বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কালীপ্রসন্ন সিংহের অবদান আলোচনা করো

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কালীপ্রসন্ন সিংহের অবদান আলোচনা করো

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কালীপ্রসন্ন সিংহের অবদান আলোচনা করো
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কালীপ্রসন্ন সিংহের অবদান আলোচনা করো

ভূমিকা: বাংলা গদ্যের ভাষারীতিতে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখনীতে। ‘আলালের ঘরের দুলাল’ গ্রন্থের চার বছর পর প্রকাশিত তাঁর ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ (প্রথম ভাগ-১৮৬২)। এই রচনা বাংলা সাহিত্যের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ‘বিদ্যোৎসাহিনী সভা’, ‘বিদ্যোৎসাহিনী পত্রিকা’, ‘বিদ্যোৎসাহিনী রঙ্গমঞ্চ’ এবং ‘সর্বতত্ত্ব প্রকাশিকা’ পত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও সম্পাদনা তাঁরই কীর্তি।

সাহিত্যকীর্তি: হুতোম প্যাঁচা ছদ্মনামধারী এই লেখকের সাহিত্যপ্রতিভা বহুধাবিভক্ত। তিনি যেমন ‘মহাভারত’, ‘গীতা’ অনুবাদ করেছেন তেমনই ‘মালতী মাধব’ নাটক ও ‘বাবু’ প্রহসন রচনার কৃতিত্বও তাঁরই। তবে তিনি সর্বাধিক বিখ্যাত হয়েছেন তাঁর ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-র জন্য।

নকশা জাতীয় রচনা: ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’-ই প্রথম চলিতভাষায় লেখা বাংলা গদ্য। ঊনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা ও শহরতলির ভণ্ডামি, উচ্ছৃঙ্খলতা, বুচিহীনতা ও সমসাময়িক উৎসব-অনুষ্ঠানের বিবরণ ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে এই গ্রন্থে উপস্থাপিত হয়েছে। কিন্তু কোনো গল্প বা আখ্যান নয়, বরং টুকরো টুকরো সমাজজীবনের ছবি এতে রয়েছে যা প্রকৃতপক্ষে স্কেচ বা নকশা জাতীয়।

হুতোমি ভাষারীতি: ‘আলালী রীতি’ যেমন প্যারীচাঁদের গদ্যরীতি ঠিক তেমনই ‘হুতোমি ভাষারীতি’ হল কালীপ্রসন্ন সিংহের গদ্যরীতি। অর্থাৎ কালীপ্রসন্ন সিংহ তাঁর ‘হুতোম প্যাঁচার নক্শা’ গ্রন্থে তৎকালীন কলকাতার হঠাৎ গজিয়ে ওঠা বাবু সম্প্রদায়ের কাহিনিবর্ণনায়, সেই সময়কার কথ্যভাষাকে যেভাবে সাহিত্যে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাই-ই ‘হুতোমি ভাষারীতি’ নামে অভিহিত হয়েছে।

বিষয়বস্তু: উক্ত গ্রন্থটি হাস্যরস ও ব্যঙ্গবিদ্রুপপূর্ণ সামাজিক নকশা জাতীয় রচনা। আলোচ্য রচনায় উনবিংশ শতাব্দীর কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কলঙ্কময় জীবনকাহিনি, নানান উৎসবের বর্ণনা, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের হুজুগ, যুব সম্প্রদায়ের ব্যভিচার ও যথেচ্ছাচারী জীবনযাপন কৌতুকের ভঙ্গিতে বিবৃত হয়েছে। এর পাশাপাশি এই গ্রন্থে অর্থকৌলীন্যে ফুলেফেঁপে ওঠা শহুরে সমাজ, গ্রামের ভেঙে পড়া জীবনযাত্রা ইত্যাদিও স্থান পেয়েছে।

লেখনশৈলী: কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-১৮৭০) ‘হুতোম প্যাঁচার নকশা’ আঁকতে গিয়ে একেবারে খালি চোখেই বাইরের জগৎ দেখেছেন। তাই তাঁর দৃষ্টিতে কোনো আদর্শবাদ ধরা পড়েনি। লোকসাধারণের সাধারণধর্মিতাই তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্য। পরবর্তীকালে বাংলা গদ্যসাহিত্য যে পথে যাত্রা করে সেখানে দাঁড়িয়ে কালীপ্রসন্ন ছিলেন ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’।

আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর

একাদশ শ্রেণির কলা বিভাগের যে কোনো প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন। কোনো উত্তর না পেলে আমাদের কমেন্ট বক্সে জানান।

Leave a Comment