বাংলা গদ্যের উন্মেষ পর্বটি সংক্ষেপে বিবৃত করো
ভূমিকা: আধুনিক যুগের অন্যতম সাহিত্যিক মাধ্যম হল গদ্য। বিশ্বসাহিত্যের সব ভাষাতেই দেখা যায় পদ্যের আগমন আগে এবং গদ্যের আগমন বেশ পরে। বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে পয়ার জাতীয় ছন্দের নমনীয়তার জন্যই গদ্যের প্রকাশ বিলম্বিত হয়। আধুনিক কাল ও তার বিচিত্র জটিল জীবনযাত্রার বাস্তবতা, যুক্তিবোধ বাংলা গদ্যের উদ্ভবকে ত্বরান্বিত করেছিল।
বাংলা গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন: বাংলা গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে ১৫৫৫ সালে লিখিত কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণের একটি পত্র উল্লেখযোগ্য। পরবর্তী পর্যায়ে অষ্টাদশ শতকে দোম আন্তোনিও রচিত ‘ব্রাহ্মণ রোমান-ক্যাথলিক সংবাদ’ ও মনো-এল-দা-আসুম্পসাঁও রচিত ‘কৃপার শাস্ত্রের অর্থভেদ’ রোমান হরফে লিসবন শহর থেকে মুদ্রিত হয়। ১৭৭৮ সালে হ্যালহেডের ‘আ গ্রামার অফ দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ’ গ্রন্থে বাংলা গদ্যের কিছু নমুনা থাকলেও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় বাংলা গদ্যের অনুশীলন শুরু হয় শ্রীরামপুর মিশন ও ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের আনুকূল্যে।
অনুবাদ সাহিত্যের সৃষ্টি ও তার প্রভাব: বাংলা গদ্যের উন্মেষ পর্বে শ্রীরামপুর ব্যাপটিস্ট মিশন ও শ্রীরামপুর প্রেসের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শ্রীরামপুর মিশন থেকে উইলিয়ম কেরি, জশুয়া মার্শম্যানের নেতৃত্বে বাংলা- সহ অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষায় বাইবেল অনূদিত ও প্রচারিত হতে থাকে। বাইবেলের অনুবাদ ‘ধর্মপুস্তক’ নামে মুদ্রিত ও প্রচারিত হয়। এর পাশাপাশি ‘কৃত্তিবাসী রামায়ণ’ (১৮০১) ও ‘কাশীদাসী মহাভারত’ (১৮০২) মুদ্রিত হয়ে আপামর বাঙালি জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
বাংলা গদ্যের বিকাশ: ঔপনিবেশিক ভারতে লর্ড ওয়েলেসলি গভর্নর জেনারেল হয়ে আসেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কার্য নির্বাহ করার জন্য। ব্রিটিশ কর্মচারীদের দেশীয় ভাষার সঙ্গে পরিচিতি করানোর জন্য ১৮০০ সালে কলকাতার লালবাজারে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজেরই বাংলা বিভাগের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন উইলিয়ম কেরি। তিনি ও তাঁর তত্ত্বাবধানে বাংলার পন্ডিতবর্গের হাতে বাংলা গদ্য প্রাণ পায়। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের বাংলা বিভাগের সূত্রেই বাংলা গদ্যসাহিত্যের বিকাশ পর্ব শুরু হয়। তাই বাংলা গদ্যবিকাশের ক্ষেত্রে প্রথম গৌরব ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ ও তার লেখকগোষ্ঠীরই প্রাপ্য।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর