জাতি ও জাতীয়তাবাদ প্রশ্ন ও উত্তর একাদশ শ্রেণি | XI 2nd Semester (Marks 2)
1. জনসমাজ সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি কী? জাতীয় জনসমাজের প্রকৃতি সম্পর্কে কী বলা যায়?
▶ জনসমাজ সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি হল ভূখণ্ড ও ভাষাগত ঐক্য।
▶ জাতীয় জনসমাজ হল ‘জনসমাজ’ ও ‘জাতি’র মধ্যবর্তী এক পর্যায়; যেখানে রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন, ভাষাগত ও ভাবগত ঐক্য প্রত্যক্ষ করা যায়।
2. “জাতির সৃষ্টি প্রসঙ্গে কী বলা যায়? “একটি জাতীয় জনসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সার্বভৌমিকতা ও স্বাধীনতা অর্জন করে জাতিতে পরিণত হয়”-উক্তিটি কার?
▶ জাতি হল একটি মনস্তাত্ত্বিক সত্তা, যা অতীতের ত্যাগ ও তিতিক্ষার মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে বহিঃশাসনমুক্ত স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
▶ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি হায়েসের।
3. জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
▶ জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে দুটি পার্থক্য হল-① ধারণাগত পার্থক্য: জাতি একটি ভাবগত ধারণামাত্র। এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক ঐক্যের চেতনা জাতি গঠনের নেপথ্যে সক্রিয় থাকে। অন্যদিকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্র হল একটি আইনগত ধারণা। রাষ্ট্রীয় বাস্তবতা নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। ② প্রকৃতিগত পার্থক্য: জাতির ভিত্তিতে রাষ্ট্রের শ্রেণিবিভাজন সম্ভব। কিন্তু জাতির নিজের ক্ষেত্রে এই বিভাজন সম্ভব নয়। কিন্তু রাষ্ট্র একজাতিভিত্তিক বা বহুজাতিভিত্তিক- উভয় প্রকারই হতে পারে। ভারত, চিন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশ বহুজাতিভিত্তিক। অন্যদিকে জাপান, হাঙ্গেরি, সুইডেন প্রভৃতি একজাতিভিত্তিক রাষ্ট্র।
4. “জাতীয় জনসমাজ হল অতীত ইতিহাসের অভিজ্ঞতা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি ফল”-উক্তিটি কার? “জাতীয় জনসমাজ হল ভাষা, সহিত্য, ধ্যানধারণা, আচার-আচরণ ও ঐতিহ্যের বন্ধনে সুদৃঢ়ভাবে আবদ্ধ এমন একটি ঐক্যবদ্ধ জনসমাজ, যা নিজেকে অনুরূপ বন্ধনে আবদ্ধ অন্যান্য জনসমাজ থেকে পৃথক বলে মনে করে”-উক্তিটি কার?
▶ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি কোকারের।
▶ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি লর্ড ব্রাইসের।
5. আলফ্রেড জিমার্নের মতে জাতি কী? গিলক্রিস্টের মতে জাতি কী?
▶ আলফ্রেড জিমার্নের মতে, যে জনসমাজের মানুষ নিজেদের একটি জাতিসত্তার অঙ্গীভূত বলে মনে করে, সেই জনসমাজই হল জাতি।
▶ গিলক্রিস্টের মতে, জাতি হল রাষ্ট্রাধীন সুগঠিত একটি জনসমাজ।
6. জাতীয় জনসমাজ গঠনের উপাদানগুলিকে প্রধানত ক-টি ভাগে ভাগ করা যায়? ইজরায়েল রাষ্ট্র কবে গঠিত হয়?
▶ জাতীয় জনসমাজ গঠনের উপাদানগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়।
▶ 1948 খ্রিস্টাব্দে ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হয়।
7. “কোনো জাতির রক্তের বিশুদ্ধতা নেই”-এ কথা কারা প্রমাণ করেছেন? “ভাষাই হল জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উপাদান”- উক্তিটি কার?
▶ “কোনো জাতির রক্তের বিশুদ্ধতা নেই”-আধুনিক নৃতত্ত্ববিদরা এ কথা প্রমাণ করেছেন।
▶ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি ফিক্টের।
৪. কে বলেছেন “ধর্মবিশ্বাসের পার্থক্য যেখানে প্রবল, সেখানে জাতিগত ঐক্য স্বল্পস্থায়ী হতে বাধ্য”? “জাতীয় জনসমাজ সম্পর্কে ধারণা হল মূলত ভাবগত”-উক্তিটি কার?
▶ অধ্যাপক গিলক্রিস্ট প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছেন।
▶ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রেনাঁর।
9. জাতীয় জনসমাজ কখন গড়ে ওঠে? জাতি কখন গড়ে ওঠে?
▶ জনসমাজের মধ্যে যখন রাজনৈতিক চেতনা জাগরিত হয়, তখন জাতীয় জনসমাজ গড়ে ওঠে।
▶ জাতীয় জনসমাজের মধ্যে যখন জাতীয়তাবোধের মাধ্যমে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন জাতি গড়ে ওঠে।
10. “কোনো জনসমাজকে তাদের জাতীয় সরকার ছাড়া অন্য কোনো জাতির সরকারের অধীনে থাকতে বাধ্য করা, আর যে পুরুষকে কোনো নারী ঘৃণা করে, তাকে বিয়ে করতে সেই নারীকে বাধ্য করা, একই ব্যাপার”-উক্তিটি কার? “ক্ষুদ্র রাষ্ট্রসমূহের স্বাধীনতা মিথ্যা কল্পনা মাত্র”-উক্তিটি কার?
▶ প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি বার্ট্রান্ড রাসেলের।
▶ প্রশ্নোদ্ভূত উক্তিটি ফ্রিডম্যানের।
11. বর্তমানে চিনে কতগুলি ছোটো-বড়ো জাতি বাস করে? নয়া উপনিবেশবাদ কী?
▶ বর্তমানে চিনে 56 টি ছোটো-বড়ো জাতি বাস করে।
▶ যখন কোনো বৃহৎ রাষ্ট্র কোনো ক্ষুদ্র রাষ্ট্রকে দখল না করেও তাকে অর্থনৈতিক শোষণ করে, তখন সেই ব্যবস্থাকে নয়া উপনিবেশবাদ বলা হয়।
12. জাতীয় জনসমাজ এবং জাতি-এই দুটি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ কী? ‘Nationality’ শব্দটির বাংলা অর্থ কী?
▶ জাতীয় জনসমাজ এবং জাতি-এই দুটি শব্দের ব্যুৎপত্তিগত হল একই পূর্বপুরুষ থেকে জাত জনসমষ্টি।
► ‘Nationality’ শব্দটির বাংলা অর্থ হল জাতীয় জনসমাজ।
13. ম্যাকেঞ্জির মতে জাতীয় জনসমাজ কী?
▶ ম্যাকেঞ্জির মতে, একই সঙ্গে বসবাস না করলেও কিছু সংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে ঐতিহ্যগত ও ভাবগত ঐক্য বিদ্যমান থাকলে তাকে জাতীয় জনসমাজ বলে অভিহিত করা যায়।
14. জনসমাজ বলতে কী বোঝ?
▶ জনসমাজ হল একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী এমন একটি জনসমষ্টি, যার মধ্যে উদ্ভবগত, ভাষাগত, ধর্মগত, সাহিত্যগত, ইতিহাসগত, আচার-ব্যবহার এবং অধিকার ও অভিযোগগত ক্ষেত্রে ঐক্য পরিলক্ষিত হয়।
15. ইংরেজি ‘Nation’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ কী? ফরাসি দার্শনিক রেনাঁর মতে জাতি কী?
▶ ইংরেজি ‘Nation’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হল জাতি।
▶ ফরাসি দার্শনিক রেনাঁর মতে, কোনো গৌরবোজ্জ্বল বা দুঃখজনক অতীতের স্মৃতির বন্ধন এবং একই রাষ্ট্রে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছাই একটি জনসমাজকে জাতিতে পরিণত করে।
16. লর্ড ব্রাইসের মতে জাতি কী? হায়েসের মতে জাতি কী?
▶ লর্ড ব্রাইসের মতে, রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত বহিঃশাসন থেকে সর্বপ্রকারে মুক্ত অথবা মুক্তিকামী একটি নির্দিষ্ট জনসমাজকে জাতি বলে।
▶ হায়েসের মতে, একটি জাতীয় জনসমাজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে সার্বভৌমিকতা ও স্বাধীনতা অর্জন করে জাতিতে পরিণত হয়।
17. কোন্ কোন্ উপাদান জনসমাজকে জাতীয় জনসমাজে রূপান্তরিত করে? জার্মান দার্শনিক ফিক্টের মতে, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উপাদান কী?
▶ বাহ্যিক উপাদান ও ভাবগত উপাদান জনসমাজকে জাতীয় জনসমাজে রূপান্তরিত করে।
▶ জার্মান দার্শনিক ফিক্টের মতে, জাতীয় ঐক্য ও সংহতি সৃষ্টির অন্যতম প্রধান উপাদান হল ভাষা।
18. রামসে ম্যুর জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে কীসের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন? ‘Nationalism’ গ্রন্থটি পাঠ করে কোন্ ইংরেজ যুবকের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে?
▶ রামসে ম্যুর জাতীয় জনসমাজ গঠনের ক্ষেত্রে ভাষাগত ঐক্যের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
► ‘Nationalism’ গ্রন্থটি পাঠ করে ম্যাক্স প্লাউম্যান নামক এক ইংরেজ যুবকের জীবনে আমূল পরিবর্তন ঘটে।
19. জাতীয় জনসমাজ গঠনে বাহ্যিক উপাদান অপেক্ষা কোন্ উপাদান অধিক গুরুত্বপূর্ণ? ‘নেশন’ (Nation) শব্দটি কোন্ লাতিন শব্দ থেকে উদ্ভূত?
▶ জাতীয় জনসমাজ গঠনে বাহ্যিক উপাদান অপেক্ষা ভাবগত উপাদান অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
▶ ‘নেশন’ (Nation) শব্দটি লাতিন শব্দ ‘নেশিও’ (Natio) থেকে উদ্ভূত।
20. কোন্ আকাঙ্ক্ষা একটি জনসমাজকে জাতীয় জনসমাজে রূপান্তরিত করে? কোন্ রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটতে পারে?
▶ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা একটি জনসমাজকে জাতীয় জনসমাজে রূপান্তরিত করে।
▶ যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে জাতীয় গুণাবলির পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটতে পারে।
21. জাতীয় জনসমাজের দুটি প্রধান উপাদান উল্লেখ করো।
▶ জাতীয় জনসমাজের দুটি প্রধান উপাদান হল ভৌগোলিক একতা এবং বংশগত ঐক্য।
22. জনসমাজ কখন জাতিতে রূপান্তরিত হয়?
জনসমাজের মধ্যে এক গভীর স্বাতন্ত্র্যবোধ দেখা দিলে জাতীয় জনসমাজের উদ্ভব ঘটে। জাতীয় জনসমাজের মধ্যে সুগভীর রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হলে জাতীয় জনসমাজ জাতিতে রূপান্তরিত হয়।
23. একজাতিভিত্তিক রাষ্ট্র বলতে কী বোঝ? বহুজাতিভিত্তিক রাষ্ট্র বলতে তুমি কী বোঝ?
► একটি রাষ্ট্রের মধ্যে একটি জাতির অস্তিত্ব থাকলে তাকে একজাতিক রাষ্ট্র বলে।
► একটি রাষ্ট্রের মধ্যে একাধিক জাতির অস্তিত্ব থাকলে তা বহুজাতিভিত্তিক রাষ্ট্র নামে পরিচিত। যেমন-ভারত।
24. জাতীয় জনসমাজের দুটি বাহ্যিক উপাদান লেখো।
▶ জাতীয় জনসমাজের দুটি বাহ্যিক উপাদান হল-① বংশগত ঐক্য এবং② ভাষাগত ঐক্য।
25. জাতীয় জনসমাজ গঠনের ভাবগত উপাদানগুলি কী? উগ্র জাতীয়তাবাদ কীসের জন্ম দেয়?
▶ জাতীয় জনসমাজ গঠনের ভাবগত উপাদানগুলি হল অতীতের গৌরবময় স্মৃতিবিজড়িত ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
▶ উগ্র জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দেয়।
26. আধুনিক রাষ্ট্র প্রধানত কী ধরনের রাষ্ট্র? জাতি কাকে বলে?
▶ আধুনিক রাষ্ট্র প্রধানত বহুজাতিক রাষ্ট্র।
▶ জাতি বলতে বোঝায় রাষ্ট্রনৈতিকভাবে সংগঠিত এমন এক জনসমাজ, যা বহিঃশাসন থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত অথবা মুক্ত হওয়ার জন্য সচেষ্ট।
27. কার মতে, জাতি হল রাষ্ট্রাধীন সুগঠিত একটি জনসমষ্টি? জাতি ধারণাটি মনস্তাত্ত্বিক না রাজনৈতিক?
▶ গিলক্রিস্টের মতে জাতি হল রাষ্ট্রাধীন সুগঠিত একটি জনসমষ্টি।
▶ জাতি ধারণাটি মনস্তাত্ত্বিক।
28. জাতি কীসের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে? জাতি ও রাষ্ট্র কি সমার্থক?
▶ জাতি রাষ্ট্র গঠনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে।
▶ জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়।
29. জাতীয় জনসমাজের সঙ্গে দেশপ্রেম যুক্ত হলে কী হয়? রাজনৈতিক চেতনাবিহীন ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টিকে কী বলা হয়?
▶ জাতীয় জনসমাজের সঙ্গে দেশপ্রেম যুক্ত হলে জাতির জন্ম হয়।
▶ রাজনৈতিক চেতনাবিহীন ঐক্যবদ্ধ জনসমষ্টিকে জনসমাজ বলা হয়।
30. জাতীয় জনসমাজকে ‘রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জনসমাজ’ বলে কে উল্লেখ করেছেন? জাতীয় জনসমাজ গঠনে রাষ্ট্রনৈতিক ঐক্য কি একমাত্র উপাদান?
▶ জন স্টুয়ার্ট মিল জাতীয় জনসমাজকে ‘রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জনসমাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন।
▶ জাতীয় জনসমাজ গঠনে রাষ্ট্রনৈতিক ঐক্য একমাত্র উপাদান নয়।
31. জাতীয় জনসমাজ কখন জাতিতে উন্নীত হয়?
▶ জাতীয় জনসমাজের মধ্যে সুগভীর রাজনৈতিক চেতনার জন্ম হলে এবং নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র ও স্বাধীন একটি রাষ্ট্র গঠনের আকাঙ্ক্ষা গড়ে উঠলে জাতীয় জনসমাজ জাতিতে উন্নীত হয়।
32. রাষ্ট্রনৈতিক ঐক্য ছাড়াই জাতীয় জনসমাজ গঠিত হয়েছে এমন একটি জাতিগোষ্ঠীর উদাহরণ দাও।
▶ রাষ্ট্রনৈতিক ঐক্য ছাড়াই জাতীয় জনসমাজ গঠিত হয়েছে এমন একটি জাতিগোষ্ঠীর উদাহরণ হল ইহুদি গোষ্ঠী, যারা পরবর্তী সময়ে ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠন করে।
33. “আধুনিক রাষ্ট্রের ঐক্যের বুনিয়াদ বাহ্যিক নয়, তা সম্পূর্ণভাবে মানসিক”-এ কথা কে বলেছেন? ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয়ে গঠিত রাষ্ট্রের একটি উদাহরণ দাও।
▶ প্রশ্নোদ্ভূত কথাটি বলেছেন গেটেল।
▶ 1947 খ্রিস্টাব্দে অখণ্ড ভারতবর্ষ থেকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
34. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বংশগত ঐক্যের ভিত্তিতে কোন্ জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়? ভৌগোলিক একতা ছাড়াও জাতীয় জনসমাজ গঠিত হওয়ার একটি দৃষ্টান্ত দাও।
▶ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বংশগত ঐক্যের ভিত্তিতে জার্মান জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়।
▶ ইজরায়েল রাষ্ট্র গঠিত হওয়ার আগে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ইহুদি জাতির আত্মপ্রকাশ এই ঘটনার দৃষ্টান্ত।
35. জাতীয় জনসমাজ কাকে বলে?
▶ যখন কোনো জনসমষ্টি তাদের বংশ, ভাষা, ধর্ম, রীতিনীতি, অর্থনৈতিক স্বার্থ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে নিজেদের এক বলে মনে করে এবং তারা নিজেদের দ্বারা গঠিত একই সরকারের অধীনে বসবাস করার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তখন সেই জনসমষ্টিকে বলে জাতীয় জনসমাজ বা Nationality।
36. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিরুদ্ধে দুটি যুক্তি দাও। অথবা, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিপক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
▶ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিপক্ষে দুটি যুক্তি হল-① আত্ম- নিয়ন্ত্রণের অধিকার অখণ্ডতার পরিপন্থী। ② উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী।
37. ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতির অর্থ কী?
▶ কোনো জাতীয় জনসমাজ যখন নিজের পৃথক সত্তা ও জাতীয় বৈশিষ্ট্য রক্ষার জন্য একটি নিজস্ব রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে নিজের রাজনৈতিক ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার দাবি জানায়, তখন তাকে ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতি বলা হয়।
38. জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারটি কবে থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়? 1918 খ্রিস্টাব্দে কোন্ মার্কিন রাষ্ট্রপতি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বের সমর্থনে কংগ্রেসে জোরালো বক্তব্য দেন?
▶ 1772 খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ড দ্বিখন্ডিত হওয়ার সময় থেকে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
▶ মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন 1918 খ্রিস্টাব্দে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বের সমর্থনে জোরালো বক্তব্য দেন।
39. জন স্টুয়ার্ট মিল ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতির সমর্থনে কী বলেছেন?
▶ জন স্টুয়ার্ট মিল ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতির সমর্থনে বলেছেন, “জাতীয় জনসমাজের সীমারেখা রাষ্ট্রের সীমারেখার সমান হওয়া উচিত”।
40. উড্রো উইলসন ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতির সমর্থনে কী বলেছেন?
▶ ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতির সমর্থনে মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসনের বক্তব্য হল, “প্রতিটি জাতিকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রদান করলে যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণকে সমূলে উৎপাটিত করা সম্ভব”।
41. “জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার হল এমন এক অস্ত্র যার দু-দিকে ধার”-উক্তিটি কার? জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করেছেন এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করো।
▶ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি লর্ড কার্জনের।
▶ মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারকে সমর্থন করেছেন।
42. জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করো। ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতি মেনে নিলে ব্রিটেন ক-টি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়বে?
▶ লর্ড কার্জন জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন।
▶ ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতি মেনে নিলে ব্রিটেন চারটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
43. ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতি মেনে নিলে সুইটজারল্যান্ড ক-টি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়বে? ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ তত্ত্ব সম্পর্কে অ্যাক্টন কী বলেছেন?
▶ ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতি মেনে নিলে সুইটজারল্যান্ড তিনটি পৃথক রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে পড়বে।
▶ ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ তত্ত্ব সম্পর্কে অ্যাক্টন বলেছেন, “যে রাষ্ট্রে কেবল একটি জাতি বাস করে সেখানে সমাজ অনগ্রসর হতে বাধ্য”।
44. ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ প্রবন্ধটি কে, কবে রচনা করেন?
▶ 1308 বঙ্গাব্দে রবীন্দ্রনাথ ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতা’ নামক প্রবন্ধটি রচনা করেন।
45. জার্মান জাতি সম্পর্কে কী বলে হিটলার জার্মান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন? আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের মূল নীতি কী?
▶ ‘জার্মানরা খাঁটি আর্যরক্তসম্ভূত’-এই কথা বলে হিটলার জার্মান জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন।
‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’-ই হল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠার মৌলিক নীতি।
46. স্তালিনের মতে, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতির অর্থ কী? পোল্যান্ড কত খ্রিস্টাব্দে দ্বিখণ্ডিত হয়?
▶ স্তালিনের মতে, নিজের ভাগ্য নিরূপণ করার অধিকার শুধু নিজের হাতে থাকাই হল আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।
▶ 1772 খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ড দ্বিখণ্ডিত হয়।
47. কে, কবে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতির সমর্থনে কংগ্রেসে জোরালো বক্তব্য পেশ করেছিলেন?
▶ মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসন 1918 খ্রিস্টাব্দে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নীতির সমর্থনে কংগ্রেসে জোরালো বক্তব্য পেশ করেছিলেন।
48. ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ নীতির সপক্ষে জন স্টুয়ার্ট মিল কী বলেছিলেন? মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসন 1918 খ্রিস্টাব্দে কোন্ তত্ত্বের সমর্থনে জোরালো বক্তব্য রাখেন?
▶ ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ নীতির সপক্ষে জন স্টুয়ার্ট মিল বলেছিলেন বহুজাতিভিত্তিক রাষ্ট্রে স্বাধীন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান কখনোই গড়ে উঠতে পারে না।
▶ মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসন 1918 খ্রিস্টাব্দে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বের সমর্থনে জোরালো বক্তব্য রাখেন।
49. একজাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের একটি উদাহরণ দাও। ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্রে’র তত্ত্ব কোন্ সময় থেকে জনপ্রিয় হয়?
▶ একজাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের উদাহরণ হল ইজরায়েল।
▶ উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্রে’র তত্ত্ব জনপ্রিয় হয়।
50. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
▶ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি হল-① জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বিশ্বসভ্যতার বিকাশে সহায়ক, কারণ প্রতিটি জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র ও সরকার থাকলে জাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতি দ্রুত বিকশিত হয়। ② সংখ্যালঘু সমস্যার সমাধানে সহায়ক।
51. ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ মতবাদটির প্রবক্তা কে? ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতির উপর কোন্ তত্ত্বটি প্রতিষ্ঠিত?
▶ ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ মতবাদটির প্রবক্তা মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন।
▶ ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতির উপর জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত।
52. জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বটিকে জনপ্রিয় করেছেন এমন দু- জন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর নাম লেখো।
▶ জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বটিকে জনপ্রিয় করেছেন এমন দু-জন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হলেন জন স্টুয়ার্ট মিল এবং লেনিন।
53. ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতিকে ‘ইতিহাসের পশ্চাদ্গামী পদক্ষেপ’ কে বলেছেন? উদ্বাস্তু সমস্যার মূলে কোন্ তত্ত্ব দায়ী?
▶ ‘এক জাতি, এক রাষ্ট্র’ নীতিকে ‘ইতিহাসের পশ্চাদ্গামী পদক্ষেপ’ বলেছেন লর্ড অ্যাক্টন।
▶ উদ্দ্বাস্তু সমস্যার মূলে ‘জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার’ তত্ত্ব দায়ী।
54. জাতীয়তাবাদ কাকে বলে?
▶ যখন কোনো একটি জনসমাজের মধ্যে বংশ, ভাষা, ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি প্রভৃতির ভিতর থেকে একটি অথবা একের বেশি কারণে সংশ্লিষ্ট জনসমাজের মধ্যে প্রত্যেকে সুখ-দুঃখ, ন্যায়-অন্যায়, মান- মর্যাদা প্রভৃতির সমান অংশীদার বলে নিজেরা মেনে নেয় এবং তাদের এই জাতীয়তাবোধের সঙ্গে দেশপ্রেমের মিলন ঘটে তখন তাকে বলে জাতীয়তাবাদ।
55. হায়েস জাতীয়তাবাদের কী সংজ্ঞা দিয়েছেন?
▶ জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে হায়েস বলেছেন যে, জাতীয়তাবাদ বলতে এমন ব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে জনসমাজ ও দেশপ্রেমের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়।
56. জাতীয়তাবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
▶ জাতীয়তাবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য হল-① জাতীয়তাবাদের ভাবনা থেকেই উৎসারিত হয় মানুষের বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক কার্যকলাপ। ② জাতীয়তাবাদ এমন একটি মতাদর্শ, যার মধ্যে কেবল ‘জাতীয়-পরিচয়’-কেই সমাজ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত বলে মেনে নেওয়া হয়।
57. জাতীয়তাবাদের পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
▶ জাতীয়তাবাদের পক্ষে দুটি যুক্তি হল-① জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহু দেশে জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের আগমনের পথ প্রসারিত হয়েছে। ② কোনো দেশে জাতীয়তাবাদ শাসক ও জনগণের মধ্যে এক সুসম্পর্ক গড়ে তোলে। জনগণ জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত হলে সরকার তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন রকমের সাহায্য পেতে পারে।
58. জাতীয়তাবাদের দুটি ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো।
▶ জাতীয়তাবাদের দুটি ত্রুটি ছিল-① জাতীয়তাবাদের বিকৃত রূপ জাতির গতিশীল ভাবনাকে গতিহীন করে ফেলে। কারণ বিকৃত জাতীয়তাবাদের মধ্যে উদ্ভূত সংকীর্ণতা নিজের সবকিছুকে শ্রেষ্ঠ মনে করতে গিয়ে অন্য জাতির জ্ঞান-বিজ্ঞান, গুণাবলি, প্রতিভা সবকিছুকে গ্রহণ করতে চায় না।② জাতীয়তাবাদের উগ্র রূপ যুদ্ধকে ডেকে আনে। কারণ এই ধরনের জাতীয়তাবাদ অপর জাতিকে ঘৃণা করতে গিয়ে নিজের সভ্যতা, সংস্কৃতিকেও চাপিয়ে দিতে চায়। এর ফলে যুদ্ধের পথ প্রশস্ত হয়।
59. জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের মধ্যে সম্পর্ক কী?
▶ গোল্ডস্মিথ আন্তর্জাতিকতাকে এমন একটি অনুভূতি বলেছেন, যার মধ্য দিয়ে ব্যক্তি শুধু তার নিজস্ব রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবেই নিজেকে মনে করে না, একই সঙ্গে সে নিজেকে একজন বিশ্ব-রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবেও মনে করে। কোনো জাতি তার নিজস্ব সম্পদ হিসেবে সাম্য, মৈত্রী, স্বাধীনতাকে মনে করতে পারে না। এর কারণ তা বিশ্ব নাগরিকের সম্পদ। এই ভাবনা বিশ্ববাসীর মধ্যে প্রোথিত হলেই তাদের মধ্যে আন্তর্জাতিকতার সুমহান আদর্শ প্রকাশিত হতে পারে।
60. বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝ?
▶ যে জাতীয়তাবাদ আদর্শহীন এবং সংকীর্ণ স্বাদেশিকতায় পরিপূর্ণ তাকে বলে বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদ। এই জাতীয়তাবাদের লক্ষ্য হল বিভিন্ন জাতির মধ্যে ঘৃণা, হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা। বিকৃত বা উগ্র জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদী রূপ ধারণ করে যুদ্ধকে আহ্বান করে, বিশ্বশান্তি বিনষ্ট করে ও সভ্যতাকে হনন করে।
61. বিকৃত জাতীয়তাবাদ কেন আন্তর্জাতিকতাবাদের পরিপন্থী?
▶ বিকৃত জাতীয়তাবাদ থেকে উদ্ভূত জাত্যভিমান অপর জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করে। এর দ্বারা বিভিন্ন জাতির মধ্যে সৃষ্টি হয় ঘৃণা, ক্ষোভ, হিংসা, যুদ্ধ প্রভৃতি। বিকৃত প্রকাশের জন্য এই জাতীয়তাবাদ বিশ্বসংকট সৃষ্টি করে। সুতরাং বিকৃত জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিকতার পরিপন্থী।
62. জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার বলতে কী বোঝ?
▶ যখন কোনো জাতীয় জনসমাজ তার স্বতন্ত্র সত্তা এবং জাতিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ রক্ষার তাগিদে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করার দাবি জানায়, তখন তাকে বলে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। “এক জাতি এক রাষ্ট্র”-নীতির ওপর ভিত্তি করে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের তত্ত্বটি গড়ে উঠেছে। কোনো জাতি যখন মনে করে যে, তারা রাজনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তখন তাদের নিজের ভাষা, ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রভৃতির ক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য একটি পৃথক, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিই হল জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।
63. জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বটির প্রচার শুরু হয় কবে থেকে?
▶ জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার তত্ত্বটির প্রচার শুরু হয় 1772 খ্রিস্টাব্দে পোল্যান্ড বিভাজনের সময় থেকে।
64. জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি দাও।
▶ জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে দুটি যুক্তি হল- [1] জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে পারস্পরিক ঈর্ষা ও সংঘাত থাকে না। ফলে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রে জনগণ দেশকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতে পারে। [2] আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার স্বীকৃত হলে বিশ্ব থেকে যুদ্ধের সম্ভাবনাও কমে যাবে। উড্রো উইলসন বলেছেন যে, প্রতিটি জাতি যদি আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পায় তাহলে যুদ্ধের অন্যতম কারণটিরও অবসান ঘটবে।
65. তৃতীয় বিশ্ব বলতে কী বোঝ?
▶ ফ্রান্জ ফ্যানন বলেছেন যে, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার যেসব দেশ সাম্প্রতিককালে স্বাধীনতা পেয়েছে সেইসব দেশ পাশ্চাত্য অর্থাৎ আমেরিকান শিবির এবং সমাজতান্ত্রিক অর্থাৎ সোভিয়েত শিবিরের বাইরে সংগ্রামরত রয়েছে।
66. মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয়তাবাদকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী?
▶ মার্কসীয় দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয়তাবাদকে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-① বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদ② প্রোলেতারীয় জাতীয়তাবাদ।
67. কেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয়তাবাদকে ‘সভ্যতার সংকট’ বলেছেন?
▶ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রগুলি জাতীয় গরিমাকে সামনে রেখে একের পর এক অন্যায় আচরণ যেমন সংঘটিত করে, অন্যদিকে তেমনই আইন- বিরুদ্ধ কাজের দ্বারা আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যায়নীতিকে অগ্রাহ্য করে। এইসব কারণে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয়তাবাদকে ‘সভ্যতার সংকট’ বলে উল্লেখ করেছেন।
68. জাতীয়তাবাদের নেতিবাচক দিকটি উল্লেখ করো।
▶ জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে জাতি-রাষ্ট্রের প্রসার সাধনের দিকটি জাতীয়তাবাদের একটি নেতিবাচক বা নঞর্থক দিক। কারণ জাতীয়তাবাদ যদি জাতি-রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে তাহলে তা সাম্রাজ্যবাদে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। দেশপ্রেম ও জাতি-রাষ্ট্র উভয় ধারণার সংমিশ্রণ মানবসমাজে সংকট ঘনীভূত করে।
69. জাতীয়তাবাদ বিসর্জন না দিয়েও কীভাবে আন্তর্জাতিকতার পরিবেশ গড়ে তোলা যায়?
▶ জাতীয়তাবাদকে বিসর্জন না দিয়েও আন্তর্জাতিকতার পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যদি প্রতিটি জাতি নিজেদের একটি যৌথ পরিবারের সদস্য বলে মনে করে তাহলে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ এবং দুর্বল বা শক্তিশালী রাষ্ট্র কেউই কারও কাছে শত্রু হিসেবে প্রতিপন্ন হয় না।
70. তৃতীয় বিশ্বের জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ধর্ম কীভাবে সংশ্লিষ্ট?
▶ তৃতীয় বিশ্বের জাতীয়তাবাদের দুর্বল প্রকৃতি সংগঠিত হয়েছে ধর্মকে কেন্দ্র করে। তৃতীয় বিশ্বের জাতীয়তাবাদে প্রাধান্য পেয়েছে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ। এখানে ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদ গড়ে ওঠেনি। ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের জন্যই সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ছিল দুর্বল প্রকৃতির। যেসব দেশে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, ইরাক, ইরান, সৌদি আরব ইত্যাদি।
71. জাতীয়তাবাদকে কেন অনেকে গণতন্ত্র বিরোধী বলে মনে করেন?
▶ জাতীয়তাবাদ বিকৃত হয়ে পড়লে গণতন্ত্রকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্রের সুমহান আদর্শ (সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা)-কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে দ্বিধাবোধ করে না। জাতীয়তাবাদের বিকৃত রূপ একদিকে যেমন জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে, অন্যদিকে তেমনই ন্যায়ের প্রত্যাশা থেকেও জনগণ বঞ্চিত হয়। সকল প্রকার সমালোচনার কণ্ঠ রোধ করা হয়। এই কারণে অনেকে জাতীয়তাবাদকে গণতন্ত্র বিরোধী বলেছেন।
72. কে বলেছেন, “জাতি মিশ্রণ হয় নাই য়ুরোপে এমন দেশ নাই”? ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা?
▶ “জাতি মিশ্রণ হয় নাই য়ুরোপে এমন দেশ নাই”-এ কথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন।
▶ ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা।
73. সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী বলেছেন? বিকৃত জাতীয়তাবাদকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী বলে ধিক্কার জানিয়েছেন?
▶ সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘সভ্যতার ভয়াবহ বিপদ’ বলে চিহ্নিত করেছেন।
▶ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিকৃত জাতীয়তাবাদকে ‘সভ্যতার সংকট’ বলে ধিক্কার জানিয়েছেন।
74. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কোন্ সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পশ্চিমি সভ্যতা সম্পর্কে কী বলেছেন?
▶ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1916-17 খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন।
▶ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পশ্চিমি সভ্যতাকে ‘দন্ডুর সভ্যতা’ বলে চিহ্নিত করেছেন।
75. ‘ন্যাশনালিজম-ইন-জাপান’ কার রচনা? ‘ন্যাশনালিজম-ইন-ইন্ডিয়া’ কার রচনা?
▶ ‘ন্যাশনালিজম-ইন-জাপান’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা।
▶ ‘ন্যাশনালিজম-ইন-ইন্ডিয়া’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা।
76. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন্ গ্রন্থটি ফরাসিতে অনুবাদ করা হয়? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পাঠ করে কোন্ ফরাসি মনীষী তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন?
▶ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ন্যাশনালিজম’ গ্রন্থটি ফরাসিতে অনুবাদ করা হয়।
▶ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পাঠ করে ফরাসি মনীষী রোমাঁ রোলাঁ তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন।
77. ন্যাশনালিজম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাষা বিজ্ঞানসম্মত ছিল না বলে কে মন্তব্য করেছেন?
▶ ন্যাশনালিজম সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি ও ভাষা বিজ্ঞানসম্মত ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন রবীন্দ্র গবেষক নেপাল মজুমদার।
78. ‘রবীন্দ্রনাথ’ নামক প্রবন্ধটির রচয়িতা কে? রবীন্দ্রনাথ কোন্ গ্রন্থে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নির্যাস তুলে ধরেছেন?
▶ ‘রবীন্দ্রনাথ’ নামক প্রবন্ধটির রচয়িতা জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য।
▶ রবীন্দ্রনাথ ‘ন্যাশনালিজম’ নামক একটি সংকলন গ্রন্থে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নির্যাস তুলে ধরেছেন।
79. “জাতীয়তাবাদ সভ্যতার সংকটস্বরূপ”-উক্তিটি কার? ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটির লেখক কে?
▶ “জাতীয়তাবাদ সভ্যতার সংকটস্বরূপ”-উক্তিটি রবীন্দ্রনাথের।
▶ ‘সভ্যতার সংকট’ প্রবন্ধটির লেখক হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৪০. বিকৃত জাতীয়তাবাদকে ‘মানবসভ্যতার সংকট’ কে বলেছেন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী ছিলেন?
▶ বিকৃত জাতীয়তাবাদকে ‘মানবসভ্যতার সংকট’ বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
▶ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিকতাবাদের বিরোধী ছিলেন না; তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রবক্তা।
81. রবীন্দ্রনাথকে অনুসরণ করে জাতীয়তাবাদের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
▶ রবীন্দ্রনাথের মত অনুযায়ী-① জাতীয়তাবাদ এমন এক ধরনের দুর্বুদ্ধি, যেখানে দেশের আত্মম্ভরিতা প্রকাশ পায়। ② রবীন্দ্রনাথ জাতীয়তাবাদ বিষয়টিকে বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে দেখতে চেয়েছিলেন, সেখানে সংকীর্ণতার কোনো স্থান ছিল না।
82. জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণায় কে নিজের জাতির মধ্যে সকল জাতির এবং সকল জাতির মধ্যে নিজের জাতির সত্য রূপটিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন? আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার কী?
▶ জাতীয়তাবাদ সম্পর্কিত ধারণায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজের জাতির মধ্যে সকল জাতির এবং সকল জাতির মধ্যে নিজের জাতির সত্য রূপটিকে তুলে ধরতে চেয়েছিলেন।
▶ অত্যাচারী জাতির বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে নিজের ভাগ্য নিরূপণ করার অধিকার শুধু নিজের হাতে রাখার দাবিই আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার।
83. সাধারণ ইতিহাস কীভাবে জাতিগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে?
▶ সাধারণ ইতিহাসের জাতিগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অতীতের গৌরবময় স্মৃতি নিয়ে যে ইতিহাস তৈরি হয় তা একটি জাতির ‘আত্মপরিচয়বোধ’ (Self-identity) গড়ে তুলতে সাহায্য করে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মিল-এর মতে, একটি জাতীয় ইতিহাস ও তার স্মৃতিসম্ভার জাতীয় চেতনা গঠনে কাজ করে।
আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর