প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অবদান আলোচনা করো
ভূমিকা: উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গসাহিত্য ও বঙ্গসংস্কৃতির ক্ষেত্রে ত্রিমুখী ভূমিকা পালন করেন। তিনি একাধারে ছিলেন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক ও সম্পাদক। রবীন্দ্রনাথ আখ্যায়িত তাঁর ‘সব্যসাচী’ নাম তাই সার্থক। বাংলা গদ্যসাহিত্যের ধারায় বিদ্যাসাগরের সার্থক উত্তরসূরি ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র।
অবদান: বিষয়বৈচিত্র্যের নিরিখে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রবন্ধগুলিকে কয়েকটি শ্রেণিতে বিভাজিত করা যেতে পারে। ‘বিবিধ প্রবন্ধ’ গ্রন্থে সংকলিত তাঁর সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধগুলি হল-‘উত্তরচরিত’, ‘বিদ্যাপতি ও জয়দেব’, ‘শকুন্তলা, মিরন্দা এবং দেদিমোনা’ প্রভৃতি। এক্ষেত্রে তাঁর ‘বিবিধ সমালোচনা’ গ্রন্থটিও উল্লেখযোগ্য। বঙ্কিমের ইতিহাস, সমাজতত্ত্ব, অর্থনীতি বিষয়ক প্রবন্ধগুলি হল ‘বাঙ্গালির উৎপত্তি’, ‘বঙ্গে ব্রাহ্মণাধিকার’, ‘বঙ্গদেশের কৃষক’, ‘সাম্য’, ‘লোকশিক্ষা’ প্রভৃতি। ‘বিজ্ঞান রহস্য’ তাঁর উল্লেখযোগ্য একটি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ। বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্ম সম্পর্কিত ধারণা প্রকাশ পায় ‘ধর্মতত্ত্ব’, ‘কৃষ্ণচরিত্র’ ও ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা’ গ্রন্থের মধ্য দিয়ে। তাঁর ব্যঙ্গ ও রম্যরচনাগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ‘লোকরহস্য’, ‘কমলাকান্তের দপ্তর’ ও ‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’।
প্রাবন্ধিক বঙ্কিমচন্দ্র স্বয়ং একটি প্রতিষ্ঠান ও যুগের স্রষ্টা। বাংলা গদ্যকে গতিময়তা দান করে বাংলা গদ্যের একটা আদর্শ গড়েছিলেন তিনি। মার্জিত পরিহাস রসিকতার পথিকৃৎরূপে তাঁর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য। বাঙালি সমাজ, ধর্ম, বিজ্ঞানবোধকে তিনি নিজ কক্ষপথে চালিত করে বাঙালি চেতনাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। বাংলা সাহিত্যের একজন প্রয়োগনিপুণ শব্দশিল্পী তিনি।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর