নবজাগরণে ব্রাহ্মসমাজের ভূমিকা আলোচনা করো
ব্রাহ্মসমাজ গঠন: বাংলায় নবজাগরণের উন্মেষ পর্বে ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলনের পটভূমিকায় ব্রাহ্মসমাজের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখযোগ্য। ব্রাহ্মনেতারা ধর্মাচরণের বাহ্যিক আড়ম্বরের পরিবর্তে ভারতীয় সনাতন ধর্মচেতনাকে বেদান্ত-উপনিষদের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতা ও গোঁড়ামি থেকে ভারতীয় সমাজকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। ব্রাহ্মধর্মীদের একেশ্বরবাদের প্রচার তৎকালীন সমাজকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। রাজা রামমোহন রায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এই ব্রাহ্মসমাজকে কেন্দ্র করেই ব্রাহ্মধর্ম গড়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে এর প্রাণপুরুষ ছিলেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনিই কেশবচন্দ্র সেনকে ব্রাহ্মসমাজের আচার্য নিযুক্ত করেন। ১৮৫৭ সালে কেশবচন্দ্র সেন ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করলে এই আন্দোলন আরও জোরালো হয়। তাঁকে ‘ব্রহ্মানন্দ’ উপাধি প্রদান করেন দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। কেশবচন্দ্র সমাজে প্রচলিত বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ ও পর্দাপ্রথার বিরোধিতা করেন এবং বিধবাবিবাহ ও অসবর্ণ বিবাহের প্রচলন ঘটান। ফলত, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ নিষিদ্ধ এবং অসবর্ণ বিবাহ আইনসিদ্ধ হয়। ১৮৬৬ সালের ১১ নভেম্বর কেশবচন্দ্র ও তাঁর অনুগামী দল ‘ভারতবর্ষীয় ব্রাহ্মসমাজ’ গঠন করেন আর দেবেন্দ্রনাথের অনুগামী দল ‘আদি ব্রাত্মসমাজ’ নামে পরিচিত হয়।
সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ: আদি ব্রাহ্মসমাজ ভেঙে প্রগতিশীল ব্রাহ্ম যুবকরা মিলে গঠন করে ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ‘। এই ‘সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ’ ধর্ম অপেক্ষা সমাজের উন্নতির দিকে বেশি জোর দিয়েছিল। সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্ত্রীশিক্ষা, রাজনৈতিক চেতনার বিস্তার ইত্যাদি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে ব্রাহ্মসমাজ। ব্রাহ্ম নেতাদের প্রচেষ্টায় প্রাচীন বৈদান্তিক ও ঔপনিষদিক ধর্মের নতুন মূল্যায়নে মধ্যযুগীয় ধর্মান্ধতা ও গোঁড়ামি থেকে মুক্তি ঘটে। তাঁদের একেশ্বরবাদের প্রচার সমাজকে সেসময় আলোড়িত করেছিল। পরবর্তীকালে স্বাধীনতা সংগ্রামেও বহু ব্রাহ্ম ব্যক্তিত্বকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
আরও পড়ুন – বই কেনা প্রবন্ধের প্রশ্ন উত্তর