ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো

ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো

ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো
ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক আলোচনা করো

ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক

ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে যে পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে তা এখানে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা যেতে পারে।

[1] সুনিশ্চিত ও সুদৃঢ়করণ: অধ্যাপক বার্কারের মতে ন্যায় (Justice)-এর ধারণা হল স্বাধীনতা ও সাম্যের এক সমন্বয়। ন্যায় হল এমন একটি আদর্শ যা স্বাধীনতা ও সাম্যের ভিত্তিভূমি। স্বাধীনতা ও সাম্যের আদর্শ বাস্তবিক পক্ষে ন্যায়ের ধারণাকে স্বীকার করে এবং তাকে সুনিশ্চিত ও সুদৃঢ় করে।

[2] যথার্থ সাম্য ও স্বাধীনতার দ্বারা ন্যায় প্রতিষ্ঠা: স্বাধীনতার সুযোগসুবিধা ধনী-দরিদ্র, উচ্চ-নীচ নির্বিশেষে সমাজের সব মানুষের কাছে সমানভাবে বজায় থাকলে ন্যায় বজায় থাকবে। এই কারণে বলা হয়, ব্যক্তির ন্যায় প্রাপ্তিকে সুনিশ্চিত করতে হলে স্বাধীনতাকে সাম্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হতে হবে। বস্তুত সমাজে সব ব্যক্তির মধ্যে সমতা বজায় থাকলে স্বাধীনতা ভোগ করা সম্ভব। এই অনুকূল পরিবেশ ন্যায়কে প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে। এককথায় বলা যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের অস্তিত্ব বজায় থাকলে ন্যায়ের আদর্শ মূর্ত হয়ে ওঠে। বার্কারের মতে, সবার মধ্যে যথার্থ সাম্য ও স্বাধীনতা বজায় থাকলে তবেই সমাজে সবার জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়।

[3] ন্যায়ের উৎস হিসেবে সাম্য: ন্যায়ের প্রধান উৎস হল সাম্য। সাম্য বলতে এখানে সমস্তরকম বৈষম্যের অবসানকে বোঝায়। বস্তুত আইনের মাধ্যমে যখন সমাজের ধনী-নির্ধন নির্বিশেষে সবার মধ্যে সাম্যকে সুনিশ্চিত করা হয়, একমাত্র তখনই সবাই ন্যায়ের সুবিধা ভোগ করতে পারে। এজন্য সাম্যকে ন্যায়ের উৎস বলে অভিহিত করা হয়।

[4] সাম্যহীন ন্যায় অর্থহীন: যে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য রয়েছে, যেখানে ধনী ও দরিদ্রের জীবনযাপনের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান, সেখানে ন্যায় অর্থহীন। শ্রেণিভিভক্ত সমাজে ধনীরা প্রভূত ধনসম্পত্তির মালিকানা নিজেদের কুক্ষিগত করায় দরিদ্রশ্রেণি সব দিক থেকেই বঞ্চনার শিকার হয়। তাই এ কথা বলা হয় যে, সমাজে ব্যাপক অর্থনৈতিক অসাম্য থাকলে ন্যায়ের ধারণা অর্থহীন হয়ে ওঠে।

[5] ন্যায়ের সোপান হিসেবে স্বাধীনতা ও সাম্য: সাম্য ও স্বাধীনতার পথ বেয়ে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই সাম্য ও স্বাধীনতা ছাড়া সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা যায় না। জনগণের সাম্য ও স্বাধীনতা লঙ্ঘিত হলে ন্যায় থাকে না। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, সামাজিক ন্যায়ের পূর্ব শর্ত হল জনগণের স্বাধীনতা ও সাম্য।

মন্তব্য: পরিশেষে বলা যায়, ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্যের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই, এদের মধ্যে রয়েছে পারস্পরিক নিবিড় সম্পর্ক। সমাজে সমতা থাকলে স্বাধীনতাকে কার্যকর করা যায় এবং সমতা ও স্বাধীনতা থাকলে সমাজের সব মানুষের কাছে ন্যায়ের সুফল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়। তাই ন্যায়, স্বাধীনতা ও সাম্য পরস্পর একই সূত্রে গ্রথিত, এরা একে অপরের পরিপূরক।

আরও পড়ুন – রাজনৈতিক তত্ত্বের মূল ধারণাসমূহ ২ নম্বরের প্রশ্ন ও উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment