নিয়ম-কর্তব্যবাদের বিষয়টিকে সংক্ষেপে উল্লেখ করো
নিয়ম-কর্তব্যবাদ
নিয়ম বা নীতি-কর্তব্যবাদ অনুসারে দাবি করা হয় যে, আমাদের কর্তব্যের নৈতিকতার আদর্শগুলি এক বা একাধিক নিয়ম বা নীতি দ্বারা গঠিত। এই সমস্ত কর্ম-নিয়ম উদ্দেশ্যমুখী নাও হতে পারে, আবার সেগুলি প্রচলিত নিয়মনীতি থেকেও ভিন্ন হতে পারে। এগুলি প্রকাশিতরূপে থাকতে পারে, আবার অপ্রকাশিত তথা প্রচ্ছন্নভাবেও অবস্থান করতে পারে। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, আমাদের ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিত এবং যথোচিত ও অযথোচিত প্রভৃতি আদর্শগত ধারণাগুলি এক বা একাধিক নিয়মের ওপর নির্ভর করেই গড়ে ওঠে। বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের ঠিক করা উচিত তা এই সমস্ত নিয়মের দ্বারাই নির্ধারিত হয়।
নীতি-কর্তব্যবাদীদের মতে, এই সমস্ত নৈতিক নিয়ম বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ বিশেষ কর্মের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আরোহ পদ্ধতির মাধ্যমে পাওয়া কোনো নৈতিক নিয়ম নয়। এগুলি হল- মৌলিক নৈতিক নিয়ম যা আমাদের বিবেক থেকে নিঃসৃত। স্যামুয়েল ক্লার্ক, রিচার্ড প্রাইস, টমাস রিড, ডব্লিউ ডি রস, ইমানুয়েল কান্ট প্রমুখকে এরূপ মতবাদের সমর্থক বলা হয়।
বিরোধ ও ব্যতিক্রমের বৈশিষ্ট্যে নীতি-কর্তব্যবাদ
নিয়ম বা নীতি-কর্তব্যবাদীদের মূলকথা হল আমাদের একটি নির্দিষ্ট বিশেষ পরিস্থিতিতে ঠিক কি করা উচিত তা নির্ধারিত হয় কতকগুলি মৌলিক নিয়মনীতি দ্বারা। এই ধরনের মৌলিক নিয়মনীতিগুলি হল সত্য বলার নিয়ম, প্রতিজ্ঞা রক্ষা করার নিয়ম, চুক্তি বজায় রাখার নিয়ম ইত্যাদি। এই ধরনের নিয়ম বা নীতিগুলি মৌলিকরূপে গণ্য হলেও, এদের যে-কোনো ব্যতিক্রম থাকবে না এমন কখনোই সম্ভব নয়। অর্থাৎ এগুলির ব্যতিক্রম হতেই পারে। সে কারণেই বলা যায় যে, আমরা সবসময় সত্য কথা বলতে নাও পারি, যদিও জানি যে সত্য কথা বলাই হল উচিত কর্ম।
আবার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করা উচিত জেনেও, আমরা তা ভঙ্গ করতে পারি। অনুরূপভাবে চুক্তিভঙ্গের বিষয়টিও এসে যায়। যাইহোক না কেন, এ কথা ঠিক যে, নিয়ম বা নীতি কর্তব্যবাদে যে-সমস্ত নিয়ম বা নীতির উল্লেখ করা হয়, সেগুলি কখনোই নির্বিরোধ নয়, আবার অব্যতিক্রমও নয়। এই নিয়মগুলির মধ্যে তাই বিরোধ ও ব্যতিক্রম লক্ষ করা যায়। তা সত্ত্বেও বলা যায় যে, রূপ নীতিগুলিকে অনুসরণ করেই আমাদের কর্তব্য নির্ধারিত হয়।
বিরোধ থাকা সত্ত্বেও অসংঘাতের নীতিতে নৈতিক নিয়ম
অনেক নীতি-কর্তব্যবাদীই উল্লেখ করেন যে, কর্তব্যবাদের ক্ষেত্রে, পরিস্থিতির বিচারে যে-সমস্ত নীতিকে অনুসরণ করে আমাদের কর্তব্য স্থির করা হয়, সেগুলির মধ্যে বিরোধ ও ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। কিন্তু বিরোধ ও ব্যতিক্রম থাকার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, নীতিগুলি পারস্পরিকভাবে সংঘাতপূর্ণ। বিরোধ ও ব্যতিক্রম থাকা সত্ত্বেও নিয়মগুলির মধ্যে একপ্রকার মৌল সাযুজ্য লক্ষ করা যায়। এরূপ মৌল সাযুজ্যের জন্যই কোন্ পরিস্থিতিতে কোন্ নিয়মটিকে অনুসরণ করতে হবে, তা খুব সহজেই নির্ধারণ করা যায়।
আরও বলা যায় যে, নিয়মের ব্যতিক্রমগুলি মূল নিয়মের অঙ্গরূপেই অবস্থান করতে পারে। এরূপ ক্ষেত্রে মূল ও সার্বিক নৈতিক নিয়মগুলিকে পরিপূর্ণভাবে উল্লেখ করলে, ব্যতিক্রমগুলি আর কখনোই ব্যতিক্রমরূপে গণ্য হয় না। সেক্ষেত্রে সেগুলি সার্বিক নৈতিক নিয়ম হিসেবেই থেকে যায় এবং এগুলিকে অনুসরণ করে আমাদের কর্তব্য স্থির করা যায়। এই ধরনের অভিমত ব্যক্ত করেছেন নীতিবিজ্ঞানী রস (Ross)।
আরও পড়ুন – কর্ম-কর্তব্যবাদের গ্রহণযোগ্যতা আলোচনা করো