ফ্রাঙ্কেনা-র দৃষ্টিতে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ ব্যাখ্যা করো

ফ্রাঙ্কেনা-র দৃষ্টিতে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ ব্যাখ্যা করো

ফ্রাঙ্কেনা-র দৃষ্টিতে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ ব্যাখ্যা করো

ফ্রাকেনার দৃষ্টিতে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ

ফ্রাকেনা (Frankena) তাঁর ‘Ethics‘ নামক গ্রন্থে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদকে নিঃশর্ত অনুজ্ঞার নিরিখে বিচার করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি কান্টের নীতি- কর্তব্যবাদের ক্ষেত্রে কয়েকটি অসংগতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এগুলি হল-

[1] কর্তব্যের দ্বন্দ্বে আবর্তিত কান্টের মতবাদ

কান্ট নীতি-কর্তব্যবাদের প্রবক্তারূপে গণ্য হলেও, তিনি তাঁর নিঃশর্ত অনুজ্ঞার ক্ষেত্রে একাধিক নীতির উল্লেখ করেছেন। আর কর্মনীতি যদি একাধিক হয়, তাহলে তাদের মধ্যে বিরোধ অবশ্যম্ভাবী। স্বাভাবিকভাবেই তাই দেখা যায় যে, কান্টের কর্মনীতিগুলির মধ্যে বিরোধের সম্ভাবনা থেকেই যায়। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা-যেমন একটি কর্মনীতিরূপে গণ্য, তেমনই আর্তকে সেবা করাও একটি কর্মনীতিরূপে গণ্য। কিন্তু অনেকসময় দেখা যায় যে, আর্তকে সাহায্য করতে গেলে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হয়, আবার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গেলে – আর্তকে সাহায্য করা বন্ধ করতে হয়। এরূপ ক্ষেত্রে তাই কর্মকর্তা-তাঁর ঠিক কোনটা করণীয় এরূপ এক দ্বন্দ্বের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। সুতরাং বলা যায় যে, কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ কর্তব্যের দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত নয়। এরূপ মতবাদটি তাই কর্তব্যের দ্বন্দ্বে আবর্তিত।

[2] উপযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে কান্টের মতবাদ

ফ্রাঙ্কেনা তাঁর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, কান্টের মতে, কোনো নিয়মকে নৈতিকরূপে গণ্য হতে গেলে তাকে সর্বজনীন ও সংগতিপূর্ণ হতে হয়। কিন্তু ফ্রাঙ্কেনা মনে করেন যে, কোনো নৈতিক নিয়মের ক্ষেত্রে সর্বজনীনতা ও সংগতিপূর্ণতাই যথেষ্ট নয়, তার জন্য প্রয়োজন হল কর্মকর্তার উপযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গি। কান্টের নিঃশর্ত অনুজ্ঞাটি তাই সর্বজনীন ও সংগতিপূর্ণরূপে গণ্য হলেও কর্ম-কর্তব্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে উপযোগিতার দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে তা যথেষ্ট নয়।

[3] সর্বক্ষেত্রে কান্টের মতবাদের প্রয়োগহীনতা

কান্ট তাঁর নীতি- কর্তব্যবাদে যে নিঃশর্ত অনুজ্ঞার মানদণ্ডের কথা বলেছেন, তার দ্বারা কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর্তব্য-কর্ম স্থির করা সম্ভব হলেও, সমস্ত ক্ষেত্রে তা স্থির করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় যে, কান্টের মতে, অপর ব্যক্তিকে সাহায্য করা কর্তব্যকর্ম, আর সাহায্য না-করাই হল কর্তব্যবিরোধী কর্ম। কিন্তু ফ্রাঁকেনা মনে করেন যে, এমন কোনো ব্যক্তি থাকতেই পারেন যার অপরের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। আর তাই যদি হয়, তাহলে কান্টের নিঃশর্ত অনুজ্ঞার দ্বারা কখনোই প্রমাণ করা যায় না যে, অপরকে সাহায্য করাই হল কর্তব্যকর্ম। সুতরাং বলা যায় যে, কান্টের নিয়ম বা নীতি-কর্তব্যবাদ সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্ত নয়।

[4] কর্মের ব্যাখ্যা হলেও কর্মনীতির ব্যাখ্যা অসম্ভব

সবশেষে উল্লেখ করা যায় যে, কান্ট আমাদের কর্মসমূহকে নিয়মভিত্তিক করে তার ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু ফ্রাঁকেনা দাবি করেন যে, কান্ট এবং তাঁর অনুগামীরা কর্মকে নিয়মভিত্তিকরূপে উল্লেখ করে, কর্মের ব্যাখ্যা দিতে সমর্থ হলেও, নৈতিক কর্মের বা কর্তব্যের কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, অন্ধকারে শিস্ দেওয়া এবং বাঁ-পায়ের জুতোর ফিতে আগে বাঁধা-এ দুটি বিষয় সার্বিকও হতে পারে আবার অসংগতিহীনও হতে পারে। কিন্তু তাই বলে এগুলি দ্বারা কোনো কর্তব্য নিয়ম স্থির করা যায় না।

আরও পড়ুন – কর্ম-কর্তব্যবাদের গ্রহণযোগ্যতা আলোচনা করো

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

1 thought on “ফ্রাঙ্কেনা-র দৃষ্টিতে কান্টের নীতি-কর্তব্যবাদ ব্যাখ্যা করো”

Leave a Comment