোহ ও আরোহ উভয় যুক্তির ক্ষেত্রেই হেতুবাক্যের মধ্যে যে সাক্ষ্য প্রমাণ থাকে সেই প্রমাণের উপর নির্ভর করে হেতুবাক্য ও সিদ্ধান্তের মধ্যে সম্বন্ধ গড়ে ওঠে।
যুক্তির নির্দিষ্ট নিয়ম: অবরোহ ও আরোহ উভয় প্রকার যুক্তির নির্দিষ্ট নিয়ম বা বিধি আছে, সেই নিয়মের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করা হয়। উভয় প্রকার যুক্তিতে দাবি করা হয় যে, জ্ঞাত হেতুবাক্যে অজ্ঞাত রয়েছে অজ্ঞাত হেতুবাক্যাক সিদ্ধান্তরূপ প্রতিষ্ঠা: অবরোহ ও আরোহ এমন বিষয়কে সিদ্ধান্তরূপে গ্রহণ করা হবে।
সিদ্ধান্তের সভ্যতা: অবরোহ ও আরোহ উভয় প্রকার যুক্তির ক্ষেত্রে হেতুবাক্যগুলির সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তের সত্যতা দাবি করা হয় অর্থাৎ সিদ্ধান্তটি সবল না দুর্বল তা নির্ধারণ করা হয়।
যৌন্ত্রিক জ্ঞানদান: অবরোহ ও আরোহ উভয় প্রকার যুক্তির লক্ষ্য হল যৌক্তিক জ্ঞান দান করা।
যুক্তি প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি: অবরোহ ও আরোহ উভয়ই হল যুক্তি প্রতিষ্ঠার পদ্ধতিগত দিক।
অবরোহ ও আরোহ যুক্তিকে কি পরস্পরের পরিপূরক বলা যায়? আলোচনা করো।
আমরা জানি যে অবরোহ ও আরোহ যুক্তির মধ্যে নানা বিষয়ে পার্থক্য আছে। তবে এ কথা বলা আবশ্যক যে, এই উভয় যুক্তির মধ্যে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে যার জন্য একটিকে অপরটির পরিপূরক বলা হয়। হোয়েটলি (Whately), হ্যামিলটন (Hamilton) প্রমুখ যুক্তিবিদদের মতে অবরোহ যুক্তি, আরোহ যুক্তির তুলনায় বেশি মৌলিক, তবে মিল (Mill) প্রমুখ যুক্তিবিজ্ঞানীদের মতে আরোহ যুক্তি বেশি মৌলিক।
আবার অনেক যুক্তিবিদই আছেন যাদের মতে অবরোহ এবং আরোহ যুক্তির মধ্যে সূচনাগত দিক থেকে পার্থক্য থাকলেও নীতিগত দিক থেকে পার্থক্য নেই। আবার আরোহ যুক্তির দ্বারা লব্ধ সাধারণ নিয়মটিকে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যাচাই করার সময় অবরোহ যুক্তির প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ একে অপরের উপর নির্ভর করে।
আরও পড়ুন – শিক্ষামনোবিজ্ঞান প্রশ্ন ও উত্তর